মূল্যস্ফীতির চাপে নাভিশ্বাস

মহিউদ্দিন রাব্বানি প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩, ০৪:৪৪ পিএম
মূল্যস্ফীতির চাপে নাভিশ্বাস
  • বিদ্যুতের পর বাড়ছে গ্যাসের দাম
  • ফের বাড়তে পারে বিদ্যুতের দামও
  • ১৪ বছরে বেড়েছে ১০ বার
  • বিদ্যুতে গ্রাহকের ব্যয় বাড়ছে ১,৭১১ কোটি টাকা

নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী দামে দিশেহারা জনগণ। এরই মধ্যে বাড়ল বিদ্যুতের দাম। ফলে সব কিছুর দাম বাড়বে আরেক দফা। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। গত ১৪ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০ বার। বারবার জ্বালানির দাম বাড়ার ফলে নাগরিকের নাভিশ্বাস অবস্থা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে শিল্প-কারখানায় ও কৃষিজাত উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে। তারা বলেন, দুর্নীতি করতে, দরিদ্রকে আরও দরিদ্র বানাতে গণবিরোধী এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএফএম) সংস্কার পরামর্শের কারণে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়তে পারে। বিদ্যুৎসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

গত নভেম্বরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ২০ শতাংশ। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে না। কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে ভোক্তাপর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি। 

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ৫ শতাংশ। এরপরই বিভিন্ন মহলে চলছে নানা আলোচনা। সংশ্লিষ্টজনরা বলেন, নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হলে কেন বিইআরসি গণশুনানি করতে গেল! তারা সরাসরি দাম ঘোষণা দিলেই হতো। তারা এটিকে লোক দেখানো শুনানি বলছেন। 

এবারের দাম বৃদ্ধির পেছনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমদানি করা ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ব্যবহার বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়নকে কারণ হিসেবে তুলে ধরছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, আমরা এত খারাপ অবস্থায় আসলাম কেন? সবাইকে এটা বিবেচনা করতে হবে। 

আমরা খারাপ অবস্থায় আসলাম কারণ, নিজেদের আমরা আমদানি-নির্ভর করে ফেলছি। নিজেদের গ্যাস ঠিকমতো আহরণ করিনি। গ্যাস কোথায় বেশি আর কোথায় কম ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়গুলো ঠিক করা হয়নি। এখন অযাচিতভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। এখন সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। আরেক দফা মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়বে দেশ।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় বিশ্বজুড়ে। করোনার ধকল সেরে না উঠতেই বৈশ্বিক সংকট। পাশাপশি তীব্র জ্বালানি সংকটে বিপর্যস্ত সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাসের জোগান না দিয়েই দফায় দফায় বাড়ল জ্বালানির দাম। এবার দাম বাড়ল ৫ শতাংশ। আগামী দুই মাসে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়তে পারে। 

তবে সর্বশেষ ৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধির ফলে গ্রাহকদের ব্যয় বাড়বে প্রায় এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা। গত বছর জ্বালানি তেলে রেকর্ড দাম বাড়ে। গত বছর ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত লিটার প্রতি ডিজেলের দাম ছিল ৮০ টাকা। রাত ১২টার পর থেকে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ১১৪ টাকা হয়েছে। দাম বৃদ্ধির হার ৪২.৫ শতাংশ, প্রতি লিটার কেরোসিনের দাম ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১৪ টাকা। দাম বৃদ্ধির হার ৪২.৫ শতাংশ। অকটেনের দাম ছিল লিটার প্রতি ৮৯ টাকা, এই দাম বৃদ্ধি করে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৫ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির হার ৫১.৬৮ শতাংশ। পেট্রোলের দাম ছিল প্রতি লিটার ৮৬ টাকা, এই দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩০ টাকা। দাম বৃদ্ধির হার ৫১.১৬ শতাংশ। গড়ে ৪৭ শতাংশেরও বেশি দাম বাড়ানো হয়েছে। 

তার আগে গত বছর জুন মাসের ৫ তারিখ আবাসিক খাতের জ্বালানি ও শিল্প-কারখানায় সরবরাহ করা প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ২২ শতাংশের বেশি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ভোক্তাপর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ঘনমিটারে ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২২.৭৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১১.৯১ টাকা পুনঃনির্ধারণ করে দিয়েছে বিইআরসি। সে হিসাবে নতুন মূল্যহার অনুযায়ী এক চুলার গ্যাসের জন্য মাসে দিতে হবে ৯৯০ টাকা আর দুই চুলার জন্য দিতে হবে এক হাজার ৮০ টাকা। 

প্রিপেইড মিটারে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ টাকা, এটি আগে ছিল ১২.৬০ টাকা। আর সার কারখানায় সরবরাহ করা গ্যাসের জন্য প্রতি ঘনমিটারে দিতে হবে ১৬ টাকা। ডিসিসিআই বলছে, অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জ্বালানি সংকট। যেহেতু আমাদের প্রাথমিক জ্বালানির উৎস মূলত আমদানি নির্ভর। এবার খুচরাপর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে সার্বিকভাবে বেসরকারি খাতে এবং বিদ্যুৎ নির্ভর শিল্প-কারখানাসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হবে।