সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে নিষিদ্ধ ওষুধ

নিজস্ব প্রতিবদেক প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২২, ১২:৩৭ এএম
সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে নিষিদ্ধ ওষুধ

সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে বিপুল টাকার নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর ওষুধ এ দেশে আসছে। মানবদেহের জন্য অতিমাত্রায় ক্ষতিকর উপাদন থাকায় ভারতে নিষিদ্ধ হওয়া ওষুধ চোরাকারবারিদের মাধ্যমে এ দেশে চলে আসছে। আর তা ভয়ঙ্কর মাদক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ওই ধরনের ওষুধ দেহে দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগ তৈরি করে। নিষিদ্ধ ওষুধ ঘিরে সীমান্ত এলাকাগুলোয় শতকোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য চলছে। বিজিবি, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং  সীমান্ত এলাকা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভারতে তৈরি ইস্কাফ সিরাপের মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয় কোডিন ফসফেট লিঙ্কটাস এবং ক্লোরফেনিরামিন। কোডিন ফসফেট লিঙ্কটাস মূলত হালকা থেকে মাঝারি ও গুরুতর ব্যথা উপশমের জন্য ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। উপাদানটিতে মরফিন এবং হাইড্রোকডোনের উপস্থিতি থাকায় দীর্ঘদিন সেবনে মাদকপ্রবণতা তৈরি শঙ্কা রয়েছে।

কোডিনযুক্ত ওষুধ সেবনের ফলে শ্বাসনালিতে প্রদাহ, হাড়ের পেশিতে ব্যথা, ফুসফুসে সংক্রমণসহ মানবদেহে বেশ কিছু সমস্যা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয়। ওই ওষুধের আরেকটি উপাদান ক্লোরফেনিরামিন একটি অ্যান্টিহিস্টামিন, যা শরীরের হিস্টামিনের ক্রিয়া বন্ধ করে কাজ করে। তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মাথা ঘোরা, বিভ্রান্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব, অস্থিরতা, শ্বাসকষ্ট এমনকি হ্যালুসিনেশনের মতো বিভ্রমও তৈরি হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোডিন ফসফেট লিঙ্কটাস এবং ক্লোরফেনিরামিন দিয়ে তৈরি করা ওষুধ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ওই ধরনের ওষুধ সেবনে এক ধরনের নির্ভরতা তৈরি হয়ে যায়। ফলে অনেকেই এ ওষুধ দীর্ঘমেয়াদি সেবন করে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে সেটি মাদক হিসেবেও ব্যবহার হয়। বর্তমানে ভারতে নিষিদ্ধ কোডিন ম্যালাইড এবং ম্যানকফ ডিএক্স সিরাপও বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে। তাছাড়া প্যাথেডিন, বুপ্রেনরফিন (টিডি জেসিক ইনজেকশন), কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মেন্টেড ওয়াশ (জাওয়া), বুপ্রেনরফিন, আইচ পিল, ভায়াগ্রা, সানাগ্রা, টলুইন, পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট ও মিথাইল-ইথাইল কিটোন পাচার হয়ে বাংলাদেশে আসছে।

এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তথ্যানুযায়ী চোরাকারবারিরা সীমান্ত এলাকা দিয়ে সবচেয়ে বেশি ইস্কাফ, এমকেডিল, কফিডিল, কোরেক্স, ফেন্সিডিল, এনেগ্রা ও সেনেগ্রার মতো উত্তেজক ওষুধ পাচারের চেষ্টা করে থাকে। তা ছাড়া বেশ কিছু ইনজেকশন অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে দেশের বাজারে সরবরাহের চেষ্টা করে থাকে। শুধু চলতি বছরের গত ১০ মাসে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে পাচারের সময় ৬৯ হাজার বোতল ইস্কাফ সিরাপ উদ্ধার করা হয়েছে।

ওই ধরনের নিষিদ্ধ ওষুধ সবচেয়ে বেশি রংপুর, দিনাজপুর, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও ফুলবাড়ী সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে পাচারের চেষ্টা হয়। এমনকি সীমান্ত এলাকায় বেশ কিছু ছোট কারখানা গড়ে উঠেছে। ওসব কারখানায় এমকেডিল নামে নতুন মাদক তৈরি হচ্ছে। পরে ডিলারের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাচার করা হয়। দেশের বাজারে ওসব ওষুধ এক হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে তিন হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়।

অন্যদিকে এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রির অধ্যাপক ড. আবদুল মজিদ জানান, ইস্কাফ সিরাপের মূল উপাদান কোডিন ফসফেট লিঙ্কটাস ও ক্লোরফেনিরামিন। তার মধ্যে কোডিনে মাদকের উপাদান থাকায় এটি বাংলাদেশে ব্যবহার নিষিদ্ধ। ওই ধরনের ওষুধগুলো মূলত ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহার হয়। তবে ওই ধরনের ওষুধ দীর্ঘদিন সেবনে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।