- আওয়ামী লীগের ২২তম কাউন্সিলে পুরোনো নেতৃত্বেই আস্থা
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি এবং ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে তাদের নির্বাচিত করা হয়। দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপমহাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন।
কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা কাউন্সিল স্থলে এলে দলের সিনিয়র নেতারা তাকে স্বাগত জানান।
এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম স্বাগত বক্তব্য রাখবেন। দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বডুয়া শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
উদ্বোধনকালে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পাশাপাশি সব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জাতীয় পতাকা এবং সাধারণ সম্পাদক দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। উদ্বোধনকালে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়ানো হয়।
এরপরপরই কাউন্সিলের থিম সং পরিবেশন করা হয়। এর আগে কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের শুভেচ্ছা জানান।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে প্রায় সাত হাজার কাউন্সিলর অংশ নিয়েছেন। উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে নামাজ ও মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য বিরতি দেয়া হয়। পরে কাউন্সিল অধিবেশন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়।
এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কাউন্সিলের জন্য ১১টি সাব-কমিটি কাজ করেছে। ঐতিহ্য অনুযায়ী দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সদস্য সচিব হন। এবারের মঞ্চ দেখতে অনেকটা পদ্মা সেতুর ওপর নৌকার আদলে করা হয়েছে। মূল মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট এবং প্রস্থ ৪৪ ফুট এবং উচ্চতা সাত ফুট।
এছাড়া কাউন্সিল স্থলে বেশ কয়েকটি এলইডি মনিটরও স্থাপন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে কোনো বিদেশি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানায়নি, তবে বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি দূতদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শেখ হাসিনা ৯ বার দলের সভাপতি ছিলেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চারবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু পাঁচবার, তাজউদ্দিন আহমেদ চারবার এবং জিল্লুর রহমান ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তিনবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী লীগের। এ পর্যন্ত দলটির ২১টি জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে দুদিনব্যাপী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পুনঃনির্বাচিত হন। ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে ও সুজিত রায় নন্দী সাংগঠনিক অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
আ.লীগের কমিটিতে আরও যারা স্থান পেয়েছেন : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, কাজী জাফর উল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারক খান এমপি, শাজাহান খান এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি, সিমিন হোসেন রিমি, এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি, দুই নম্বর মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, তিন নম্বর ডা. দীপু মনি এমপি, চার নম্বর আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। কোষাধ্যক্ষ পদে এইচ এন আশিকুর রহমান এমপি আবারও বহাল হয়েছেন।
সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছেন— অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা। আমিনুল ইসলাম সুজিত রায় নন্দীর স্থলাভিষিক্ত হন।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আবারও স্থান পেয়েছেন আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন সুজিত রায় নন্দী। সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে বাদ পড়েছেন সাখাওয়াত হোসেন শফিক। উপ-দপ্তর সম্পাদক হিসেবে সায়েম খান পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। সদস্যদের নির্বাচিত করতে প্রেসিডিয়াম সভায় নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।