ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল প্রক্রিয়া শুরু

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩, ১১:৪১ এএম
ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল প্রক্রিয়া শুরু
  • পুলিশ কর্মকর্তা খুন
  • ইন্টারপোলের রেড নোটিস

পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খান খুনের মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল করতে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। শিগগিরই যাতে তার পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়া ভারত সরকার শুরু করে, সে চেষ্টা চালাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ জন্য ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে চিঠি দেবে মন্ত্রণালয়। এই চিঠির ভাষা ও বিষয়বস্তু এর মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশের নাগরিক রবিউল পালিয়ে ভারতে গিয়ে নাম পাল্টে সে দেশের পাসপোর্ট কীভাবে পেলো, সেটি ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় জানানো হয়েছে। ভারতকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি দেয়া না হলেও বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এই আলোচনায় বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আরাভের পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। একই সঙ্গে তার ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরাভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সামপ্রতিক সময়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা পর্যালোচনা করছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

এ ছাড়া আরাভ ভারতের যে ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট নিয়েছেন এবং যে কার্যালয় থেকে পাসপোর্ট নিয়েছেন, সে বিষয়েও তারা খোঁজখবর নিচ্ছে। আশা করা যায়, শিগগিরই আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে গত বছরের মে মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার। তখন জানা যায়, পিকে হালদার নিজেকে শিবশংকর হালদার পরিচয় দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রেশন কার্ড, ভারতের ভোটার পরিচয়পত্র, আয়কর দপ্তরের পরিচয়পত্র, নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র জোগাড় করেছিলেন।

এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তার ১১টি বাড়ি, জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়ার কথা তখন দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রে জানা যায়। জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন পিকে হালদার। এটি জানাজানির পর ২০১৯ সালের শেষ দিকে তিনি দেশ ছেড়ে পালান। ভারতের পাসপোর্টে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে থাকা বাংলাদেশি নাগরিক রবিউল ওরফে আরাভকে দেশে ফেরত আনতে কাজ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। এর অংশ হিসেবে ডিবি পুলিশ সদর দপ্তরকে একটি চিঠি দিয়েছে।

এই চিঠি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবে। পরে তা ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে হস্তান্তর করা হবে। মূলত এই চিঠিতে নিজেকে আরাভ পরিচয় দিয়ে রবিউলের ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। দুবাইয়ে আরাভ খান নামে আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা রবিউল পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি। মামুন খুন হন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তার আধপোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে ঢাকার বনানী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে পলাতক রবিউল ওরফে আরাভসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। মামলাটি এখন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। ডিবি সূত্র জানায়, চিঠিতে আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, আরাভ খান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক, তার প্রকৃত নাম রবিউল ইসলাম। তিনি বর্তমানে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে আরাভ খান নামে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। চিঠিতে আরাভের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, তার মা-বাবার নাম এবং গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাটের দুটি স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, আরাভসহ দুর্বৃত্তরা পুলিশ পরিদর্শক মামুনকে হত্যার পর আইনের মুখোমুখি হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষায় তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করতে চেয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ শাখা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে ১০ জনকে অভিযুক্ত করে। এই হত্যা মামলা ছাড়াও আরাভ খানের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। পুলিশের চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত আরাভ খান নিজের পরিচয় গোপন এবং কোনোভাবে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করে আইনি প্রক্রিয়া এড়িয়ে যান। ওই পাসপোর্ট নিয়ে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন। এই প্রেক্ষাপটে যত দ্রুত সম্ভব আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে। চিঠির সঙ্গে আরাভ খানের মামলাসংক্রান্ত ২২ পাতা সংযুক্তিও পাঠানো হয়েছে। আরাভ খান ১৫ মার্চ দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে জমকালো অনুষ্ঠানে আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেন। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদনজগতের অনেক তারকাকে হাজির করে আলোচনায় আসেন তিনি।

ইন্টারপোলের রেড নোটিস : পুলিশ কর্মকর্তা হত্যামামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করেছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা (ইন্টারপোল)। গতকাল শুক্রবার সকালে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ওয়ান্টেড বাই বাংলাদেশির তালিকার শুরুতেই আরাভ ওরফে রবিউলের নাম। হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবিও যুক্ত করা রয়েছে তার। ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় আসামি রবিউলের নাম, ছবি ও পরিচয় সংযুক্ত করে প্রকাশ করা হয়েছে।  বয়স ৩৫ বছর। জাতীয়তা দেখানো হয়েছে বাংলাদেশি। তার জন্মস্থান বাগেরহাটে।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এর আগে জানিয়েছিলেন, আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গতকাল সেই নোটিস জারি হলো। সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে বিলাসী জীবনযাপন ও সোনার দোকান চালু করে এবং সেখানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে গিয়ে সম্প্রতি আলোচনায় উঠে আসেন আরাভ খান। এরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে পড়েন তিনি। বেরিয়ে আসে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যামামলার আসামি তিনি। বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রে আরাভ খানের নাম রবিউল ইসলাম। ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে আরাভ খান নাম ধারণ করে রবিউল দুবাইয়ে পৌঁছান।