নিত্যপণ্যের বাজারে ফের দেখা দিয়েছে সয়াবিন তেলের সংকট। গত ১ নভেম্বর সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারপরই বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের মূল্য না বাড়লেও কমে গেছে সরবরাহ। কিছু ক্ষেত্রে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী আবদুল গনি মিয়া বলেন, অর্ডার দিয়েও পরিমাণ মতো তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
ডিলাররা বলছে, কোম্পানি থেকে সাপ্লাই কম দেয়া হচ্ছে। আরেক খুচরা ব্যবসায়ী সোলাইমান হক বলেন, অগ্রিম টাকা দিয়েও কোম্পানির কাছ থেকে তেল মিলছে না। বাজারে ফ্রেশ ও তীর ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের কিছু তেলের সরবরাহ থাকলেও এক লিটারের বোতল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেল যা রয়েছে, তা দিয়ে আরও দুই-তিন দিন চলবে।
তেল কিনতে আসা জহিরুল হোক বলেন, তেল কিনতে এসে দেখি এক লিটারের কোনো বোতলই নেই, সবই পাঁচ লিটারের। সবার তো পাঁচ লিটারের বোতল কেনার সামর্থ্য থাকে না। কিছুদিন পরপর কোম্পানিগুলো সংকট তৈরি করে আর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টাউন হল বাজারের তীর কোম্পানির ডিলার সাইফুল হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে কোম্পানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। অর্ডার করেও আমরা তেল পাচ্ছি না। গত ৩ অক্টোবর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৭ টাকা কমানো হয়। বর্তমানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৮ টাকা লিটার এবং ৫ লিটার বোতলজাত তেলের দাম ৮৮০ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রুড তেলের দাম বৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ার কারণে গত ১ নভেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে সরকার সায় না দিলেও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কাল রোববার এ বিষয়ে বৈঠক হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে কাজ করছে ট্যারিফ কমিশন। তারা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর এলসির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার ট্যারিফ কমিশনে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। তেলের পাশাপাশি চিনির দামের বিষয়েও আলোচনা করা হয়।
এছাড়া এলসি খোলা সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা ট্যারিফ কমিশনকে অবহিত করেন। প্রস্তাবিত মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলে প্রতি লিটার বোতলজাত তেলের দাম ১৯৩, পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ৯৫৫ এবং খোলা সয়াবিন প্রতি লিটারের দাম হবে ১৭৩ টাকা।