সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় ধর্ষণের অভিযোগ আর জেল খাটার অভিযোগ তুলেছেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ নামে এক প্রযোজক। ২০১৬ সালে নির্মাণাধীন ছবি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে এমন খবর পাওয়া যায়। নায়িকা আর প্রযোজকের এক ঘটনার সূত্র ধরে সিনেমা বন্ধের কথাও শোনা যায়। পরিচালককে ম্যানেজ করে এটি প্রায় ৭ বছর ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এমনটি জানায় একটি বিশ্বস্ত সূত্র। তবে পরিচালকের এক ফেসবুক বার্তায় তা অস্বীকার করতে দেখা গেছে।
যদিও এসবের বিষয়ে দীর্ঘদিন শাকিব খান চুপ থাকলেও বিশ্বস্ত সূত্রটি জানিয়েছে, তার সাবেক সহধর্মিণী অপু বিশ্বাসের আদলে প্রথম সেই প্রযোজকের সঙ্গে মীমাংসার জন্য বসেন। পড়েন নতুন করে এই বিপদের মধ্যে। অনেকেই ধারণা করছেন, অপু বিশ্বাসই তাকে ফাঁদে ফেলতে এমনটি করছেন। এমনকি ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত নিতেও চেয়েছিলেন! তাদের সঙ্গে ছিলেন শুভ নামের এক সংগীতশিল্পী। তাদের মাঝে মীমাংসা না হওয়াতেই ক্ষিপ্ত হন শাকিব খান।
তবে সেই প্রযোজক শাকিব খান পরদিন টিকিট অনুযায়ী রাত ৮টায় ফেরত যাবেন বলেও তাকে জানানো হয়। প্রযোজক রহমত উল্লাহ দেশে থাকাকালীন শাকিব খান ভয়ে ঘর থেকে বের হননি বরং অপু বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। তার বিরুদ্ধে ২৬ পৃষ্ঠার মামলার নথি ততক্ষণে গণমাধ্যমের হাতে এসে হাজির। তাহলে কি অপু বিশ্বাস বারবার এই নায়ককে বিপদে ফেলতে চাচ্ছেন? কেননা, মামলার বিষয়ে তাকে অপু বিশ্বাস থানায় পাঠানোর চেষ্টা করেছেন। বিয়ে ছাড়াই শাকিব-অপু আবারও এক ছাদের নিচে থাকার কথাও তুলেছে সূত্রটি!
এদিকে শাকিব খানের এই মহাদুঃসময়ে বুবলির পাশে থাকা চোখে পড়লেও অপু বিশ্বাসের কোনো হদিস পাওয়া গেল না কেন? অন্যদিকে এই নায়িকার জন্য শাকিব খানের কেন এত আবেগ? এই অপু বিশ্বাসের জন্যই শনির লঙ্কাকাণ্ড আর বিপদের ঘনঘটা শুরু হয় দেশসেরা এই সুপারস্টার নায়কের! সামনে আরও মহাবিপদসংকেত রয়েছে শাকিব খানের। ইন্ডাস্ট্রির সবাই কম-বেশি তা জানা। নায়িকা ‘বি’ এবং নাচের এক মেয়ে ‘এস’ নামের কক্সবাজারের সেই মুমূর্ষু দিনের ঘটনার কথা। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রযোজক ইতোমধ্যে শাকিব খানকে রাফ অ্যান্ড টাফ ধর্ষকের তকমা দিয়েছেন।
এদিকে এই নায়ককে নিয়ে পরিচালক এফআই মানিক জানিয়েছিলেন ভিন্ন তথ্য, ‘নায়ক শাকিব খানের সামনে আরও মহাবিপদ রয়েছে। তার জন্য এই পরিচালকের সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হবার ঘটনাও ঘটেছে। অপু বিশ্বাসকে নায়িকা না নিয়ে পূর্ণিমাকে নায়িকা হিসেবে নেয়ার কারণে তার প্রায় তিন কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে বলেও দাবি করেছেন ওই পরিচালক।’ পরিচালক এফআই মানিক আরও জানিয়েছিলেন, শত শত প্রযোজককে পথে বসিয়েছেন শাকিব খান।
প্রকৃতি তারই প্রতিশোধ নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। শাকিব খান টাকা ছাড়া জীবনে কিছুই চেনেন না বলেই আজ তার এমন বিপদ। মারা যাওয়া পর্যন্ত তাকে অভিশাপ চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে শাকিব খানের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন বর্তমান সময়ের নায়ক ইমন। তিনি একটি বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। লিখেছেন, ‘বনে-জঙ্গলে যে গাছটা সবচেয়ে বড় থাকে, সেই গাছে ঝড়-বাতাস বেশি লাগে। কিন্তু ঝড়ের পর সেই গাছটিই উঁচু হয়ে থাকে। আপনি আমাদের সুপারস্টার। একজন শাকিব খান আমার বড় ভাই, সহকর্মী। বিশ্বাস করি সব সমস্যার সঠিক সমাধান হয়ে আপনি রাজার মতো কামব্যাক করবেন।’
