- সেবা খাতে ১২ মাসে দেশে ঘুষ দেয়ার পরিমাণ ১০ হাজার ৮৩০ কোটি
- মাসে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা শুধু কয়লা বাবদ গচ্চা দিতে হবে আদানিকে
- ১০১৬১ কোটি টাকার পদ্মা সেতুর ব্যয় ৩০১৯৩ কোটি টাকা নিয়ে প্রশ্ন
- ১০ ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে লোপাট ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা
বাংলাদেশে গত প্রায় দেড় দশক ধরে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। গতকাল নয়াপটনে দলটির এক সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘শেখ হাসিনার মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুর্নীতি’ এই শিরোনামে এক গবেষণা প্রতিবেদনে ১৪ বছরে আওয়ামী দুর্নীতির খণ্ডচিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আশ্চর্য সব কাণ্ড ঘটে চলেছে। বালিশ, পর্দা, ঢেউটিন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাসিনোকাণ্ড, ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ার বাজার লুট, অর্থপাচার, মেগাপ্রজেক্টে মেগা কেলেঙ্কারি— একটার পর একটা ঘটে চলছেই। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ভাষায় বাংলাদেশে ‘সাগরচুরি’ চলছে বলে অভিযোগ তোলেন ফখরুল। ধারাবাহিকভাবে তিনি ৫০ সেক্টরের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
তার মধ্যে সর্বপ্রথম রয়েছে সেবা ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি। পর্যায়ক্রমে রয়েছে— আদানি পাওয়ার লি., টাকাপাচার, বেগমপাড়া ও সেকেন্ড হোম, সুইসব্যাংক, ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির বিদেশে দুই হাজার কোটি টাকা পাচার, ইডিএফের আড়ালে ৭০০ কোটি ডলারের দুর্নীতি, মেগাপ্রকল্পে মেগাচুরি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু প্রকল্প, রেল-সংযোগ প্রকল্প, পায়রা থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল, মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন থার্মালপাওয়ার স্টেশন, বাঁশখালী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, পাতাল রেল, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরপ্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, বিআরটি প্রকল্পটি, ব্যাংকিং সেক্টরে নৈরাজ্য, অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারসম্যান, আর্থিক খাতে লুটের মহোৎসব সিরিজ, ১০ ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে লোপাট ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়েকাণ্ড, বেসিক ব্যাংকের পতন ও চাঞ্চল্যকর আর্থিক কেলেঙ্কারি, জনতা ব্যাংক কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনির দুর্নীতি, ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি, ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’, পি কে হালদার জালিয়াতি, চারলেন মহাসড়ক, রেলওয়ে বিভাগের দুর্নীতি ও অপচয়, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি, ভোটচুরি আর অর্থ চুরির মেশিন ইভিএম ক্রয়ে দুর্নীতি, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি, বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে দুর্নীতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে দুর্নীতি ও স্যাটেলাইট প্রকল্প।
সেবা খাতে দুর্নীতি (টিআইবি রিপোর্ট) : টিআইবির ৩১ আগস্ট ২০২২ প্রকাশিত প্রতিবেদন মোতাবেক ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে দেশে ঘুষ দেয়া টাকার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৩০ কোটি। ওই সময়কালে প্রতিটি পরিবার গড়ে ঘুষ দিয়েছে ছয় হাজার ৬৩৬ টাকা। দেশের ৪ ভাগের ৩ ভাগ মানুষ মনে করেন, ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। সবচেয়ে বেশি ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ খানাদুর্নীতির শিকার হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার