- ঢাকার পরিকল্পনায় রোডম্যাপ তৈরি, স্থানীয় নেতাদের বার্তা
- আজ যুগপৎ আন্দোলনের যাত্রা ১৯ জেলায় কেন্দ্রীয় নেতারা
- মাঠ চাঙায় আটক নেতাদের স্থলে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব, কপাল খুলছে মোশাররফের
- ১০ দফাকে লিফলেট ২৭ দফাকে বুকলেট বানিয়ে প্রচারণা
- বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশে গ্রেপ্তার
- ৩০ তারিখ ঘিরে যৌথসভা, সমন্বয় সভা ও প্রস্তুতি সভা অব্যাহত
নব-উদ্যমে মাঠে নামছে বিএনপি। আজ থেকে শুরু হলো যুগপৎ আন্দোলনের যাত্র। ঢাকা ছাড়া সারা দেশে পালন হবে গণমিছিল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা নিয়ে কর্মসূচি সফলের লক্ষ্যে ১৯ জেলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা চলে গেছেন। জেলায় জেলায় দলীয় শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে জানানো হবে হাইকমান্ডের পরিকল্পনা। ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় কর্মসূচি বাস্তবায়নে উপস্থিতি নিশ্চিতে স্থানীয় নেতাদের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেয়া হবে।
পাশাপাশি ১০ দফা ও রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে প্রণীত ২৭ দফা রূপরেখা লিফলেট ও বুকলেট আকারে বিতরণ করবে হাইকমান্ড। এটির মাধ্যমে বিএনপির সংশ্লিষ্ট টিম যেমন দেশের প্রথম সারির নাগরিকদের নিয়ে কাজ করবেন তেমনি জেলায় উপজেলা নেতাদেরও কেন্দ্রের পরিপকল্পনা বাস্তাবায়নে নির্দেশনা দেয়া হবে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে। বার্তাবাহক হয়ে দলের স্থায়ি কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা ও যুগ্ম সম্পাদকরা তা পৌঁছে দেবেন। আর ঢাকায় বিএনপি সাবেক ও বর্তমান আমলা, সেনা কর্মকর্তা, দেশের বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের কাছে দাবি আদায়ের ১০ দফা ও রাষ্ট্র মেরামতে ২৭ দফা বিশেষ ভাবে পৌঁছে দেবেন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ ঢাকা ছাড়া সারা দেশে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে গণমিছিল কর্মসূচি থেকে লোক সমাগম উপস্থিতির মাধ্যমে সরকারকে জানান দেয়া হবে। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে মাঠে থাকার বার্তা পৌঁছে দেয়া হবে। সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে না। সরকার যদি আবারো জোর প্রয়োগ করে তাহলে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হবে। আজ সারা দেশ থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আগামী ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় বড় শোডাউন দেয়া হবে। গত ১০ তারিখ যেটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিএনপিকে হোঁচট খেতে হয়েছে সেটি আগামী ৩০ তারিখ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে ।
যুগপৎ কর্মসূচিতে আজ ১৯ জেলায় কেন্দ্রীয় নেতারা : অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে আজ ঢাকা ব্যতিত সকল জেলা ও মহানগরে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এই গণমিছিলে বিভাগীয় শহরসহ ১৯টি জেলায় দলের সিনিয়র নেতারা নেতৃত্ব দেবেন। তারা হলেন— চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় বিএপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, রাজশাহী মহানগর ও জেলায় গয়েশর চন্দ্র রায়, খুলনা মহানগর ও জেলা ড. আব্দুল মঈন খান, কুমিল্লা মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা নজরুল ইসলাম খান সদস্য, বরিশাল মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গাজীপুর মহানগর ও জেলা বেগম সেলিমা রহমান, ময়মনসিংহ মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, রংপুর মহানগর ও জেলায় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সিলেট মহানগর ও জেলা মোহাম্মদ শাহজাহান, কিশোরগঞ্জ জেলা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নোয়াখালী জেলা শামসুজ্জামান দুদু, সুনামগঞ্জ জেলা অ্যাড. আহমেদ আজম খান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা অ্যাড. জয়নুল আবেদীন, ফরিদপুর মহানগর ও জেলা নিতাই রায় চৌধুরী, বগুড়ায় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, দিনাজপুর মিজানুর রহমান, চাঁদপুর জেলা জয়নুল আবেদীন ফারুক, ভোলা জেলায় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. মুজিবুর রহমান সরোয়ার, যশোর অ্যাড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রাজবাড়ী হাবিব উন-নবী-খান সোহেল।
ঢাকা পরিকল্পনায় তৈরি হচ্ছে রোডম্যাপ : যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ঢাকায় ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলে বড় আকারের শোডাউন করতে চায় বিএনপি। এ বিষয়ে নানাবিধ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি প্রায় প্রতিদিনই যৌথসভা, সমন্বয় সভা ও প্রস্তুতি সভা করছে। একইভাবে দলটির প্রতিটি অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও পৃথকভাবে প্রস্তুতি সভা শুরু করেছেন। ঢাকায় গণমিছিলের জন্য সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। মিছিলের রুট নির্ধারণের পর দু-এক দিনের মধ্যে মিছিলের অনুমতির জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপিকে চিঠি দেয়া হবে। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ জানান, তারা ঢাকার গণমিছিল অনুষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। প্রত্যেক দায়িত্বশীল নেতাকে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে।
