৩০০ বিদ্যালয়ে শিশুদের দুধ খাওয়াবে সরকার

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩, ১০:৪৯ এএম
৩০০ বিদ্যালয়ে শিশুদের দুধ খাওয়াবে সরকার

শিশুদের মেধা বিকাশে পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে দেশের ৬১ জেলায় তিন শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বছরব্যাপী দুধ খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকভাবে দেশের ৩০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাইলট প্রকল্প আকারে এটি চালু করা হবে। এ কর্মসূচির আওতায় ৩০০টি নির্বাচিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তরল দুধ খাওয়ানো হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) আওতায় এসব বিদ্যালয়ের শিশুদের প্রতিদিন বিনামূল্যে ২০০ মিলিলিটার করে দুধ খাওয়ানো হবে। একদিকে পুষ্টি চাহিদা পূরণ অন্যদিকে পুষ্টিবিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাইলট প্রকল্পটি সফল হলে দেশের সব স্কুল ও শিশুকে এমন কর্মসূচির আওতায় আনা সম্ভব হবে।

আজ রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুধ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে এলডিডিপির এ কর্মসূচি শুরু হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন স্কুল মিল্ক কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথমত দেশের ৫০টি বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১ হাজার ৬৪২ জনের তালিকা করা হয়েছে। আগামী মার্চ মাস থেকে দুধ খাওয়ানো শুরু হবে। যেসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের দুধ পান করানো হবে সেখানে সব শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করতে একটি আইডি কার্ড দেয়া হবে। প্রতিটি স্কুলেই শিক্ষক এবং অভিভাবকদের পরিবেশ ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোতে বছরে ১৬০ দিন চলবে এই কার্যক্রম। স্কুলের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী প্রতিদিন দুধ  পাবে। 

যারা দুধ খায় এবং যারা খায় না তাদের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হবে। দুর্গম এলাকা ও দরিদ্র মানুষকেই এখানে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি শিশুদের উচ্চতা, ওজনসহ শারীরিক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের জন্য উপজেলা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দুটি কমিটি কাজ করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার কিছু দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুলের শিশুদের গুঁড়া দুধ দেয়া শুরু করে। ১৯৯৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলে খাদ্য কর্মসূচি চালু হয়। এ কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীদের চাল, ডাল ও নগদ অর্থ দেয়া হতো। ২০০০ সালের পর থেকে এসবের বদলে ভিটামিনসমৃদ্ধ বিস্কুট দেয়া হয়। ২০০২ সালে যশোরে বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর জন্য জরুরি সাহায্য হিসেবে বড় পরিসরে স্কুলে খাওয়ানো কর্মসূচি চালু হয়। ২০১০ সালে ডব্লিউএফপির সহায়তায় কর্মসূচিটি জাতীয় পর্যায়ে শুরু হয়ে চলে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়। তবে গত ১ জুলাই বন্ধ হয়ে যায় এ কার্যক্রম। এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় চালু হচ্ছে স্কুল মিল্ক ফিডিং কার্যক্রম।

এ বিষয়ে এলডিডিপি প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. গোলাম রব্বানী জানান, উদ্বোধনের পরই মার্চ মাসে ৫০টি স্কুল, জুনের মধ্যে ১০০টি এবং ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো ৩০০ স্কুলে এ কার্যক্রম চালু করব। মূলত দুধ বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে এ কাজটি করতে হচ্ছে। এ কারণে একটু সময় লাগছে। আর স্কুলগুলো নির্ধারণ করে দিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তিনি আরও বলেন, গরুর দুধ আদর্শ পুষ্টিকর খাবার। তাই শিশুদের দুধ খাওয়ার প্রতি আগ্রহ ও আকৃষ্ট করার পাশাপাশি নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে স্কুল মিল্ক ফিডিং শুরু হচ্ছে।