- সাত মাসে বিতরণ ১৮ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, লক্ষ্য ছিল ১৮ হাজার ৩১ কোটি
- আগের অর্থবছরের একই সময়ে বিতরণ হয়েছিল ১৭ হাজার ৫৬ কোটি টাকা
চলমান সংকট মোকাবিলায় কৃষিতে জোর দিচ্ছে সরকার। টাকার অভাবে যাতে কোনো কৃষকের ফসল উৎপাদন ব্যাহত না হয় সে লক্ষ্যে কৃষিঋণ বিতরণে তদারকি কার্যক্রম জোরদার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে কৃষিঋণ বিতরণে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষিঋণ বিতরণের এ ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে লক্ষ্যের চেয়েও বেশি ঋণ বিতরণ হবে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের (জুলাই-জানুয়ারি) সাত মাসে কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে ১৮ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, যা বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে বিতরণ হয়েছিল ১৭ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৃষিঋণ বিতরণের বিষয়টি তদারকি করছে। ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়ে সফর করে কৃষিঋণ বিতরণের তদারকি করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে।’ চলতি অর্থ বছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরে ছিল ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি এই সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৮ হাজার ৩১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১৮ হাজার ৬৮৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। অর্থাৎ কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সাত হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা আগের বছরে বিতরণ হয়েছিল সাত হাজার ৯৪ কোটি টাকা এবং দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। আগের বছরে এসব ব্যাংক বিতরণ করেছিল ৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত সাত মাসে কৃষি খাতের শস্য উপখাতে বিতরণ হয়েছে আট হাজার ৯০১ কোটি, ইরি সরঞ্জাম কিনতে ১৫৫ কোটি, কৃষি সরঞ্জাম ক্রয়ে ১২৯ কোটি, পশু ও পোল্ট্রি উপখাতে তিন হাজার ৯৬০ কোটি, মৎস্য চাষে দুই হাজার ২৭২ কোটি, শস্য মজুত ও বিপণনে ৯৪ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। এ ছাড়া নন-ফার্ম খাতের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনে এক হাজার ১০৩ কোটি ও অন্যান্য খাতে দুই হাজার ৭০ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ২ শতাংশ কৃষিঋণ হিসেবে বিতরণ করে। এর বাইরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বিতরণ করা ঋণের পুরোটাই কৃষিঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়। এর বাইরে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণী সংস্থার (এনজিও) নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (এমআরএ) নিবন্ধিত এনজিও কৃষিঋণের বড় একটি অংশ বিতরণ করে। যে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে ঋণ বিতরণে যথেষ্ট অবকঠামো নেই, সে সব ব্যাংক এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করে। এনজিওগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে থেকে ৮ থেকে ৯ শতাংশ হারে তহবিল নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ২২ শতাংশ হারে বিতরণ করে। এ ছাড়া করোনা মহামারির অভিঘাত মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা স্কিম, গাভী পালনে ঋণ, শস্যে ঋণসহ বিভিন্ন রকম কৃষিঋণ স্কিম রয়েছে। শস্য, সেচ, কৃষি যন্ত্রপাতি, লাইভস্টক ও পোল্ট্রি, মৎস্য চাষ, শস্য সংরক্ষণ ও বাজারজাত, পল্লী অঞ্চলে দারিদ্র্যদূরীকরণে ছোট্ট উদ্যোগে এসব ব্যাংক ও এনজিও কৃষিঋণ বিতরণ করে। প্রতি বছর ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিঋণ বিতরণ বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, আট রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, বাংলাদেশে ব্যবসারত আট বিদেশি ব্যাংক, দেশি ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ মোট ৫৬টি ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ করে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বিডিবিএল লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্যাংক আল ফালাহ, সিটি ব্যাংক এনএ, হাবিব ব্যাংক, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া লক্ষ্য পূরণ করে। যেসব বেসরাকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্য ছাড়িয়েছে সেগুলো হলো— বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক। ছয় মাসে বিদেশি উরি ব্যাংক কোনো কৃষিঋণ বিতরণ করেনি। ১০ শতাংশের নিচে ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকগুলো হলো মধুমতি ও ইউনিয়ন ব্যাংক।