একটি বিশ্বকাপ জিতলেই কী কিংবদন্তি হওয়া যায়? একটি বিশ্বকাপ জিতলেই কী বিশ্বসেরা হওয়া যায়? যদি তাই হতো, তাহলে তো এতদিনে পেলে, ম্যারাডোনার নামই থাকত না। অনেক কিংবদন্তির ভিড়ে হয়তো হারিয়ে যেত তাদের নাম। কিন্তু তা তো হয়নি। লিওনেল মেসি যে একজন বিশ্বসেরা, এটিও মানতে নারাজ অনেকেই। কারণ তিনি বিশ্বকাপ জিততে পারেনি বলে তাকে অনেকেই বিশ্বসেরা মানতে পারতেন না।
তবে এখন তো বলাই যায়, কিংবদন্তি লিওনেল মেসি। ১৯৮৬ সালের পর মেসির হাত ধরেই ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল আর্জেন্টিনা। তবে জার্মানির কাছে সেবার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল আর্জেন্টিনার। এবার আর তা হয়নি। ফ্রান্সকে হারিয়ে ঠিকই কিংবদন্তিদের কাতারে বসলেন লিওনেল মেসি। ফুটবল যদি হয় জাদু তাহলে সেই জাদুর কাঠি হচ্ছে লিওনেল মেসি। এ জন্যই মেসিকে বলা হয় ফুটবল জাদুকর। কাতারে এসে যেন নিজের বয়স ভুলে গেছেন মেসি। ৩৫ বছরেও যে ধার হারাননি, সেটিই চোখে আঙুল দিয়ে প্রতিনিয়ত সবাইকে দেখিয়ে গেলেন তিনি।
এদিকে বিশ্বকাপে ১৩ গোল করে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকেও ছাড়িয়ে গেলেন লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপে এর আগেই আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে গেছেন তিনি। ফাইনাল ম্যাচে দুই গোল করে পেলের ১২ গোল ছাড়িয়ে গেলেন মেসি। ১৯৫৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ অভিষেক হয় পেলের। প্রথম বিশ্বকাপেই ছয় গোল করে চমকে দিয়েছিলেন ফুটবল বিশ্বকে। সেই বছরই বিশ্বকাপ জেতেন তিনি।
এর ঠিক চার বছর পরেও পেলে জেতেন বিশ্বকাপ। ১৯৭০ সালেও বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখেন পেলে। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচ খেলে করেন হাফ-ডজন গোল। এবার তাকেই ছাড়িয়ে গেলেন আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি। মাত্র ১২ বছর বয়সে বার্সেলোনার লা মাসিয়া অ্যাকাডেমিতে ক্ষুদে ফুটবল শিক্ষার্থী হিসেবে এসেছিলেন লিওনেল মেসি। পেশাদার ফুটবল জীবন শুরু করেন আরও ছয় বছর পর। তার পর থেকে চলছে তো চলছেই। দীর্ঘ ১৮ বছরের ফুটবল জীবনে বহু কোচের অধীনে খেলেছেন মেসি। বহু রেকর্ড করেছেন। কী নেই তার ঝুলিতে। একমাত্র বিশ্বকাপই ছিল না শুধু তার ঝুলিতে। কিন্তু কাতারে এবার সেই বিশ্বকাপও পুরে নিলেন নিজের ঝুলিতে। বার্সেলোনায় মেসির অভিষেক হয় ২০০৬ সালে। সে বছরই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। গোল করেছেন ও করিয়েছেন। সেই থেকেই শুরু। শেষ হলো বিশ্বকাপ জয় দিয়ে। বিশ্বকাপে হয়তো আর দেখা যাবে না মেসিকে, তবে খেলা তিনি এখনই ছাড়ছেন না।
দেশের জার্সিতে মেসির অভিষেক হয় হোসে পেকারম্যানের অধীনে। সেই বছর কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় হয় আর্জেন্টিনার। দু’বছর পর দিয়েগো ম্যারাডোনাকে কোচ হিসেবে পান মেসি। ম্যারাডোনা মেসিকে নিজের ছেলের মতোই দেখতেন। কিন্তু ফুটবল মাঠে সেই সাফল্য ধরা পড়েনি। দেশের জার্সিতে ৯ জন কোচের অধীনে খেলেছেন মেসি। তার মধ্যে আলেসান্দ্রো সাবেলার অধীনে ২০১৪-এর বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা ছাড়া আর বলার মতো সাফল্য নেই। এবার লিওনেল স্কালোনির অধীনেই বিশ্বকাপের শিরোপ জিতলেন মেসি।