- নেই সিগন্যাল-গেটম্যান
- ট্রেনচালক দেন হুইসেল
- লাইন ঘেঁষেই দোকান
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড রেললাইন দিয়ে অবাধে পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা। ট্রেন আসছে দেখেও ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছেন তারা। এ রেল ক্রসিংয়ে নেই কোনো সিগনাল বা গেটম্যান। ফলে অনিরাপদ এ কুড়িল রেলক্রসিং যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এতে দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। সিগনাল স্থাপন ও গেটম্যান ব্যবস্থার দাবি জনসাধারণের। সরেজমিন দেখা যায়, প্রগতি সরণি রোড ও বিমান বন্দর সড়কে আসা-যাওয়া যাত্রীদের এপার থেকে ওপারে যেতে হলে কুড়িল রেল ক্রসিংটি ব্যবহার করতে হয়।
তাই বাধ্য হয়েই এটি ব্যবহার করছেন পথচারীরা। কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মিত হওয়ার পর থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এটি। ট্রেন আসছে দেখেও কেউ পার হচ্ছেন, আবার কেউ রেল লাইন ধরে হাঁটছেন বা পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ট্রেন চালকদের বারবার হুইসেল দিতে দেখা গেছে। পাশাপাশি ধীরগতিতে চলতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে মৃত্যুকে সঙ্গী করেই হাজার হাজার পথচারী এ ক্রসিংটি ব্যবহার করছেন। সেখানে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
এছাড়াও পথচারীদের ভিড় থাকায় এ রেল ক্রসিংয়ের পূর্বদিকে বসেছে কাপড়ের দোকান ও চা-দোকানসহ ২০ থেকে ২৫টি দোকান। ফলে সেখানে একরকম ঝটলা লেগেই রয়েছে। এর পাশ দিয়েই চলে যাচ্ছে ট্রেনগুলো। কোনো ভুল বা অসাবধান হলেই ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। রাজধানীতে যতগুলো রেল ক্রসিং রয়েছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। এমনকি সেখানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা প্রকৌশল বিভাগের একটি অস্থায়ী স্টোররুম দেখা যায়। তবে তা তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। শুধু কুড়িল রেল ক্রসিং নয় গেণ্ডারিয়া ও তেঁজগাও এলাকার রেল ক্রসিংয়েও নেই কোনো গেট ও সংশ্লিষ্ট কেউই।
জানা যায়, রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ৩৪টি আন্তঃনগর, ১৪টি মেইল বা এক্সপ্রেস ট্রেন ও পাঁচটি কমিউটার ট্রেন চলাচল করছে। একই সংখ্যক ট্রেন আবার ঢাকায় ফিরে আসে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, এখানকার রেল লাইনটি কতটা ব্যস্ত। ঝুঁকিকে তোয়াক্কা না করেই পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা।
কুড়িল রেল ক্রসিংয়ের পশ্চিম পাশে রেল লাইন ঘেঁষে গড়ে উঠা চা-দোকানি সজল বলেন, আমার দোকান ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। মধ্য রাতে কম পারাপার থাকে। বাকি সময়টুকু পুরোই ব্যস্ত থাকে। কোনো গেট ম্যান বা সংশ্লিষ্ট এখানে রয়েছে কি-না তা তিনি জানেন না বা কাউকে চিনেন না।
তিনি আরও বলেন, দূরপাল্লাসহ সব ধরনের গাড়ি এখানে যাত্রী নামায়-উঠায়। আর এ ক্রসিং দিয়েই এপার থেকে ওপারে যেতে হয়। ট্রেন আসতে দেখেও কেউ কেউ এর সামনে দিয়েই দৌড় দেয়। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। একই কথা জানালেন পূর্বদিকে বসা দোকানিরা। তারা চাঁদা দিয়ে এখানে দোকান করছেন বলে জানান। তবে কেউ তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি নয়।
বাচ্চাদের কাপড় বিক্রেতা তৈমুর বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য পথচারী পারাপার হন। কি আর বলব বলেন, সারাদিন তো ৬০-৭০টি ট্রেন চলাচল করে। কেউই নিরাপত্তার কথা ভাবে না। তড়িঘড়ি করে পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা। এখানে বলার কেউ নেই, কর্তৃপক্ষের কেউ এখানে থাকে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কুড়িল রেল ক্রসিংয়ে কথা হয় মবিন মিয়ার সাথে।
তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমি ময়মনসিংহ থেকে এসেছি। এখানে নেমে রেল ক্রসিংটি পার হয়ে জগন্নাথপুরের মসজিদ রোড এলাকায় যাব। একটু সচেতন হয়েই পারাপার হওয়ার চেষ্টা করি। এখান দিয়ে হাজার হাজার পথচারী পার হচ্ছেন। তা ছাড়া ট্রেনগুলোও এখানে বেশি বেশি হুইসেল দিচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ যদি এখানে গেটম্যান ও গেট স্থাপন করে তাহলে সবার জন্যই ভালো হয়।
আরেক পথচারী সুমন তারিফ বলেন, আমি যমুনা ফিউচার পার্কে একটি দোকানে চাকরি করি। এখান দিয়ে প্রায় সময় পার হই। ঝুঁকি জেনেও পার হতে হয়। তবে সাবধানতা অবলম্বন করি। অনেক সময় এখানে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন খবরে দেখেছি। এ অনিরাপদ ক্রসিংটির ব্যপারে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তাহলে সবাই নিরাপদে পার হতে পারবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন) মো. হাসান মনসুর আমার সংবাদকে বলেন, কুড়িল রেলক্রসিংয়ে সিগন্যাল ও গেটম্যান আছে কি না, তা তিনি জানেন না। তবে এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানান। এছাড়াও বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের যুগ্ম মহাপরিচালক মো. মামুনুল ইসলামকে কয়েকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস আমার সংবাদকে বলেন, কুড়িল রেলক্রসিংয়ে কোনো সিগন্যাল, গেটম্যান আছে কি না আমি জানি না। আমি কিছুদিন হলো যোগদান করেছি। তবে কুড়িল রেলক্রসিংটি আমার অধীনে। রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুট পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। তাই সেখানে কোনো ধরনের দোকান বসতে পারবে না। পাশাপাশি রেললাইনের ওপর দিয়ে কেউ হাঁটতে পারবে না। জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে আমরা সর্বদা কাজ করছি। অসচেতনতার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।