- চরম ভোগান্তিতে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা
- দিনেও আগুন পোহাচ্ছেন নিম্নবিত্ত মানুষ
- বেড়েছে শীতের কাপড় কেনার পরিমাণ
কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবন। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেও বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যই জীবিকার টানে বাইরে বের হতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষকে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা।
গত দুইদিনে রাজধানীতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ফলে ফুটপাতে থাকা ছিন্নমূল মানুষসহ বস্তিবাসীরাও নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে বেড়েছে শীতের কাপড় কেনার পরিমাণ, জমে উঠেছে শীত বস্ত্রের ব্যবসা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আর কুয়াশার বিষয়ে বলা হয়, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারা দেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম এলাকা, জিপিও মোড়, সদরঘাট, কুড়িল বিশ্বরোড রেলক্রসিংসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাতে বসা দোকানগুলোতে ভিড় লেগেই রয়েছে। চাহিদামতো শীতের পোশাক পাওয়া যায় বলে ফুটপাত থেকে কাপড় কিনতে আসছেন নিম্ন-মধ্যবিত্তরা। হকাররা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরেই বেচা-কেনা অনেক বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, শীত বাড়ায় কাপড়ের দাম বেড়ে গেছে। তবে তাদের এ অভিযোগের সত্যতা মেলে। বিক্রেতারা বলছেন, শীতে ব্যবসা করার সুযোগ হয় মাত্র দুই-তিনদিন।
এদিকে হাইকোর্ট মাজার, স্টেডিয়াম এলাকা, কারওয়ান বাজার, মহাখালী বাসটার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শীতের তীব্রতা বাড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নবিত্তের মানুষ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ফুটপাতে থাকা ছিন্নমূল মানুষ। পাশাপাশি বস্তিতে বসবাসকারীরাও নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছেন বলে জানা যায়।
তেজতুরি বাজার এলাকা ও বসুন্ধরা এলাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করেন এমন কয়েকজন গৃহকর্মীর সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তাদের একজন রহিমা বেগম। তিনি তেজতুরি বাজার এলাকায় কয়েকটি মেসে কাজ করেন। তিনি বলেন, ফজরের পরই রান্না করতে যেতে হয়। তিনটি মেসে কাজ করতে ভোর সকালে বের হতে হয় তাকে। ঠাণ্ডা বেশি থাকায় হাত জমে যায়। জীবিকার টানে কাজে যেতে হয়। এছাড়া তিনি যে বস্তিতে থাকেন, সেখানেও থাকতে তার কষ্ট হচ্ছে। ফুটপাতে বসবাসকারীরাও একই কথা জানান।
মালিবাগ রেলগেটে বসে আগুন পোহাচ্ছেন কয়েকজন রিকশাচালক। তাদের একজন জলিল মিয়া। তিনি বলেন, আমার বাড়ি পঞ্চগড়ে, থাকি মিরাহাজিরবাগের একটি গ্যারেজে। অফিস সময়ে ভাড়া বেশি পাওয়া যায়, তাই ভোর সকালেই বের হন তিনি। সকাল বেলায় রিকশা চালালে হাত-পা জমে যায়। যেন রক্তশূন্যতা দেখা যায় বলে জানান। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় দুইদিন ধরে সারাদিনই বেশ ঠাণ্ডা থাকে। তাই রেলগেটে বসে লাকড়িতে আগুন পোহাচ্ছি। শীতে কাপড় কিনেননি কেন জানতে চাইলে বলেন, বাড়িতে শীতে বউ-বাচ্চা কষ্ট করছে, তাই এ সপ্তাহের আয় করা টাকা তাদের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। নিজের জন্য সুযোগমতো কিনবেন বলে জানান তিনি।