- ঢাকার সায়েন্সল্যাবে ভবনে বিস্ফোরণে তিনজন নিহত
- বিস্ফোরকের অস্তিত্ব পায়নি সেনাবাহিনী পুলিশ বলছে জমে থাকা গ্যাসে বিস্ফোরণ, এসি বিস্ফোরণের ধারণা ফায়ার সার্ভিসের
- সীতাকুণ্ডের ঘটনায়ও জানা যায়নি কারণ চলছে মামলার প্রস্তুতি
- জড়িতদের চিহ্নিত শাস্তির ব্যবস্থা ও পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চিঠি
সীতাকুণ্ড ও ঢাকায় এক দিনের ব্যবধানে দুটি বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। বিস্ফোরণের এসব ঘটনা এখন জীবনের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা মুশকিল, কখন কোথায় কীভাবে ঘটে বিস্ফোরণ। এসব ঘটনা মানুষের মধ্যেও বাড়াচ্ছে আতঙ্ক। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত এসব বিস্ফোরণের ঘটনা কেন ঘটছে তার সঠিক কারণও অজানা। শুধু ঘটনা ঘটলেই ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান আর উদ্ধার শেষে তদন্তে সীমাবদ্ধতার অভিযোগও রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার ঢাকার সায়েন্সল্যাবে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের ঘটনায় বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বলছে— এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি মানুষের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ।
এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কমিশন মনে করে, এ ঘটনায় কোম্পানিগুলোর যেমন দায় রয়েছে, একই সাথে সরকারের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোও এর দায়ভার এড়াতে পারে না। কমিশন আরও মনে করে, এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায়ে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কমিটি গঠন করে কমিটির সুপারিশ মোতাবেক কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া গেলে সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব। এ অবস্থায় বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করাসহ তাদের শাস্তির ব্যবস্থা ও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বলা হয়েছে।
শনিবার সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের সঠিক কারণও জানা যায়নি এখন পর্যন্ত। ঢাকার সায়েন্সল্যাবের ঘটনায়ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) রহমত উল্লাহ বলেন, লাইনে জমে থাকা গ্যাস থেকে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ফায়ার সার্ভিস বলেছে— তাদের প্রাথমিক ধারণা, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) বিস্ফোরণ থেকে আগুন লাগতে পারে। আর সেনাবাহিনী বলছে— বিস্ফোরণের ঘটনা কোনো ধরনের বিস্ফোরকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সঠিক কারণ নিয়ে সংশয় থাকলেও এ ঘটনায় শফিকুজ্জামান, আব্দুল মান্নান ও তুষার নামে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৩ জন। এ ছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বিস্ফোরণের এ ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেছেন, এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করবেন। তদন্ত কমিটি ফায়ার সার্ভিস ও ঘটনাস্থলে কাজ করা অন্য বিশেষজ্ঞদেরও মতামত নেবে। তারপর তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
জানা গেছে, বিস্ফোরণের সময় শুধু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নয়, আশপাশের ভবনও কেঁপে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিস্ফোরণটি শক্তিশালী ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনটির তৃতীয়তলায় ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের অফিসে মূলত বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এমনই ছিল যে, পাশের একটি ১৪তলা আবাসিক ভবন কেঁপে ওঠে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ভবনটির বাসিন্দারা। ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল কাদির বলেন, বিস্ফোরণের সময় ভবনের গেটে বসেছিলাম। বিস্ফোরণের তীব্রতা এমনই ছিল যে, ভবনসহ আমার চেয়ার কেঁপে ওঠে। এত পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ভবনের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে নিচে নামতে থাকেন।
পরে বের হয়ে দেখি তিনতলা ভবনটির সামনে মানুষজন পড়ে আছে এবং সব কিছু ভেঙেচুরে গেছে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন ভবনটির পাশের মার্কেট প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের দোকানিরাও। সেখানে দোকানি সানাউল্লাহ বলেন, আমি মার্কেটে নাশতা করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে চারদিকে কেঁপে ওঠে। দৌড়ে মার্কেটের ভেতর থেকে বের হই। দেখি শিরিন ম্যানশনের তিনতলা উড়ে গেছে। নিচে চার থেকে পাঁচজন মানুষ পড়ে আছে। তাদের মধ্যে তিনজনকে দেখে মনে হয়েছে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। অন্যদিকে, ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ঘটনাস্থলে একে একে আসে সিটিটিসির বোম ডিস্পোজাল ইউনিট, সিআইডির ক্রাইম সিন, পিবিআইসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার লোকজন। তারা প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ জানার জন্য চেষ্টা করেন। তদন্তকারী দলগুলো বলছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা অনেক ছিল। তবে, এটি দুর্ঘটনা, নাশকতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
এদিকে সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। এর আগে শনিবারের ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের ঘটনায়ও কেঁপে ওঠে সীতাকুণ্ডের কয়েক কিলোমিটার এলাকা। ঘটনাস্থলের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিটকে পড়ে বিস্ফোরিত ইস্পাতের টুকরো। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জন মারা গেছেন। আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১৮ জন। গুরুতর আহত দুজন আইসিইউতে। তাদের মধ্যে প্রভাষ নামে একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত করা গেলেও একজনের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এখন পর্যন্ত বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি কোনো সংস্থা থেকেই। কারখানাটির কম্প্রেসার অপারেটর ওসমান বলছেন, অক্সিজেনের অতিরিক্ত চাপের কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তার ধারণা। তিনিও ওই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চমেকে চিকিৎসাধীন। তবে সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকেই যেন নিজেদের আড়ালে রাখতে চাচ্ছেন বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ওই কারখানাটির বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স আছে কীনা এমন প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টায় গতকাল প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শকের মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি মসজিদে আছেন জানিয়ে উপপ্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক ড. মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান এখনো অফিসে বলে তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু তাকে অসংখ্যবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। চট্টগ্রাম কার্যালয়ের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শকও ফোন রিসিভ করেননি। যে কারণে জানাও যায়নি সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স আছে কী না?