মাধ্যমে। দ্বিতীয় সাড়ে ৭০ শতাংশ খানাদুর্নীতির শিকার হয়েছে পাসপোর্ট খাতে। এরপর রয়েছে বিআরটিএ, বিচারিক সেবা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান এবং ভূমিসেবা। ক্রয়-সংক্রান্ত বিষয়ে দুর্নীতির ফলে সরকারি ক্রয় বাজেটের ৮ দশমিক ৫ থেকে ২৭ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে সেবা খাতের ‘পেটিকরাপশনের (ছোট দুর্নীতি)’ মাত্রাই এত ব্যাপক। তাহলে বড়প্রকল্প, বড় কেনাকাটায় দুর্নীতির মাত্রা কোন মাত্রায় হতে পারে তা ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির দিকে চোখ রাখলেই পরিষ্কার।
বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি : বিদ্যুৎ খাতকে আওয়ামী সরকার দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। গত এক যুগে রেন্টাল এবং আইপিপি খাতে সরকার কেবল ক্যাপাসিটি চার্জবাবদ পরিশোধ করেছে ৯০ হাজার কোটি টাকার ঊর্ধ্বে। যার মধ্যে সরকারের অতিঘনিষ্ঠ ১২টি কোম্পানিই নিয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদন হোক বা না হোক, সরকার বিদ্যুৎ ক্রয় করুক বা না করুক, বিনা টেন্ডারে কাজ দেয়া প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে প্লান্ট ভাড়া বাবদ দিতে হয়েছে পূর্বনির্ধারিত এই বিশাল অর্থ। অথচ চাহিদা না থাকায় ‘দেশের অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র্র অলস পড়ে আছে’।
আদানি পাওয়ার লি.-এর সাথে স্বার্থবিরোধী চুক্তি : সরকার ৫ নভেম্বর ২০১৭ সালে ভারতের আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সাথে ২৫ বছর মেয়াদি এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ (কয়লাভিত্তিক) ক্রয়ের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় আদানি পাওয়ারকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দিতে হবে এক লাখ ১৭ হাজার ৫৮ কোটি টাকা (১ ডলার= ১০৬.৩২ টাকা), যা দেশের কয়লাচালিত অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। আদানি গ্রুপকে কয়লার দাম পরিশোধ করতে হবে প্রতিটন ৪০০ ডলার, অথচ বাজারে ২০০ ডলারের নিচে। মাসে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা শুধু কয়লা বাবদ গচ্ছা দিতে হবে আদানিকে। চার মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা জরিমানা। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য পড়বে ২৪.২৮ টাকা।
টাকা পাচার : যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) ২০১৫ সালে বলেছিল, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়। ২০১৫ সালের পর থেকে জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কোনো তথ্য নেই। ধারণা করতে পারি, প্রতি পাঁচ বছরে টাকা পাচারের পরিমাণ দ্বিগুণ হলে বর্তমানে প্রতি বছরে টাকা পাচারের গড় পরিমাণ ০২ লাখ টাকার বেশি। ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সরকারের সিআইডি বরাতে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর হয়, শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে গড়ে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। হুন্ডির সঙ্গে ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যায়, প্রতি বছর বর্তমানে কম পক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে, বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলারপুঁজি এখন বিদেশে পাচার হচ্ছে।
সুইস ব্যাংক : সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের জমা করা টাকার পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। ২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।
ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির বিদেশে ২০০০ কোটি টাকা পাচার : পুলিশের সিআইডি দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় ফরিদপুর ছাত্রলীগের সভাপতি নিশান মাহামুদ শামীমকে গ্রেপ্তার করেছে। ছাত্রলীগের সভাপতি কি করে ২০০০ কোটি টাকার মালিক হয়?