মাঠ চাঙায় আটক নেতাদের স্থলে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব, কপাল খুলছে মোশাররফের : ঢাকার আন্দোলনসহ সারা দেশে আন্দোলনের গতি ঠিক রাখতে আতক নেতাদের স্থলে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক-সদস্য সচিব যারা এখনো কারামুক্ত হননি; সেসব জায়গায় গঠনতন্ত্র মতে পরবর্তী নেতাদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালামের স্থলে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন নবীউল্লাহ নবী। গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি মহানগর ও জেলা পর্যায়ে নতুন নেতাদের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থলে খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে শোনা।
১০ দফাকে লিফলেট ২৭ দফাকে বুকলেট বানিয়ে প্রচারণা : ১০ দফাকে লিফলেট ও রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে ঘোষিত ২৭ দফাকে বুকলেট আকারে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া নিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে এই দুটি বিষয়ে লিফলেট ও বুকলেট ছাপানোর কাজ চলছে। যা ২৫ ডিসেম্বর থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিচারক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিরোধী মতসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সবার কাছে এসব বিতরণের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। বিএনপি প্রতিদিন এটি নিয়ে ঢাকার প্রতিটি সড়কে প্রচারণা চালাবে।
বিএনপি কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশে গ্রেপ্তার : বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর শনিবার গণমিছিল সফল করার লক্ষ্যে নোয়াখালী পৌরসভার ৮-৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রস্তুতিসভা চলাকালীন নোয়াখালী পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আবু নাছের, সাধারণ সম্পাদক জাফর উল্লাহ রাসেল, সিনিয়র সহসভাপতি ওমর ফারুক, যুগ্ম সম্পাদক জিএস জাকের হোসেন দুলাল, মোবারক হোসেন নাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি আবদুল হাই আরাম, যুব বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর, জেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক ভিপি ফজলে এলাহী পলাশ, সদস্য সচিব জিএস আবদুজ্জাহের হারুন, নোয়াখালী সদর উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মো. মমিনুল হক (কালা মিয়া), পৌর শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হান্নান। নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের ক্রীড়া সম্পাদক মো. আব্দুর রহিম বাবলু, ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, ৭ নং পৌর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. বেলাল হোসেন, ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আহসান উল্লাহ মিঠু, ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. সেলিম, ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. মজিবুল হক, নোয়াখালী পৌর যুবদল নেতা আরিফ ইকবাল আহবায়ক, নোয়াখালী পৌর ছাত্রদলে আহ্বায়ক মো. ওয়াসিম, পৌর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মো. হারুন, ৯ নং ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি তান্না, ৯ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম।
জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স আমার সংবাদকে বলেন, দেশের জনগণ তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে, বাকস্বাধীনতা ফিরে পেতে, ন্যায়বিচার পেতে, ফ্যাসিবাদ থেকে বাঁচতে প্রকাশ্য রাজপথে লড়াই করছে। কারণ গোটা জাতি জানে ওয়ান-ইলেভেন ছিল শেখ হাসিনা ও দেশি-বিদেশি চক্রান্তের একটি ফসল। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনদের সূক্ষ কারচুপির মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছিলেন। সে সরকার ছিল ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনদের এক্সটেনশন মাত্র। সে থেকে এখন পর্যন্ত জোর করে ও দাপট দেখিয়ে জোর প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি ১৫৪টি আসনে কোনো ভোট হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনাসহ ১৫৪ এমপি। বাকি আসনে শতকরা পাঁচ ভাগ ভোট পড়েনি। ভোটকেন্দ্রে চতুষ্পদ প্রাণীদের বিচরণ ছিল। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে ভোটকেন্দ্র দখল করে ব্যালটবাক্স পূর্ণ করে দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও নির্বাচন কর্মকর্তারা। দেশি-বিদেশিসহ আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায় সে সব নির্বাচনের খবর প্রকাশিত হয়েছে হেডলাইন হয়ে। দেশে তো নয়ই, বিশ্বের কোথাও সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি; বরং দাতা সংস্থাসহ বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা বলছেন, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশে আগের রাতের ভোটের কথা তারা শুনেননি।
তিনি আরো বলেন, নিপীড়ন নির্যাতন করে আর ক্ষমতা ধরে রাখা যাবে না। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে দেশ ও জনগণের শক্তির বলে, দেশের জনগণ আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়, গণতন্ত্র সুশাসন এবং জীবন জীবীকা রক্ষার জন্য। আসলে বিএনপির গণসম্পৃক্ত আন্দোলন, কর্মসূচি এবং সরকারের বিরুদ্ধে গণরোষে সরকারের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান এবং আওয়ামী লীগ কর্তৃক ভঙ্গুর রাষ্ট্রব্যবস্থা পুনর্গঠনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্রকাঠামো রূপরেখা ঘোষণার পর সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু
করে অন্যরা পাগলের প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন। ১০ দফা ও রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।