আসন্ন রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ছুটির দিনেও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখতে হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বুধবার সকালে ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান বলেন, এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেনের কাছে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের সময়সূচি জারির পর থেকে মনোনয়নপত্র দাখিলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মনোনয়নপত্র দাখিল সম্পন্ন হলে বাছাই, বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল কর্তৃপক্ষের (বিভাগীয় কমিশনার, রংপুর বিভাগ ও আপিল কর্তৃপক্ষ) কাছে আপিল দায়ের ও আপিলকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আপিলগুলো নিষ্পত্তি করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত শেষ তারিখ অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর পার হওয়ার পরের দিন অর্থাৎ ৯ ডিসেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করতে হবে।
আতিয়ার রহমান বলেন, আগামী ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ করে তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনসহ প্রতিদিন ন্যূনপক্ষে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অফিস খোলা রাখতে হবে।
তিনি জানান, যথাসময়ে নির্বাচনের কাজ শেষ করার লক্ষ্যে সাপ্তাহিক বা সরকারি ছুটি ছাড়া অন্যান্য দিনে অফিস সময়ের পর দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রয়োজনে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনেও বিকাল ৪টার পর অফিসে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। একইসঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে অন্যান্য সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস-প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছুটির দিন ও অফিস সময়ের পর খোলা রেখে উল্লিখিত কাজে সহায়তা দেয়ার জন্যও অনুরোধ জানাতে হবে। তবে উল্লেখ্য যে, মনোনয়নপত্র গ্রহণ, আপিল দায়ের ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৮টার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
তফসিল অনুযায়ী, রসিক ভোটে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন ২৯ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ করা হবে ২৭ ডিসেম্বর। সকাল সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর এই সিটিতে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচিত কর্পোরেশনের প্রথম সভা হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। সে অনুযায়ী এ সিটির বর্তমান নির্বাচিতদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি।
ইউপি ভোট : বাইক, যানবাহন ও নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের দিন এবং ভোটের আগে ও পরে মোটরসাইকেল, যানবাহন ও নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির নির্বাচন শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান গতকাল বুধবার সকালে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৮ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) করা হবে। এ নির্বাচন উপলক্ষে মোটরসাইকেল, ট্রাক, পিকআপ, লঞ্চ, স্পিড বোট, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি। নির্বাচন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোটগ্রহণের আগের দিন ২৭ নভেম্বর দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ২৮ নভেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ, ইঞ্চিনচালিত সব ধরনের নৌযান এবং স্পিড বোট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৬ নভেম্বর দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ২৯ নভেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এছাড়া ২৭ নভেম্বর দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ২৮ নভেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত ট্রাক ও পিকআপ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
ইসির এক আদেশে বলা হয়েছে, সব ধরনের ইঞ্জিনচালিত নৌযানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে শুধু লঞ্চ ও স্পিড বোট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। বিশেষ করে ইঞ্জিনচালিত ক্ষুদ্র নৌযান বা জনগণ তথা ভোটারদের চলাচলের জন্য ব্যবহূত ক্ষুদ্র নৌযান নিষেধাজ্ঞা বহির্ভূত রাখতে হবে। রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনি এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে এসব বিষয় শিথিলযোগ্য। তাছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শকের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। এর বাইরেও জরুরি কাজে যেমন— অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
এছাড়া, জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবেন। ২৮ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউনিয়নগুলো হলো— চাঁদপুরের হাইমচরের চরভৈরবী, ফরিদগঞ্জের পাইকপাড়া দক্ষিণ, ভোলার চরফ্যাশনের আসলামপুর ও ওমরপুর ইউনিয়ন পরিষদ, কুমিল্লার সদর দক্ষিণের জোড়কানন পূর্ব, জোড়কানন পশ্চিম, বারপাড়া, চৌয়ারা ও বিজয়পুর এবং গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুরের বনগ্রাম, জামালপুর ও কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ।