- এবারও গুচ্ছে আসন ফাঁকা থাকার শঙ্কা
- গতবারের মতো ভর্তিকার্যক্রমে দেরি হচ্ছে
- এবারের চেষ্টাকেও পরীক্ষামূলক, বলছেন উপাচার্যরা
ভর্তিকার্যক্রম আরও কম সময়ে শেষ করা যেত
—সৌমিত্র শেখর, ভিসি-জাককানইবি
করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা এক বছর পিছিয়ে থাকার পরও গুচ্ছ ভর্তি কমিটি সেই সময়টি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভর্তিপরীক্ষার পাঁচ মাস পার হলেও গুচ্ছভুক্ত (সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০২১-২২শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শতভাগ শেষ হয়নি। অথচ একই সেশনের জাতীয়, ঢাবি, রাবি, চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের ছয় থেকে দুই মাস আগেই ক্লাস শুরু হয়েছে। এ নিয়ে গুচ্ছভুক্ত ২৩ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
গতবারের মতো এবারও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন খালি থাকার শঙ্কা দেখা গেছে। উপাচার্যরা এবারের চেষ্টাকে পরীক্ষামূলক বলছেন। যদিও গতবারও একই কথা শোনা গেছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিপরীক্ষা শুরু হয়েছিল অক্টোবরের মাঝামাঝিতে। মার্চের পরও আসন খালি রেখেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্লাস শুরু করেছিল। এবারের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদেরও একই পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। গত বছরের ৩০ জুলাই বিজ্ঞান বিভাগ, ১৩ আগস্ট মানবিক বিভাগ এবং ২০ আগস্ট বাণিজ্য বিভাগের পরীক্ষা শেষ হলেও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশই এখনো ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিতে পারেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ক্লাস ৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। তারও আগে ৭ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস শুরু করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ১ নভেম্বর ক্লাস শুরু হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছের পর ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেও ১ ডিসেম্বর ক্লাস শুরু করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা রয়েছে ৩৫২টি। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ৩৪১টি, ‘বি’ ইউনিটে চারটি এবং ‘সি’ ইউনিটে সাতটি আসন ফাঁকা রয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা রয়েছে ৩৭৮টি। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ২৮৮টি, ‘বি’ ইউনিটে চারটি এবং ‘সি’ ইউনিটে দুটি আসন ফাঁকা রয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা রয়েছে ৫২৯টি, যার মধ্যে ‘এ ইউনিটে ৩৬১টি, ‘বি ইউনিটে ১১৪টি, এবং ‘সি ইউনিটে ৫৪টি আসন ফাঁকা রয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮টি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২০০টি এবং বশেমুরবিপ্রবিতে প্রায় ১৮৯টি আসন ফাঁকা রয়েছে।
নিজের হতাশার কথা তুলে ধরে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যান্ড ল ডিপার্টমেন্টের মাহমুদুল হাসান শিশির বলেন, গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে আগস্ট মাসে, কিন্তু জবির ক্লাস শুরু হওয়ার তারিখ ঘোষণা করল কয়েকদিন আগে। যেখানে ইতোমধ্যে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস শুরু করে দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছের পর পরীক্ষা নিয়েও ডিসেম্বর থেকে ক্লাস শুরু করে দিয়েছে, তাহলে গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পারে নাই কেন? আমাদের ক্লাস শুরু হতে হতে ঢাবির একটা সেমিস্টার শেষ হয়ে যাবে। আর এখানে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়লাম। আদৌ কি তাদের সাথে চলতে পারব? কারণ আমরা যে সময়টাতে অনার্স-মাস্টার্স নিয়ে ব্যস্ত থাকব তারা তখন চাকরির পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। গুচ্ছের অদূরদর্শী ও বাজে ব্যবস্থাপনায় আমরা পিছিয়ে পড়লাম।
গুচ্ছকে আন্তর্জাতিক সিস্টেম অনুসরণের কথা জানিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একই শিক্ষাবর্ষের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জেবা তাহসিন বলেন, দীর্ঘ ভর্তি প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। তবে গুচ্ছ পদ্ধতির বিষয়ে শুরুতে যেমন পরিকল্পনা ছিল তেমনটিই যদি প্রয়োগ করা যেত তাহলে এমনটি ঘটত না।
যদি আমেরিকার এসএটি এক্সামের মত কেন্দ্রীয়ভাবে একটি পরীক্ষা নিয়ে পাস নম্বর নির্ধারণ করে দেয়া হতো এবং পরবর্তীতে ওই নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের করা আবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি সম্পন্ন করত তবে প্রক্রিয়াটি দ্রুত শেষ হতো। আমাদের বর্তমান শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট স্মার্ট, তাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং, কার্যক্রম বিবেচনা করে নিজেরাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়টি তার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। তাদের প্রত্যেকেরই তো ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের প্রয়োজন হতো না।
ভর্তি হতে আসা জাতীয় কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাওহীদ এলাহী বলেন, করোনার কারণে শিক্ষা কার্যক্রমে কিছুটা স্থবির হয়ে যাওয়ায় আমাদের একবছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। গুচ্ছভর্তি কমিটি চাইলে এই সময়টা আরও কমিয়ে নিয়ে আসতে পারব। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছি এতেই আলহামদুলিল্লাহ। এখন আবার ক্লাস কবে শুরু হবে এই নিয়েও কিছুটা সংশয় রয়েছে। যেহেতু দীর্ঘদিন সময় নষ্ট হয়েছে তাই বিশ্ববিদ্যালয় তাড়াতাড়ি ক্লাস শুরু হলে আমাদের জন্য ভালো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপাচার্য আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, এবার গতবারের চেয়ে কম সময় লেগেছে। মাঝখানে রিট হওয়ায় আমরা ২০ দিনের মতো পিছিয়ে গিয়েছি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা। ২২ বিশ্ববিদ্যালয়কে একসুতোয় বাধা চ্যালেঞ্জিং। এখানে ২২ জনের নানান মতকে সমন্বয় করতে আমাদের সময় লেগেছে।
এবার আমরা পরীক্ষামূলক চেষ্টা করেছি। ইন্টারনাল অনেক কিছু থাকে তাই হয়তো এবার একটু বেশি সময় লাগছে। আগামীবার এতো সময় লাগবে না। আগামীবার আরও কম সময়ে শেষ করার আশা রাখি। শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, সাময়িক পিছিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলে কম সময়ে সেমিস্টার শেষ করতে পারে। এতে তারা পিছিয়ে থাকবে না।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বলেন, গুচ্ছ ভর্তিতে এত মাস সময় নেয়া ঠিক হয়নি। আয়োজক কমিটি চাইলেই আরও কম সময়ে এটা শেষ করা যেত। কেন ওনারা করতে পারেননি এটা আমি জানি না। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বয়ক জগন্নাথ ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের দুদিন ধরে বারবার কল দেয়ার পরও তারা রিসিভ করেননি।