- প্রতিটি আইটেমের দাম ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে
- কিছু ডাইনিং দাম বাড়াতে না পারলেও কমিয়েছে খাবারের মান
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল ডাইনিং মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে ভর্তুকি দেয়া
—অধ্যাপক ড. আ আ ম স
আরেফিন সিদ্দিক
নিত্যপণ্যের দামের প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে। ক্যাম্পাসের ডাইনিং বা ক্যান্টিনে রমজানে খরচ বেড়েছে। সাধারণত ডাইনিংয়ে ভাতের সঙ্গে মাছ, মুরগি, ডিম ও সবজির আইটেম থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ডাইনিংয়ের খবর নিয়ে জানা যায়, রমজানের শুরু থেকে প্রতিটি খাবারের আইটেমের দাম ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিছু হলের ডাইনিং কর্তৃপক্ষ দাম বাড়াতে না পেরে কমিয়েছে খাবারের মান। দাম বাড়ানো ও নিম্নমানের খাবারে শিক্ষার্থীদের মাঝে রয়েছে চরম অসন্তোষ। আয়-ব্যয়ের চরম টানাপড়েনে আছেন শিক্ষার্থীরা।
ডাইনিং মালিকরা জানিয়েছেন, অন্যান্য জিনিসের ব্যয় বৃদ্ধির কারণেই খরচ বাড়াতে হয়েছে। দেশের এ কঠিন মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের খাবারের খরচ বাড়ানোকে ভালো চোখে দেখছেন না শিক্ষাবিদরা। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল ডাইনিং মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে ভর্তুকি দেয়া। সম্প্রতি দেশের ব্রয়লার মুরগি ও সবজির বাজারে রয়েছে আগুন দাম। এছাড়াও এর আগে চাল, তেল, মাছ, ডাল, ডিমসহ সব দ্রব্যের দাম বেড়েছে। ওই সময় ডাইনিংগুলোও বাজারের সঙ্গে দামের সমন্বয় করেছিল। ফের রমজান উপলক্ষে ডাইনিংগুলো দ্বিতীয় দফায় দাম বাড়িয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রমজানের আগের দামের তুলনায় হলগুলোতে খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে। গত এক বছরে দ্বিতীয়বার হলের খাবারের দাম বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার খাবারের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। করোনার আগে হল ভেদে পোলট্রি মুরগির গোশতের প্রতি টুকরা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হতো। করোনার পর সেটি ৪৫ টাকা হয়েছে। আর এবার সেই টুকরার দাম রাখা হচ্ছে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মাছের টুকরার দাম আগে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল। পরে সেটি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা করা হয়েছে। আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গরুর গোশতের দাম আগে ৪০ টাকা থাকলেও পরে সেটি ৬০ টাকা করা হয়। এখন তা ৮০ টাকা। অথচ খাবারের মানে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জহির রায়হান বলেন, যেহেতু রোজা রাখতেই হবে, আর অন্য কোথাও খাওয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই বাধ্য হয়ে এখানে খেতে হচ্ছে। ডিমের দাম কম বলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ডিম শেষ হয়ে যায়। এদিকে ডিম কম রান্না করে ক্যান্টিন মালিক শেষ পর্যন্ত আমাদের গরুর গোশত খেতে বাধ্য করছে। কারণ, এতে তার লাভ বেশি। ঢাবির স্যার এ এফ রহমান হলের ক্যান্টিন মালিক বাবুল মিয়া বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। তাই আমরা বাড়িয়েছি। একদিনের মধ্যে এত দাম কীভাবে বাড়ল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব হলেই খাবারের দাম বাড়িয়েছে। এ ব্যাপারে জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রহিম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি বাজার ভিজিট করেছি। কিছু জিনিসের দাম বাজারেও বেশি। ক্যান্টিনে যারা কাজ করে, তাদের নিয়ে বসেছিলাম। আমাদের শিক্ষকরাও বিষয়টি দেখভাল করছে। হলে খাবারের অতিরিক্ত দাম সম্পর্কে গণমাধ্যমকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, খামখেয়ালি ও অবিবেচকের মতো খাবারের দাম বাড়ানো যাবে না। এসবের যৌক্তিকতা আছে কি না, সে বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষরা তথ্য দেবেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছিল।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে আগের দাম রাখতে বাধ্য হয় ডাইনিং মালিকরা। যদিও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আগের চাইতে খাবারের মান কমেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনুপম দেবনাথ বলেন, রমজান উপলক্ষে খাবারের দাম বাড়াতে চেয়েছিল কিন্তু আমাদের প্রতিবাদের মুখে বাড়তি দাম আদায় করতে পারেনি। যার ফলে এখন খাবারের মান কমিয়ে দিয়েছে তারা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতারির দাম মানের তুলনায় বেশি রাখার অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থী। গত বছরের চেয়ে এ বছর ১৫ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে দেখা যায়, রাতের খাবারের মূল্য আগের মতো থাকলেও সাহরিতে রাতের একই খাবার পরিবেশন করা হয়। তবে রাতের তুলনায় সাহরি খাবারে যোগ হয় অতিরিক্ত পাঁচ-দশ টাকা। এতে করে সাধারণ শিক্ষার্থীর ভোগান্তি বাড়ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ের দোকানগুলোতে খাবার খাচ্ছে।
ইবির শিক্ষার্থী এনামুল হক নাবিল বলেন, রমজানের ডাইনিং মালিকদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে গেছি। এই সুযোগে তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছে। অথচ আমাদের ইনকাম বাড়েনি। এছাড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের দাম বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি দ্রব্যর দাম বাড়ায় ডাইনিং মালিকদের দাম বাড়াতে চাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এই মুহূর্তে দাম বাড়তে দেয়া ঠিক হয়নি। তারা ডাইনিং মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারত।