- তীব্র খাদ্যঝুঁকিতে ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ
- ছয় মাসে অনাহারীর সংখ্যা দ্বিগুণ
- দিনে এক বেলা কম খায় ৩৭ শতাংশ
- খাদ্য সংকট নেই ৮ শতাংশ মানুষের
দেশে ক্রমাগত বাড়ছে খাদ্যের অভাবে না খেয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা। গত ছয় মাসে এটি বেড়ে দিগুণ হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় কম খাচ্ছেন ৭১ শতাংশ মানুষ। সারা দেশে নিম্ন আয়ের এক হাজার ৬০০ জন মানুষের ওপর জরিপ করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-সানেম। সংস্থাটির জরিপে দেখা যায়, প্রতি পাঁচজনের একজনকে কোনো না কোনো দিন অর্থাভাবে না খেয়ে থাকতে হয়েছে বা হচ্ছে। ছয় মাস আগেও যা ছিল অর্ধেক। সংস্থাটির জরিপে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের ৪৮ শতাংশ মানুষ সরকারের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের সুবিধাভোগী। উত্তরদাতাদের ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ স্বল্পমূল্যে সরকারের খাদ্য বিক্রি কর্মসূচির সুবিধাভোগী।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘কেমন আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ?’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল এবং গরিব মানুষের আয়-ব্যয় চিত্র তুলে ধরেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তিনি জানান, মূল্যস্ফীতি গরিবদের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছে, তাজানতে গত ৯ থেকে ১৮ মার্চ সারা দেশে আটটি বিভাগের প্রতিটিতে ২০০ জন করে মোট এক হাজার ৬০০ নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে অংশ নেয়াদের অর্ধেক বাস করেন বিভাগীয় শহরে, বাকিরা উপজেলার শহরের আশপাশে। এদের মধ্যে ৪৫৬ জন সরকারের খোলাবাজারে খাদ্য বিক্রি কর্মসূচি ওএমএস ও ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির সুবিধাভোগী। বাকিদের সবাই অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকারের কাছ থেকে নগদ টাকা পান।
জরিপে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগ কোনো না কোনো অপ্রতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক। এদের মাসিক আয় ১৪ হাজার টাকার বেশি নয়। এর ছয় মাস আগেও একই ধরনের প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল অন্য নমুনা নিয়ে। জরিপে প্রশ্ন ছিল, টাকার অভাবে অথবা অন্য কোনো কারণে সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয়েছিল কি না? ছয় মাস আগে চালানো জরিপে একই প্রশ্নে অংশগ্রহণকারীদের ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ জানিয়েছিলেন, সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে এমন দিনও গেছে তাদের। এবারের জরিপে পাওয়া গেছে ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ।
সেলিম রায়হান জানান, জরিপে অংশ নেয়া ৭১ দশমিক ১৯ শতাংশ মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় কম খাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ছয় মাস আগে এই হারটি ছিল ৪২ শতাংশ। উত্তর দাতাদের ৩৭ দশমিক ৩৮ শতাংশকে মাঝে মধ্যে এক বেলার খাবার ছাড়া থাকতে হচ্ছে বলেও জানানো হয় জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে। ছয় মাস আগে এই হার ছিল ২০ দশমিক ৩১ শতাংশ। উত্তরদাতাদের ৭৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা নির্দিষ্ট কয়েকটি খাবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ছয় মাস আগে ৫০ শতাংশ এমন উত্তর দিয়েছিলেন। ছয় মাস আগে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ উত্তরদাতা ‘তীব্র খাদ্য ঝুঁকিতে’ থাকার কথা জানিয়েছিলেন।
এবারের উত্তরদাতাদের মধ্যে এই হার পাওয়া গেছে ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আগের জরিপে উঠে এসেছিল, স্বল্প আয়ের ১৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ ক্ষুধা লাগলেও অনেক দেরি করে খেতেন। মার্চে এই হার দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জরিপে অংশ নেয়া ৩৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের বাসায় খাবার শেষ হয়ে গেছে। ছয় মাস আগে ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা এমন কথা জানিয়েছিলেন। সানেম জানতে পেরেছে, গত ছয় মাসে খাদ্য নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন শহরের গরিবরা। শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় বেড়েছে এই ছয় মাসে। গ্রামের উত্তরদাতাদের ২০ শতাংশ ‘তীব্র খাদ্য সংকটের’ কথা জানাচ্ছেন, শহরে এই হারটি ৩০ শতাংশের ঘরে ঠেকেছে।
ছয় মাস আগের জরিপের উত্তরদাতাদের ২৯ শতাংশ বলেছিলেন, খাবারের বিষয়ে তারা বেশ নিরাপদেই আছেন। মার্চের জরিপে তা নেমে এসেছে ৮ শতাংশে। সানেমের জরিপ দলের সদস্য সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির সময়ে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে তা কতটা প্রভাব ফেলছে আমরা সেটাই দেখতে চেয়েছি। গত ছয় মাসে তাদের আয় না বাড়লেও ব্যয় কী হারে বেড়েছে সেটাই আমরা দেখতে পেলাম। জীবনযাপন করতে এ ধরনের মানুষজন ক্ষুদ্রঋণসহ বিভিন্ন মাইক্রো ক্রেডিট ফার্ম থেকে ঋণ নিচ্ছে। এভাবে নতুন করে ঋণের দুষ্টু চক্রে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।’