তাকে নিয়ে বেশ সরব নায়ক নিরব। তিনিও শাকিব খানের পক্ষে একটি বার্তা ছুড়েছেন, ‘বহু বছর ধরে এই মানুষটির স্নেহ ও পরামর্শ পেয়ে আসছি। কাছ থেকে দেখেছি তার ফ্যান-ফলোয়ার্স তাকে কতটা ভালোবাসে। হয়তো এ কারণে তিনি বাংলাদেশের সুপারস্টার। সত্যি কথা বলতে সিনেমার মাধ্যমে একজন শাকিব খান হয়ে ওঠা বা তার কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছানো যে কতটা ডেডিকেশনের ব্যাপার, যারা এখানে কাজ করেন— তারা হয়তো তা ভালো বোঝেন। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের সিনেমাও জানে শাকিব খানকে কতটা দরকার। দ্রুত সবকিছুর সুষ্ঠু সমাধান হোক।’
অন্যদিক পুলিশ ইনভেস্টিগেশন করে মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী, ধর্ষণকারী শাকিব খান মাতাল হয়ে অ্যানি সাবরিনকে যোনি ও পায়ুপথে নির্মমভাবে যৌনাচার চালিয়েছেন। এমন অভিযোগ সামনে আনার কারণে প্রযোজক রহমত উল্লাহকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে মারার পরিকল্পনা করার কথাও একটি সূত্রে জানা গেছে। পরে বাধ্য হয়েই দেশত্যাগ করতে হয় সেই প্রযোজককে। তবে বিপক্ষেও অস্ট্রেলিয়া থেকে মন্তব্য করেছেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমি পালিয়ে আসিনি। কাজের টানেই অস্ট্রেলিয়া এসেছি। কারো ভয়ে পালিয়ে আসিনি। আমি আবার আসব। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো সব প্রমাণ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এদিকে গণমাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের একটি রিপোর্ট পাঠান প্রযোজক। ২৬ পৃষ্ঠার সেই পিডিএফ ফাইলে দেখা যায় বর্বর এক ধর্ষণের বর্ণনা। পুলিশের নথিতে উঠে এসেছে মামলার বাদী ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী অ্যানি সাবরিন নিজেই। মামলার সাক্ষী প্রযোজক রহমত উল্লাহ। যাকে রিপোর্টে অ্যানির ‘আংকেল’ উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার নাম ম্যাথিউ জন ক্রুকসন। মামলাটি করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট জর্জ পুলিশ স্টেশনে।
রিপোর্টে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল অভিযুক্ত শাকিব খান ওরফে রানার বিরুদ্ধে। ক্যারিয়ারের প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া গিয়েই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার এই নায়ক। শাকিব খানের বিষয়ে পুলিশ রিপোর্টে এমন তথ্যই মিলেছে। পুলিশ রিপোর্টে আরও জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে নভোটেল দ্য গ্র্যান্ড প্যারেড অ্যাপার্টমেন্ট ৭২১ ব্রাইটন লা স্যান্ডস হোটেলকক্ষে রাত ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা অ্যানিকে ধর্ষণ করেন শাকিব খান।
পুলিশ সেই প্রতিবেদনে আরও বলেছে, ‘শাকিব খান রানা একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা। ভুক্তভোগী অ্যানি সাবরিন তার আঙ্কেল রহমত উল্লাহর ফিল্ম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেন। সাবরিনও রহমত উল্লাহর বাংলাদেশি সিনেমার কাজ শুরু করেছেন। যার শুটিং অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় শাকিব খানের সঙ্গে অ্যানি সাবরিনের প্রথম দেখা হয় ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট। এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া শাকিব খানের নিয়মিত ট্রান্সপোর্ট, হোটেল, খাওয়া-দাওয়া ও যাবতীয় বিষয়াদি দেখাশোনা করেন অ্যানি। একাধিক সূত্রে জানা যায়, খুব শিগগিরই অ্যানি এ বিষয় নিয়ে লাইভে আসবেন। ’