জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হচ্ছে কাল মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন শেষ হবে আগামী ২৬ জানুয়ারি। সম্মেলনকে সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার সচিবালয়ে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩` নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এ সময় তিনি এ তথ্য জানান।
করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে দুই বছর ডিসি সম্মেলন হয়নি। এরপর গত বছর ১৮-২০ জানুয়ারি ডিসি সম্মেলন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। তবে এবার সরাসরি উপস্থিত হয়ে ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে তিনি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।
এদিকে, গত বছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসক সম্মেলনের মূল ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনাসামনি মতবিনিময় ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এবারের সম্মেলন তিন দিনব্যাপী হচ্ছে। গত সম্মেলনও তিন দিনের ছিল। এবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং নির্দেশনা গ্রহণের পাশাপাশি স্পিকার ও বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের সৌজন্য সাক্ষাৎ, নির্দেশনা গ্রহণ ও মতবিনিময় করবেন। তা ছাড়া সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সামরিক-বেসামরিক সমন্বয় বিষয়ক অধিবেশন সংযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এবার সম্মেলনে মোট ২৬টি অধিবেশন হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্য অধিবেশন ২০টি। এ ছাড়া একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে একটি, স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে একটি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে দুটি অধিবেশন হবে।
মাহবুব হোসেন বলেন, সম্মেলনে মোট ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অংশ নেবে। কার্য অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন।
এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বছর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রস্তাব পাওয়া গেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সংক্রান্ত, এ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রস্তাব ২৩টি। এরপর ভূমি মন্ত্রণালয় (১৫টি প্রস্তাব) ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত (১৩টি), সুরক্ষা সেবা বিভাগ সংক্রান্ত (১১টি), গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত (১০টি) প্রস্তাব বেশি পাওয়া গেছে।
ডিসি সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলো তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদারকরণ; ভূমি ব্যবস্থাপনা; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন; ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দুর্যোগ দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স; শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণরোধ; ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়। এ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হবে।
জেলা প্রশাসক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হারের বিষয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, `২০২২ সালে বাস্তবায়ন হার ছিল ৭৩ শতাংশ।`
তিনি বলেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকেরা কী মেসেজ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে ফিরে যাবেন তা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারবেন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের প্রশাসনে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রমে নতুন গতির সঞ্চার হবে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে শেষ সম্মেলন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, `দেশে যত নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচনেই প্রশাসনের তরফ থেকে সেভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। নির্বাচনে সহযোগিতার জন্য আমাদের ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা আছে। সেই ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাব। আমরা নির্বাচনে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে যাবো।
ডিসি সম্মেলনের বাজেট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সেই তথ্য আমার কাছে নেই। তবে আপনারা নিশ্চিত থাকেন যে আমরা ব্যয় সংকোচন করব।