- এই সিরিজেই রান ও উইকেটের হিসাবে রেকর্ড জয় পেয়েছে টাইগাররা
- তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ ২-০তে জিতল বাংলাদেশ; বৃষ্টিতে এক ম্যাচ পরিত্যক্ত
- তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে প্রথমবার ১০ উইকেটের জয় পেলো স্বাগতিকরা
ব্যবধান ২-০ না হয়ে ৩-০ হতে পারত; যদি দ্বিতীয় ম্যাচে বৃষ্টি হানা না দিত। ওই ম্যাচে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও করেছিল বাংলাদেশ। যদিও ৩৪৯ রান চেজ করা কঠিনই ছিল আইরিশদের জন্য; তবে বলা যায় না— আইরিশরা তো জিততেও পারত! সিরিজের প্রথম ম্যাচে রেকর্ড ১৮৩ রানে জয়ের কীর্তি গড়েছিল টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচে দলীয় রেকর্ড ৩৪৯ রান করলেও বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। তৃতীয় ম্যাচে আইরিশদের উড়িয়ে প্রথমবার ১০ উইকেটের জয় পেলো বাংলাদেশ দল। প্রথম ব্যাট করতে নেমে ২৮.১ ওভারে মাত্র ১০১ রানে গুটিয়ে যায় আইরিশরা। জবাবে ২২১ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে নোঙর করে টাইগাররা। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এর আগে উইকেটের হিসাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়টি ছিল ৯ উইকেটের। পাঁচবার প্রতিপক্ষকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। দুই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজের ২-০তে জিতল তামিমের দল।
সিলেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় সফরকারীরা। সেখানেই যেন ভুল করে বসেন আইরিশ অধিনায়ক বালবির্নি। ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশি পেসারদের তোপের মুখে পড়ে আয়ারল্যান্ড। আইরিশ শিবিরে প্রথম আঘাত আনেন হাসান মাহমুদ। স্কোরবোর্ডে ১২ রান যোগ হতেই ওপেনার ডোহেনিকে হারায় তারা। হাসান মাহমুদের বলে মুশফিকের হাতে ধরা পড়েন এই ওপেনার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ৮ রান। এরপর ইনিংসের নবম ওভারে আইরিশ শিবিরে জোড়া আঘাত আনেন হাসান মাহমুদ। পল স্টার্লিং ও হ্যারি ট্যাক্টর দুই ব্যাটারকেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তরুণ এই পেসার। হাসানের তিন উইকেট শিকারের পর বোলিংয়ে ঝড় তোলেন তাসকিন।
আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নিকে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচে পরিণত করেন। ফলে ২৬ রানেই চার উইকেট হারিয়ে বড় চাপে পড়ে যায় সফরকারীরা। এরপর উইকেটরক্ষক-ব্যাটার টাকারকে নিয়ে দলের হাল ধরেন ক্যাম্ফার। ৪২ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। তাতে মিলছিল লড়াইয়ের আভাস। তবে বড় ক্ষতি করার আগেই এ জুটি ভাঙেন ইবাদত। টাকারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। তার ঠিক পরের বলে জর্জ ডকরেলকে বোল্ড করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও তৈরি করেন এই পেসার। কিন্তু পরের ওভারে ফিরে তার হ্যাটট্রিক বলে মিড উইকেটে ঠেলে তিন রান নেন ক্যাম্ফার। এরপর বল হাতে আবার জোড়া ধাক্কা দেন তাসকিন। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে নাসুম আহমেদের ক্যাচে পরিণত করার পর মার্ক অ্যাডাইরকে বোল্ড করে দেন তিনি। ক্যাম্ফার অবশ্য এক প্রান্ত আগলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে তাসকিনের ক্যাচে পরিণত করে ফেরান হাসান।
পরের ওভারে ফিরে গ্রাহাম হিউমকে ফিরিয়ে নিজের ফাইফার পূরণ করেন এ তরুণ। গ্রাহাম হিউম এসে খানিকটা সঙ্গ দেন ক্যাম্ফারকে। ১৭ রানের জুটির পর একা লড়তে থাকা ক্যাম্ফারই বিদায় নেন আগে। হাসানের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে টপ এজ্ড হয়ে ফাইন লেগে তাসকিনের হাতে জমা পড়েন তিনি। এরপর হিউমকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে নিজের ফাইফার পূরণ করেন হাসান। প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট পাওয়ার স্বাদ নেন এই ডানহাতি পেসার। এছাড়া তাসকিন তিনটি ও ইবাদত দুটি উইকেট নেন। ২৮.১ ওভারে ১০১ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই নির্ভার ছিল বাংলাদেশ। যার ছাপ দেখা গেছে তাদের ব্যাটিংয়েও। সিরিজজুড়ে রানখরায় ভুগতে থাকা তামিম ইকবাল এদিন ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইতিবাচক শুরুর বার্তা দেন। অপর প্রান্তে লিটন দাসও দুর্দান্ত শুরু পান। এই ওপেনারও চার হাঁকিয়ে ইনিংস শুরু করেন। দুই ওপেনারের ব্যাটে সাত ওভারের আগেই দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে বাংলাদেশ। একই গতিতে শতকও পেরোয় টাইগাররা। এমন দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক তামিম। ১৩ ওভার এক বল খেলে বিনা উইকেটে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ১০২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৪১ রান এসেছে অধিনায়কের ব্যাট থেকে। আর লিটন অপরাজিত থেকেছেন ৫০ রান করে।
ক্যারিয়ারে প্রথমবার হাসান মাহমুদের পাঁচ উইকেট
২০২১ সালের জানুয়ারিতে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। অভিষেকেই তিন উইকেট নিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জানান দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। বাংলাদেশ দলের পেস আক্রমণের এখন অন্যতম সেরা অস্ত্র ২৩ বছর বয়সি এই পেসার। গতকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমেছেন ক্যারিয়ারের অষ্টম ওয়ানডে। এরই মধ্যে ফাইফারের দেখা পেয়ে গেলেন ডানহাতি এই পেসার। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৬ রানেই চার উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে আইরিশরা। এর মধ্যে হাসান মাহমুদ নেন প্রথম তিনটি উইকেট। আউট করেন স্টিফেন দোহানি, পল স্টারলিং আর হ্যারি টেক্টরকে। মাঝে সেট ব্যাটার কুর্তিস ক্যাম্ফারকে সাজঘর দেখানোর পর গ্রাহাম হুমেকে এলবিডব্লিউ করে শেষটাও করেছেন হাসান মাহমুদ। সব মিলিয়ে ৩২ রান দিয়ে পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। বোলিং ফিগার ৮.১-১-৩২-৫। শুধু ওয়ানডে নয়, ক্যারিয়ারে ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলে এর আগে সর্বোচ্চ তিন উইকেট পাওয়ার কীর্তি ছিল হাসান মাহমুদের। যে কোনো ফরম্যাটে এবারই প্রথম তিনি পেলেন ফাইফার।