আওয়ামী লীগ সব সময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত
—কামরুল ইসলাম
আ.লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি
—খন্দকার মোশাররফ
আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না
—বদিউল আলম মজুমদার
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এরপর ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। ওই অধিবেশন ২৬ কার্যদিবস চলার পর ১১ মার্চ শেষ হয়। সংবিধানের ১২৩ (৩) (ক) অনুযায়ী, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন চাইলে সংবিধান অনুসারে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে যেকোনো দিন ভোটের তারিখ রেখে তফসিল ঘোষণা করতে পারে।
কিন্তু গত ৩০ মার্চ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নির্বাচন কমিশনের মাসিক সমন্বয় সভায় অংশ নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাতে কর্মকর্তারা আগাম নির্বাচনের ইঙ্গিত পেয়েছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচন আদৌ হবে কি-না, হলে এতে কার লাভ কার ক্ষতি এ নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে তারা সব সময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আর রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলছে তারা এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না। আর নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
সংবিধানের বাধ্যবাধকতার আলোকে নির্বাচন গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলে আসছিলেন। তফসিলের জন্য চলতি বছরের নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহকে মাথায় রেখে কমিশন এগোচ্ছিল এমনটিই সবারজানা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার কাজী হাবিবুল আউয়াল ইসির মাসিক সমন্বয় সভায় অংশ নিয়ে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের যেকোনো সময় জাতীয় নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দেন। ওই দিন তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সংবিধানে ওই সময়ের আগেও নির্বাচন হতে পারে তার প্রভিশন রয়েছে।
সংবিধানকে সামনে রেখেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগে ভোট গ্রহণের দরকার হলেও যেন সব ধরনের প্রস্তুতি থাকে সেই নির্দেশনাও দেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। ইসি কর্মকর্তাদের সিইসি যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাতে কমিশন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। তা ছাড়া সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানে আগাম নির্বাচনের বিধানও আছে। তবে সংসদ ভেঙে আগাম নির্বাচন দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য উপদেশ দেবেন। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর উপদেশক্রমে সংসদ ভেঙে দিতে পারেন। সংসদ ভেঙে দেয়া হলেও নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ বহাল রাখতে পারবেন।
এ বিষয়ে আমার সংবাদের পক্ষ থেকে কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর অন্যতম সমস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগাম নির্বাচনের বিষয়ে তার জানা নেই। সিইসি আগাম নির্বাচন নিয়ে যা বলেছেন তা তার নলেজে নেই উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকে। আর সংবিধানের আলোকে যখনই নির্বাচন হবে আওয়ামী লীগ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে তারা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। সেটি আগাম নির্বাচন হোক আর নির্ধারিত সময়েই হোক।’
আমার সংবাদের এই প্রতিবেদককে তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বুঝতে পেয়েছে তাদের সময় শেষ হয়ে গেছে। সে কারণে তারা নানা কৌশল করছে।’ একই বিষয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।’ তিনি বলেন, ‘কমিশনের কর্মকর্তাদের সিইসি যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাতে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগাম নির্বাচন দেয়া ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থের অনুকূলে। তাই আগাম নির্বাচন হয়ে যেতে পারে সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।’