- রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোনো বান্দা যেকোনো ভালো কাজ বা আমল যদি যথাযথভাবে উত্তম উপায়ে করে; তবে সেই আমল বা কাজ আল্লাহতাআলা পছন্দীয় হিসেবে গ্রহণ করেন।’ (তাবারানি)
- রমজান মাসের ৩০-২৯টি রোজা পালনসহ, অন্য গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো পালন করার নিয়ত করতে হবে
- রমজান মাস বরকতময় মাস, গুনাহ মাফ করে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের মাস। তাই মহান আল্লাহর কাছে আমাদের এই মাস পাওয়ার জন্য দোয়া করতে হবে
রমজান আসার আগে প্রস্তুতি মানে খাবারের বিশাল সমাহার সংগ্রহের প্রস্তুতি নয়; বরং আত্মিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করাই মূল বিষয়। দুঃখজন হলেও সত্য, মানুষ আত্মিক প্রস্তুতি বাদ দিয়ে খাবারের আয়োজনের দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ে।
মুমিন মুসলমানের জন্য জরুরি হলো রমজানের যাবতীয় কল্যাণ পেতে হলে এখন থেকেই পরিপূর্ণ আত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। হজরত মুয়াল্লা ইবনে ফজল রহমাতুল্লাহি আলাইহি নামে এক বিখ্যাত তাবেয়ি বলেন, ‘সালফে সালেহিনরা রমজানের ছয় মাস আগে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করেন। আর রমজান শেষে তারা বাকি ছয় মাস দোয়া করতেন-হে আল্লাহ! রমজানে যা আমল করেছি; তা আপনি কবুল করে নিন।’ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোনো বান্দা যেকোনো ভালো কাজ বা আমল যদি যথাযথভাবে উত্তম উপায়ে করে; তবে সেই আমল বা কাজ আল্লাহতাআলা পছন্দীয় হিসেবে গ্রহণ করেন।’ (তাবারানি)
শাইখ আহমাদুল্লাহ মাহে রমজানের ১৫টি পূর্বপ্রস্তুতির কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো ১. তাওবাহ-ইসতেগফার করা ২. রমজান পাওয়ার আশা এবং নিয়ত করা ৩. রমজানের সব উপকারিতা স্মরণ করা ৪. খারাপ অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করা ৫. মানসিক প্রতিজ্ঞা নেয়া ৬. কাজা রোজা আদায় করা ৭. সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা করা ৮. ফরজ রোজার নিয়মকানুন জেনে নেয়া ৯. বিগত রমজানের অসমাপ্ত কাজ চিহ্নিত করা ১০. রমজানের মাসয়ালাগুলো পুনরায় দেখে নেয়া ১১. শাবান মাসজুড়ে রমজানের মহড়া চালু রাখা ১২. রমজানের ২৪ ঘণ্টার রুটিন করা ১৩. রমজানের চাঁদের অনুসন্ধান করা ১৪. বেশি বেশি দান-সদকা করা ১৫. বেশি বেশি দোয়া করা।
রমজান মাস আসার আগেই আমাদের আল্লাহর কাছে পেছনের সব গুনাহর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি যদি আমাদের ক্ষমা করে দেন, তাহলে পবিত্র মাহে রমজানে নতুন করে আমরা আমাদের জীবনটাকে নেক আমল দিয়ে সাজাতে পারব ইনশাআল্লাহ! এ সময় আমাদের বেশি বেশি পাঠ করতে হবে-আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন।
রমজান মাস বরকতময় মাস, গুনাহ মাফ করে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের মাস। তাই মহান আল্লাহর কাছে আমাদের এই মাস পাওয়ার জন্য দোয়া করতে হবে। এবং এই মাসের ৩০-২৯টি রোজা পালনসহ, অন্য গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো পালন করার নিয়ত করতে হবে। নেক আমলের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে এই দোয়া বেশি বেশি করতে হবে-আল্লাহুম্মা বাল্লিগনা রামাদান। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। অর্থাৎ, রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করুন।’
আমাদের রমজানের সব উপকারিতা স্মরণ করা কর্তব্য। মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনে এই মাসের অনেক বরকতের কথা বলেছেন এবং আমাদের প্রিয় নবী সা. এই মাসের অনেক ফজিলত, মর্যাদা ও উপকারিতার কথা বর্ণনা করেছেন। বরকতময় মাস রমজান সম্পর্কে কুরআন-সুন্না হয় যেসব ফজিলত, মর্যাদা ও উপকারিতার বর্ণনা রয়েছে, রমজান শুরু হওয়ার আগেই সেই সব সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত। সেসব উপকার পেতে কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলার প্রস্তুতি নেয়া আবশ্যক। একই সঙ্গে খারাপ অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে।
আফসোসের বিষয়, অনেক সময় পূর্বপ্রস্তুতি না থাকার কারণে রমজান পেয়েও মুমিন মুসলমান পরিপূর্ণ সওয়াব ও ক্ষমা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। প্রতিজ্ঞা এমনভাবে করা উচিত, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি কাজ যেমনই হোক, আমি আমার বিগত জীবনের সব গোনাহ থেকে নিজেকে মাফ করিয়ে নেব। আমার প্রতি আল্লাহকে রাজি-খুশি করিয়েই ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।