চাষি আবু হাশেম ১৫ বছর ধরে বিনা পয়সায় দিচ্ছেন গুড় পাটালি ও রস

ইসলাম রকিব ও আব্দুল্লাহ হক, চুয়াডাঙ্গা প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২২, ০৪:২৪ এএম
চাষি আবু হাশেম ১৫ বছর ধরে বিনা পয়সায় দিচ্ছেন গুড় পাটালি ও রস

সখ থেকে নেশা, নেশা থেকে জনসেবা। এভাবেই ১৫ বছর ধরে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কুনিয়া গ্রামের খেজুরগাছ চাষি আবু হাশেম এলাকার জনগণকে খেজুরগুড়, পাটালি ও রসের স্বাদ বিলিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি প্রথমে শুনে অবাক মনে হলেও সরেজমিন দামুড়হুদার কুনিয়ায় গিয়ে বিষয়টির সত্যতা মেলে।

গ্রামের মধ্যবিত্ত চাষি জামাল উদ্দিনের অর্ধশিক্ষিত ছেলে আবু হাশেম লেখাপড়া ছেড়ে বাবার কৃষিকাজে সহযোগিতা শুরু করেন। বাবার স্বপ্ন ছিল আবু হাশেমকে লেখাপড়া শিখিয়ে সরকারি চাকরিতে ঢোকানো। কিন্তু লেখাপড়ায় মন না বসলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে বাবাকে সহযোগিতা করতে মাঠে নামেন তিনি। ধান, পাট, গম ও ভুট্টা চাষের সাথে সাথে তার নিজের পাঁচ বিঘা জমির চারপাশে গড়ে তোলেন খেজুর বাগান। এ বাগানে ৬০টির মতো খেজুরগাছ রয়েছে।

২০০৭ সাল থেকে আবু হাশেম খেজুরগাছগুলো যত্ন নেয়া শুরু করে এবং খেজুরগাছ কেটে রস বানিয়ে পাটালি ও গুড় তৈরি করতে থাকেন। বিষয়টি আবু হাশেম নিজের মুখে না বললেও তার প্রতিবেশীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

আব্দুল খালেক, রমিজ ও সমীর নামে তিনজন প্রতিবেশী বলেন, সহজ সরল আবু হাশেম মানুষকে ধোকা দিতে জানে না। নিজে পরিশ্রম করলেও সেই পারিশ্রমিকের পয়সা নেন না কারোর কাছ থেকে।

কেউ সেধে তার পারিশ্রমিক বা রসগুড়ের দাম দিতে গেলেও তিনি নিতে চান না; বরং তিনি বলেন, এই রস ও গুড় খেয়ে আমার জন্য আমার ছেলেদের জন্য ও মা-বাবার জন্য দোয়া করবেন।

এ বিষয়ে আবু হাশেমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি পয়সা ইনকামের জন্য খেজুরগাছ কাটি না। আমি মানুষের স্বাদ মেটানোর জন্য বা সেবা করার জন্য এই কাজ করে থাকি। আমার দুটি ছেলে আছে। আমার বাবার যে সম্পত্তি পেয়েছি সেই সম্পত্তি থেকে চাষাবাদ করে যা আয় করি তা দিয়েই তাদের লেখাপড়া করাই। আর খেজুরগাছ কাটি এলাকার মানুষের রস ও খেজুর গুড়ের স্বাদ মেটানোর জন্য। আমার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। আমি যতদিন বেঁচে আছি ও চলতে ফিরতে পারি— যেন এই সেবাটি করে যেতে পারি।’