রাসূল সা. প্রতি রোজার জন্য সাহরি খেতেন। সাহরি গ্রহণ করা নবীজির সুন্নত। তিনি সাহাবিদের সাহরি খেতে উৎসাহ দিয়েছেন। সুবহে সাদিকের আগেই খেতেন। সাির খাওয়ার পর ফজরের আজান হওয়ার সময় বেশিক্ষণ বাকি থাকত না। রাসূল সা. বলেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। কেননা, সাহরিতে বরকত রয়েছে।’ (বুখারি-১৯২৩)
রমজান আসার আগেই মহানবী সা. রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রমজানের জন্য বেচঈন থাকতেন। রমজান এলে অন্য কাজ কমিয়ে রমজানকেন্দ্রিক ইবাদত-আমলে মগ্ন হতেন। রমজানে মহানবী সা. যে আমলগুলো করতেন, তা থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
সাহরি : রাসূল সা. প্রতি রোজার জন্য সাহরি খেতেন। সাহরি গ্রহণ করা নবীজির সুন্নত। তিনি সাহাবিদের সাহরি খেতে উৎসাহ দিয়েছেন। সুবহে সাদিকের আগেই সাহরি খেতেন। সাহরি খাওয়ার পর ফজরের আজান হওয়ার সময় বেশিক্ষণ বাকি থাকত না। রাসূল সা. বলেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। কেননা, সাহরিতে বরকত রয়েছে।’ (বুখারি-১৯২৩)
অন্য হাদিসে আছে, সাহাবি জায়েদ বিন সাবিত রা. বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল সা.-এর সঙ্গে সাহরি খাই, এরপর তিনি নামাজের জন্য দাঁড়ান। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ফজরের আজান ও সাহরির মধ্যে কতটুকু ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, ৫০ আয়াত (পাঠ করা) পরিমাণ।’ (বুখারি-১৯২১) ৫০ আয়াত বলতে মধ্যম ধরনের আয়াত, যা পাঠে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে।
ইফতার : ইফতার গ্রহণ করা ইবাদত এবং এটি স্বতন্ত্র সুন্নত। রমজানজুড়ে নবীজির আমল ছিল যথাসময়ে ইফতার করা। যথাসময়ে ইফতারের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। নবীজি সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতেন। ইফতার শেষ করে সাহাবিদের নিয়ে নামাজের জামাতে দাঁড়াতেন। রাসূল সা. বলেন, ‘লোকেরা যত দিন যথাসময়ে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ (বুখারি-১৯৫৭)
কুরআন তিলাওয়াত : রমজানে নবী সা. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘রমজান এলে প্রতি রাতে নবীজি সা.-এর কাছে জিবরাইল আ. আসতেন। তারা একে অপরকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন।’ (বুখারি-৩৫৫৪)
দান-সদকা : রাসূল সা.-এর স্বভাবেই ছিল দান-সদকা। তিনি জীবন কাটিয়েছেন মানুষের উপকারে। নিজে না খেয়ে মানুষকে খাবার দিয়েছেন। নিজের যা ছিল, দুই হাত উজাড় করে দান করেছেন। তিনি রমজানে অধিক পরিমাণে দান করতেন। ইবনে আব্বাস বলেন, ‘নবী সা. ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সবার চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমজানে জিবরাইল আ. যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি রহমতের বাতাসের চেয়ে বেশি ধন-সম্পদ দান করতেন।’ (বুখারি-১৯০২)
তারাবি : রোজা ফরজ হওয়ার বছরে রাসূল সা. প্রথম দিন মসজিদে গিয়ে ২০ রাকাত নামাজ পড়েছিলেন। সাহাবিরা উপস্থিত হয়েছিলেন সেই নামাজে। পরদিন যথানিয়মে পড়েছিলেন। প্রথম দিনের তুলনায় অধিক সাহাবি উপস্থিত হয়েছিলেন। এভাবে তিন দিন চলল। পরে রাসূল সা. আর এলেন না। সাহাবিরা তাকে জিজ্ঞেস করলে বললেন, আমার ভয় হয়, আল্লাহ যদি এ নামাজ ওয়াজিব করে দেন, তাহলে আমার উম্মতের কষ্ট হয়ে যাবে। পরে আবু বকর রা. ও উমর রা. আনুষ্ঠানিকভাবে তারাবির নামাজ পড়তে শুরু করেন। আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি রাসূল সা.-কে রমজান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রমজানে ইমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার আগের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (বুখারি-২০০৮)
তাহাজ্জুদ : রাসূল সা. সবসময় তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। রমজানে তাহাজ্জুদের নামাজে আরও বেশি মগ্ন হয়ে যেতেন। রমজানে কখনো তার তাহাজ্জুদ নামাজ ছুটত না। রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদের জন্য তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন।
আয়েশা রা. বলেন, ‘রাসূল সা. রমজান মাসে ও অন্য সবমাসের রাতে ১১ রাকাতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন। এ চার রাকাত আদায়ের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস কোরো না। এরপর তিন রাকাত আদায় করতেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি বিতর নামাজ আদায়ের আগে ঘুমিয়ে পড়েন? নবী সা. বললেন, আমার চোখ ঘুমায়, আমার অন্তর ঘুমায় না।’ (বুখারি-৩৫৬৯)
ইতেকাফ : ইতেকাফ তাকওয়া অর্জনের বড় মাধ্যম। নির্জনতায় প্রভুকে স্মরণ করার শ্রেষ্ঠ উপায়। প্রভুর দরবারে নিজেকে মেলে ধরার অবারিত সুযোগ। রাসূল সা. রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। যে বছর ইতেকাফ করতে পারেননি, পরের বার ২০ দিন করতেন। আয়েশা রা. বলেন, ‘রাসূল সা. রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। তার মৃত্যু পর্যন্ত এই নিয়ম ছিল। এরপর তার সহধর্মিণীরাও (দিনগুলোতে) ইতেকাফ করতেন।’ (বুখারি- ২০২৬)