ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় ব্যবসায়ীরা

মো. নাঈমুল হক প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৩, ০২:২৩ এএম
ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় ব্যবসায়ীরা
  • তিন বছর ধরে লোকসানে অধিকাংশ ব্যবসায়ী
  • দাম বৃদ্ধির আশঙ্কায় অগ্রিম কেনাকাটায় ক্রেতারা
  • রোজার শুরুতে জমে উঠেছে মার্কেটগুলো
  • গতবারের চেয়ে কাপড়ের দাম ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে
  • বিগত সময়ের ঘাটতি পোষানোর সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ী নেতারা

 করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে গত তিন বছর ভালো কাটেনি  পোশাক ব্যবসায়ীদের। এর মধ্যে অনেকে  লোকসানে পড়ে ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। যারা টিকে আছেন, তাদের অধিকাংশই লোকসানে আছেন। বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে এ বছর ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। এবার রমজানের শুরু থেকে কেনাকাটা বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে ঈদ বস্ত্রমেলা ইতোমধ্যে জমে উঠেছে। ক্রেতাদের অনেকেই দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আগেই কিনে রাখছেন ঈদপোশাক। যদিও ঈদের এখনো বেশ বাকি। গতবারের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বেশি দামে ক্রয়, মূল্যস্ফীতি, নানান ব্যয়ে দাম বাড়ার কথা জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী নেতারা এবারের ঈদবাজারকে ক্ষতি পোষানোর মৌসুম হিসেবে দেখছেন।

রাজধানীর ইসলামপুর, চকবাজার, ওয়ারী,  গুলিস্তান ও নিউমার্কেটের বাজারগুলো সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মার্কেটগুলোতে ঈদবাজারের কেনাকাটা জমে উঠেছে। মার্কেটগুলোয় পাঞ্জাবি, থ্রিপিস ও গজকাপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও শার্ট, টি-শার্টও ভালো বিক্রি হচ্ছে। লুঙ্গি ও প্যান্টের বাজারে ক্রেতা কম ছিল। মহিলাদের শাড়ি, লেহেঙ্গা ও গহনার বাজারে লক্ষ্যণীয় মাত্রায় উপস্থিতি ছিল। বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য পোশাকও। চিরায়ত নিয়মে ক্রেতাদের ডাকছেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতাদের হাঁকডাকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন ক্রেতারা। অসচেতন ক্রেতারা কম দামের পোশাক কিনছেন বেশি দামে। দামের ক্ষেত্রে অনড় ব্যবসায়ীরা। গতবারের চেয়ে প্রতি পিস পাঞ্জাবির সর্বনিম্ন দাম ১০০ টাকা বেড়েছে। এক হাজার টাকার পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়।গজকাপড়ের দামও এ বছর বেড়েছে। ৭০ টাকার কাপড় বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। 

এছাড়া ১১০ টাকার গজকাপড় এখন ১৪০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা। ৭০০ টাকার থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায়। ১৫০০ টাকার কাপড় ২২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে। একইভাবে সবগুলো পণ্যই ২০২২-এর তুলনায় বেশি দামে কিনছেন ক্রেতারা। ইসলামপুরে কেনাকাটা করতে আসা শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, ঈদ উপলক্ষে সব কাপড়ের দাম স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ঈদে কাপড় না কিনে তো পারা যায় না। তাই আগে থেকেই একটি পাঞ্জাবি আর কয়েকটি শার্ট কিনে রেখেছি। গতবারের ৭০০ টাকার পাঞ্জাবি এবার এক হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। ওয়ারীর ফিক্সড প্রাইসের দোকানগুলোয় নারী ক্রেতার উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। অগ্রিম কেনাকাটার ব্যাপারে সায়মা আক্তার বলেন, প্রতি বছর এখান থেকেই কেনাকাটা করি। এবার বাজার কেমন দেখতে এলাম। পছন্দ হলে কেনার ইচ্ছে আছে। দামের ব্যাপারে বলেন, এবার দাম বেশি মনে হচ্ছে। আগে ১৫০০ টাকার থ্রিপিস এবার ১৮০০ টাকা লেখা।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, বিভিন্ন কারণে এখন ডলারের বাড়তি দাম। কাপড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত সবকিছুর দাম বেড়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ উৎপাদন খরচ তো রয়েছেই। সে কারণে পাইকারদের কাছ থেকে আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া যাতায়াত খরচ,  দোকান ভাড়া ও কর্মচারীর বেতনও বেড়েছে। এসব হিসাবের পর আমাদের আয় করতে হয়। বেশি দামে বিক্রি না করলে আমরা পোষাব কীভাবে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, দেশে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। কী কারণে বেড়েছে, তা আপনারা জানেন। গত তিন বছর কাপড় ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই লোকসানে ছিলেন। অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। করোনায় বিধিনিষেধের কারণে নতুন কাপড় কেনায় ক্রেতাদের একটা আতঙ্ক ছিল। এবার আর সে ধরনের ভয় না থাকায় ক্রেতারা কাপড় কিনছেন। আশা করছি ব্যবসায়ীরা বিগত সময়ের ঘাটতি এবার পোষাতে পারবেন।