পণ্যের বাজারে ঊর্ধ্বগতি থামছে না। দিন যাচ্ছে আর পণ্যের মূল্য বাড়ছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। পণ্যমূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয় বাড়লে হয়তো ভোক্তারা সমন্বয় করতে পারতেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আয় সে হারে বাড়ছে না, যে হারে বাড়ছে পণ্যমূল্য।
বিশেষ করে রমজানকে কেন্দ্র করে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই পণ্যমূল্যের চিত্র একই। বাজারে খবর নিয়ে জানা গেছে, সবজি পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে এলেই দেড় থেকে দ্বিগুণ দাম বেড়ে যায়। অর্থাৎ পাইকারি বাজারে যে দামে কেনা হয়, খুচরা বিক্রিতারা পণ্যভেদে দেড় থেকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খবর নিয়ে দেখা যায়, পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৪০-৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০-৭০ টাকা, ছোট লেবু প্রতি হালি ২০-২৫ টাকা ও ধনেপাতা প্রতি কেজি ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু খুচরা বাজারে এসেই এসব সবজির দাম বেড়ে যায় দ্বিগুণ। হাতিরপুল কাঁচাবাজার ও কলমিলতা বাজারের খবর নিয়ে জানা গেছে, গতকাল খুচরায় প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১০০-১২০ টাকা, গোল বেগুন ৬০-৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকা, ছোট লেবু প্রতি হালি ৪০-৪৫ টাকা ও ধনেপাতা প্রতি কেজি ১২০-১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। একই অবস্থা কারওয়ান বাজারেও রয়েছে।
সেখানে পাইকারি আড়ত থেকে ১০-২০ মিটার দূরে খুচরা সবজির বাজার। এই দূরত্বে পরিবহন খরচ নেই বললেই চলে। তবে সেখানেও সবজির দাম কেজিতে বেড়ে যায় ১০-২০ টাকা। এদিকে কারওয়ান বাজারে যখন রাতে সবজিগুলো আসে তখন আড়তে আরও কমদামে কেনাবেচা চলে। তিন স্তরের এসব বাজারের তফাৎ শুধু একটাই। তা হলো, পাইকারি বাজার থেকে সর্বনিম্ন পাঁচ কেজি কিনতে হবে।
অন্যদিকে খুচরা বাজারে নিজের চাহিদামতো কেনা যায়। রমজানে সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে বেগুনের। কারণ এ সবজি দিয়ে তৈরি হয় বেগুনি। কারওয়ান বাজারের তথ্য নিয়ে জানা যায়, পাইকারিতে প্রতি পাঁচ কেজি হিসাবে নিলে কেজিপ্রতি গোল বেগুনের দাম ৩৫-৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। অথচ খুচরায় কোথাও বেগুনের দাম ৬০ টাকার নিচে নেই।
এসব বিষয়ে একজন সবজি বিক্রেতা বলেন, দোকানের ভাড়া, পরিবহন খরচ আছে। আমরা দু-তিনজন লোক কাজ করি। মূলধন খাটাতে হয়। তাই এটুকু মুনাফা করতেই হয়। তিনি আরও বলেন, পাইকারি থেকে খুচরায় পণ্যের ঘাটতি রয়েছে। বেছে বেছে অনেক খারাপ পণ্য আলাদা করে কম দামে বিক্রি করতে হয়। সেটা কিন্তু হিসাবে নিতে হবে। তিনি বলেন, আড়তদারিতেই আমাদের কেজিতে তিন থেকে চার টাকা খরচ পড়ে যায়। এরপর কাঁচা পণ্য ১০ শতাংশ নষ্ট হিসেবে ধরতে হয়। আবার অনেক মাল (সবজি) বেচাই হয় না। সেগুলো দিতে হয় ফেলে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সবাই সীমিত লাভ রেখে বিক্রি করে। আমাদের জায়গায় এসে দেখেন। লোকসান দিয়ে অনেক দোকান বন্ধ হয়ে গেছে গত কয়েক মাসে।
হাতিরপুলের অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, বাইরে থেকে যতটা লাভ দেখা যায়, আসলে ততটা হয় না। দোকান ভাড়া এখন বেড়েছে। ১০ হাজার টাকার নিচে পাওয়া যায় না কর্মচারী। অদৃশ্য কিছু খরচ আছে, সেটা সবাই জানে। হিজরারাও পর্যন্ত এসে চাঁদা নেয়। এদিকে একজন পাইকারি সবজি বিক্রেতা বলেন, সবজির বাজার প্রতিনিয়তই উঠানামা করে। বিভিন্ন কারণে স্থানভেদে তারতম্য দেখা যায় সবজির দামে। এই সুযোগে খুচরা বিক্রেতারা বেশি দাম নেয়। এ প্রবণতা তাদের বেশি।
তিনি বলেন, আড়ত থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত কয়েক হাত ঘুরে সবজি বেচাকেনার কারণে পাইকারি ও খুচরাপর্যায়ে দামের অস্বাভাবিক তারতম্য ঘটে। আবার উপলক্ষ্য পেলে নানা ছুতোয় বাড়ানো হয় সবজির দাম। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েন ভোক্তারা। দাম কম পান উৎপাদকরা, লাভবান হন মূলত মধ্যস্বত্বভোগীরা।