প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এখনো পায়নি সবগুলো বই। কাগজ স্বল্পতা ও বিদুৎবিভ্রাটসহ নানা কারণ দেখিয়ে এক মাস সময় নিয়েছিল এনসিটিবি। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও ২৫ জানুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সব আশা গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে অভিভাবকরা চাইলেই খোলাবাজার থেকে কিনতে পারছেন বই। প্রতি পিস মিলছে ৩০ থেকে ৭০ টাকায়। শিক্ষাবিদরা মনে করেন, সঠিক সময়ে বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে এনসিটিবি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে সবগুলো উপজেলায় বই পাঠিয়েছি। উপজেলা থেকে প্রধান শিক্ষকদের বই নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
রাজধানীর বাংলা বাজার এলাকায় সরেজমিন পর্যবেক্ষণে আমার সংবাদের প্রতিবেদক দেখেছেন, মাধ্যমিকের সব ক্লাসের পাঠ্যপুস্তক খোলাবাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দোকান মালিকদের বেশ সতর্ক থাকতে দেখা গেছে। বইগুলো থাকছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। তবে ক্রেতা হিসেবে মিলবে গ্যারান্টিসহ এনসিটিবির নতুন বই। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির প্রতি পিস বইয়ে দাম ৩০ টাকা। চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির প্রতি পিস দাম ৪০ থেকে ৮০ টাকা। ক্লাসভেদে সেট আকারেও দাম জানিয়েছেন দোকানিরা। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির প্রতি সেট বইয়ের দাম ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। অষ্টম ও নবম শ্রেণির ফুল সেট ৯০০ ও এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। বাংলা বাজার থেকে পাঠ্যপুস্তক ক্রয়ের পর অভিভাবক নিপি আক্তার জানিয়েছেন, আমার ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস পার হলেও সবে দুটি বই পেয়েছে। এভাবে স্কুলের আশায় আর কতদিন বসে থাকব? টাকা হলে দেশে সবই পাওয়া যায়। আরেক অভিভাবক খন্দকার ইফতেখার জানিয়েছেন, বাজারের পাঠ্যপুস্তক পাওয়া যাচ্ছে শুনেই কিনতে এসেছি। ষষ্ঠ শ্রেণির একসেট বই কিনেছি ৭০০ টাকায়। বই না পেয়ে আমার সন্তান পড়তে পারছে না।
সাভার ল্যাবরেটরি স্কুলের অভিভাবক আবির আহমেদ বলেন, আমার ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। নতুন শিক্ষাবর্ষের এক মাস পার হলেও সে সবে তিনটি বই পেয়েছে। খোলাবাজারে বই বিক্রির বিষয়ে আগে জানতাম। আরো কিছু দিন অপেক্ষা করি, না পেলে সেখান থেকেই নিতে হবে। এ ছাড়াও মতিঝিল বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান ১২টি বইয়ের মধ্যে আটটি পেয়েছে। গ্রামের দিকে বই প্রাপ্তির হার শহরের তুলনায় কম। এ ব্যাপারে নরসিংদীর রায়পুরা এলাকায় এক স্কুলশিক্ষক জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে তিন ধাপে বই এলেও সব শিক্ষার্থী সবগুলো বই পায়নি। কারো নামের পাশে চারটি, ছয়টি, তিনটি— এরকম করে লিখে রাখছি। সার্বিক বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর ফরহাদ হোসেন বলেছেন, চারটি প্রকাশনী ছাড়া বাকি সব প্রকাশনীর বই ইতোমধ্যে সবগুলো উপজেলায় পাঠিয়েছি। উপজেলা থেকে প্রধান শিক্ষকদের বইগুলো নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু অনেকেই এখনো বইগুলো নিতে পারেননি। ডিসেম্বরের কাজ ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। খোলাবাজারে বই বিক্রির ব্যাপারে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়ে রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশের লাইব্রেরি, বাংলাবাজার, নীলক্ষেত এলাকায় বইগুলো পাওয়ার অভিযোগ এসেছে। সাথে সাথে আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা অভিযান চালিয়ে এ ধরনের কিছু খুঁজে পায়নি।
তবে আমি অস্বীকার করছি না, সমস্যাটি নেই। সব জায়গায় চোরে ভরে গেছে। এ বিষয়ে আমি কী করতে পারি? উপজেলা থেকে যদি বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়, সেটা তো আমরা আটকাতে পারব না। এ ব্যাপারে নতুন উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এটুআই প্রজেক্টের মাধ্যমে সবগুলো প্রতিষ্ঠান থেকে বইয়ের চাহিদার ব্যাপারে সরাসরি তথ্য নেবো। ওই তথ্যর আলোকে আগামী বছর সরাসরি সব উপজেলায় বই পাঠানো হবে। একই সময়ে সব বই না পাওয়ায় শিশুদের বঞ্চিতের কথা জানিয়ে শিক্ষাবিদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আফসানা আহমেদ বলেন, এক মাস পরও যখন শিশুরা বই না পাবে, অভিভাবকরা বিকল্প উপায় খুঁজবে এটিই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে যারা দায়িত্বে থাকেন, তাদের কর্তব্য হচ্ছে শিশুদের বই উৎসবের দিনই সবগুলো বই দেয়া। সঠিক সময়ে বই না দেয়ায় শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে আমাদের আগে থেকেই ভালো পরিকল্পনা করা দরকার।