ইডিএফের আড়ালে ৭০০ কোটি ডলারের দুর্নীতি : রিজার্ভ থেকে অনিয়মিতভাবে নানা নামে আট বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ফেলেছে সরকার। এর মধ্যে ৭০০ কোটি ডলার বা সাত বিলিয়ন দিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ইডিএফ গঠন করে ওই টাকা ঋণের নামে সহজ সুদে দলীয় আশীর্বাদপুষ্টদের দেয়া হয়েছে। যা আর কখনো আদায় করা যাবে না, বা আদায় হবে না। ২০১৯ সালের চার হাজার ৯০০ কোটি ডলার থেকে আমদানি ব্যয় বেড়ে ২০২২ সালে আট হাজার ৯০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। সরকার নিশ্চিন্ত মনে দলীয় ব্যবসায়ীদের ওভার ইনভয়েসিং করে আমদানির মাধ্যমে দেদার বিদেশে অর্থপাচারের সুযোগ করে দেয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্থপাচার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ওই সময় ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যাকাউন্টসে ৩৩ শতাংশ ডেফিসিট দেখা দেয়। এটিকে বর্তমান ডলার সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পদ্মা সেতু প্রকল্প : ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার পদ্মা সেতুর ব্যয় চার-পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়ে কিভাবে বর্তমান সরকারের সময় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা হলো জনগণ তা জানতে চায়। পদ্মা সেতু পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল সেতু। ভারত ও চীনের তুলনীয় দৈর্ঘ্যের সেতুর জন্য যে ব্যয় হয়েছে সে তুলনায় এ অর্থ দিয়ে কয়েকটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত।
মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন থার্মাল পাওয়ার স্টেশন : ২০১৫ সালে জাপানি সাহায্য সংস্থা জাইকার ৮০ শতাংশ ঋণ সহায়তায় প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কেন্দ্রটি এখনও উৎপাদনে আসেনি। এই প্রকল্প নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পাতাল রেল এমআরটি লাইন : প্রকল্পটির আওতায় বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রেলপথ হবে মাটির নিচে। নতুনবাজার থেকে সংযুক্ত হয়ে এর একটি অংশ যাবে পূর্বাচলে। ৩১ কি: মি: দৈর্ঘ্যের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৩৯ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি মাত্র দেড় ভাগ।
কর্ণফুলী টানেল : কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত এই টানেল প্রকল্পের মোট ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা, যার ৫৭ ভাগই বৈদেশিক ঋণ। তবে দুর্নীতি করে সময়ক্ষেপণ করে নানা কারণ দেখিয়ে প্রকল্পটির ব্যয় আরও ৭০০ কোটি টাকা বাড়ান হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে কর্ণফুলী টানেলের কাজ শেষ করার কথা। সর্বশেষ তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত এর অগ্রগতি ৮৭ ভাগ।
পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প : সমুদ্রের প্রয়োজনীয় গভীরতা না থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণে ১৭০০ কোটি ডলার মূল্যের পায়রা বন্দর প্রকল্পটি গৃহীত হয়। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে ড্রেজিংয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ভেঙে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়ে বেলজিয়ামের একটি কোম্পানির সাথে চুক্তি হয়েছে, যা যৌক্তিক হয়নি। ইতোমধ্যে সরকার এ বন্দর প্রকল্প থেকে সরে এসেছে।
আর্থিক খাতে লুটের মহোৎসব : গত ১২ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে সর্বাধিক লুটপাট ঘটেছে। তার মধ্যে রয়েছে— গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতের ১০টি বড় কেলেঙ্কারিতে লোপাট হয়েছে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এসব কেলেঙ্কারি ঘটেছে মূলত সরকারি ব্যাংকে। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক গ্রুপ দিয়ে শুরু হলেও সবচেয়ে বেশি কেলেঙ্কারি ঘটেছে জনতা ব্যাংকে। আরও রয়েছে বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরি : ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আট কোটি ১০ লাখ এক হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১০ কোটি টাকা) চুরির ঘটনা সারা বিশ্বে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ রিজার্ভ চুরিকে বিশ্বের অন্যতম ‘বিগেস্ট ব্যাংক হেইস্ট’ আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার চুরির ঘটনায় ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা’ রয়েছে এবং ‘ব্যাংক ডাকাতির হোতারা ব্যাংকের ভেতরেই আছে’ বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের এক কর্মকর্তা।
ভোট চুরি আর অর্থ চুরির মেশিন ইভিএম ক্রয়ে দুর্নীতি : নির্বাচন কমিশন দুই লাখ ইভিএম কেনার জন্য খরচ ধরেছে আট হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি যন্ত্রের পেছনে খরচ পড়ছে চার লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে নির্বাচন কমিশন তিন হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকার বিনিময়ে দেড় লাখ ইভিএম ক্রয় করেছিল। প্রতিটি ইভিএমের পেছনে গড়ে ব্যয় হয়েছিল দুই লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ইভিএম ক্রয়ে ৭১ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে! মাত্র ১০ হাজার ইভিএম মেরামতেই এক হাজার ২৬০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।