পৃথিবীর নানা প্রান্তে কত অদ্ভুত ঘটনাই না ঘটে। তার কতগুলোরই বা খোঁজ রাখি আমরা? ঠিক যেমন হয়তো অনেকেই জানেন না আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার এক গ্রামের কথা। এটি এমন এক গ্রাম, যেখানে বাস করতে পারেন না কোনো পুরুষ। গ্রামের নাম উমোজা। সেখানে কোনো পুরুষ নেই। সবাই নারী। তাদের সাথে সেখানে থাকে একদম ছোট শিশুরা।
এমন পুরুষবর্জিত গ্রাম তৈরির পেছনে রয়েছে খুবই কষ্টের কাহিনী। শোনা যায়, দেশটি যখন ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিল, সেই সময়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের হাতে অনেক নারী ধর্ষিত হন। সেই সময় ধর্ষণের শিকার ১৫ জন নারীকে নিয়ে এই গ্রামের যাত্রা শুরু হয়। সেটি ছিল ১৯৯০ সাল। তারপর থেকেই গ্রামের সবাই ঠিক করেন, এখানে পুরুষের ঢোকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।
উমোজা সোয়াহিলি ভাষার শব্দ। অর্থ একতা। এখন এই গ্রামে নির্যাতনের শিকার সব বয়সি নারীদের আশ্রয় দেয়া হয়। এদের মধ্যে কেউ হয়তো ধর্ষণের শিকার, কেউ বাল্যবিয়ের শিকার, কেউ পারিবারিক সহিংসতার শিকার। এই গ্রামের নারীরা নিজেদের জন্য একটি অর্থনীতি তৈরি করেছেন। এখানকার নারী ও শিশুরা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য নিয়মিত আয় করেন। শিশুদের মধ্যে, ছেলেদের বয়স ১৮ বছর হলে, তাদের গ্রাম ছেড়ে যেতে হয়।
গ্রামের দলনেতারা নদী থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি ক্যাম্প পরিচালনা করেন। সেখানে পর্যটকরা আসেন। এদের মধ্যে অনেকেই আশপাশের গ্রামসহ উমোজাতেও ঘুরতে আসেন। বাইরের যে কাউকে উমোজাতে প্রবেশ করতে হলে নির্দিষ্ট একটি ফি দিতে হয়। এ ছাড়া এই গ্রামের নারীরা রঙিন পুতির নেকলেস, চুড়ি এবং অন্যান্য গহনা তৈরি করেন পর্যটকদের কাছে বিক্রির জন্য। উমোজা গ্রামের নারীরা নিজেদের জমিতে একটি স্কুলও তৈরি করেছেন।
গ্রামটি আশেপাশের গ্রামের মেয়েদের জন্যও উন্মুক্ত। এই গ্রামের নারীরা গ্রামের বাইরে যান না তা নয়। তারা আশেপাশের গ্রাম, বাজার, স্কুলে যায়। গ্রামে পুরুষ না থাকলেও নিজেদের মতোই জীবন ধারণ করছে তারা। আবার প্রতি বছর কেউ না কেউ সন্তানের জন্ম দিচ্ছে। কিন্তু তারপরও তারা নিজেদেরকে জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়ও তৈরি করতে পেরেছে যেখানে তারা সম্মানের জীবনযাপন করতে পারে। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস