- নিম্নমানের কাগজের বই পেয়েছে মফস্বলের শিক্ষার্থীরা
- ঘটেছে গত বছরের ভুলের পুনরাবৃত্তি
রঙ কিছুটা ভিন্ন হলেও তা নিউজপ্রিন্ট নয়
—ডা. দীপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী
ভুল পেলে তিন দিনেই সংশোধন
—প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম এনসিটিবি চেয়ারম্যান
করোনার দুুবছর পর বই উৎসব হলেও বই পাওয়া থেকে শুরু করে সব ব্যাপারে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। শিক্ষার্থীদের বই না পাওয়া, কম বই প্রদানের পর এবার নিম্নমানের বই ও পাঠ্যপুস্তকে ভুলের অভিযোগ উঠেছে। শহরের তুলনায় গ্রামের শিক্ষার্থীদের বইয়ের কাগজের মানে দুর্বলতা বেশি পাওয়া গেছে।
এবার শ্রেণিভেদে শিক্ষার্থীরা দুই ধরনের বই হাতে পেয়েছে। এর মধ্যে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে নতুন বই হাতে পেয়েছে। আর অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে বই পেয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এবারের বইয়ের মান খুবই বাজে হয়েছে। এত হালকা কাগজের বইতো বেশিদিন টিকবে না।
এনসিটিবি বলছে, ভুল পেলে তিন দিনের মধ্যেই সংশোধন করা হবে। আগামীতে এসব বিষয়ে আরও যত্নবান থাকব। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এ বছর ছাপানো বইয়ের কাগজের মান খারাপ নয়, রঙ কিছুটা ভিন্ন হলেও তা নিউজপ্রিন্ট নয়।
নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ে উল্লেখ আছে, ২৬ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী নির্যাতন শুরু করে। কিন্তু ইতিহাসের সত্য হলো ২৫ মার্চ কালরাত থেকে গণহত্যা শুরু করে পাকবাহিনী। একই বইয়ের ২০০ পৃষ্ঠায় আছে, বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি সায়েম। সঠিক তথ্য হলো— প্রধান বিচারপতি নন, প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী।
একই বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের (পৃষ্ঠা-২৫) শুরুর দিকেই একাধিক জায়গায় ‘সময়কাল’ শব্দ উল্লেখ আছে। সময় ও কাল দুটি শব্দ, তবে একই অর্থ। তাই যে কোনো একটি ব্যবহূত হবে। একই পৃষ্ঠায় এক জায়গায় আছে ‘নদ-নদীগুলো’। ‘নদ-নদী’ শব্দটিই বহুবচন। আরেক জায়গায় ‘কোনো দেশের’ বদলে ‘কোন দেশের’ ছাপা হয়েছে। এ ছাড়া যতিচিহ্ন কোলনের ব্যবহার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক হয়নি। কোনো কোনো বইয়ে ‘পরিপ্রেক্ষিত’ শব্দের বদলে একই অর্থে ‘প্রেক্ষিত’ ছাপা হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে (পৃষ্ঠা-১) ‘ছিল না’র বদলে ছাপা হয়েছে ‘ছিলনা’।
এই বইয়েও কোলনের ব্যবহার বেশিরভাগই ভুল। বেশিরভাগ পাঠ্যবইয়েই হাইফেন, ড্যাশ ও কোলনের ব্যবহার যথাযথ হয়নি। যা গত বছরের বইতেও দেখা গেছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী এলাকার বেশ কয়েকজন অভিভাবক আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, এত নিম্নমানের কাগজের বই তো জীবনেও দেখিনি। আমার তো মনে হচ্ছে, এটা নিউজপ্রিন্ট দিয়ে তৈরি করছে। এই বই তো ছয় মাসও টিকবে বলে মনে হয় না। কিন্তু শহরের আত্মীয়দের সন্তানদের বই এত দুর্বল মানের হয়নি।
মতিঝিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবকের বই সেকেন্ডারি পাল্পের কাগজের ছিল। তাদের অভিযোগ, উজ্জ্বলতা কম ছিল। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, এবারের কাগজের মান গতবারের চেয়ে একটু দুর্বল মনে হচ্ছে। সবগুলো বই পেলে বছরের প্রথম থেকে সন্তানদের ভালোভাবে পড়া শুরু করা যেত। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এ বছর সেকেন্ডারি পাল্প ছাড়া কোনো পাল্প দেশে ছিল না। বিদেশ থেকেও কাগজ আনার সুযোগ ছিল না। আমাদের কাছে সেকেন্ডারি পাল্প ছিল, তা দিয়েই বই ছাপাতে হয়েছে। আর সেটাতে বইয়ের মান একেবারেই খুব খারাপ হওয়ার কথা নয়।
এ কাগজে উজ্জ্বলতা কিছুটা কম হয়েছে। ছাপানো কাগজ অনেক বেশি সাদা হলে তা চোখের জন্য তত ভালো নয়। আমাদের দেশে সবাই মনে করে বই যত বেশি সাদা হবে, তত বেশি ভালো— তা কিন্তু নয়। আমাদের বইয়ের কাগজের উজ্জ্বলতা কিছুটা কম হলেও তা নিউজপ্রিন্ট নয়।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, বইগুলোতে যে ভুলের কথা বলা হচ্ছে, সেটি মূলত ভুল কি না আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা বইয়ের বিশেষজ্ঞ লেখকদের কাছে বিষয়টি জানাব, তারা যদি এটাকে ভুল বলেন, তাহলে শিক্ষা অফিসারদের কাছে নোটিস পাঠাব। তারা সংশোধনী আকারে শিক্ষকদের কাছে নোটিস পাঠাবেন।
এ কাজ করতে আমাদের তিন দিনের বেশি সময় লাগবে না। আমরা চাই না, আমাদের কোমলমতি শিশুরা ভুল শিখুক। সব বই না পাওয়া আর কাগজ ও মুদ্রণ মান নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, মান খুব একটা খারাপ হয়নি। আগামী বছর এসব বিষয়ে আরও যত্নবান থাকব।