- অভিভাবকদের কাছে মূল্যায়ন পদ্ধতি অস্পষ্ট
- পূর্বের পরীক্ষা পদ্ধতিকে ভালো মনে করছেন তারা
- টিউশনের জন্য অভিভাবকরা ছুটছেন শিক্ষকদের কাছে
নতুন শিক্ষাক্রমে আমাদের শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন আসবে
—প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান, সদস্য, এনসিটিবি
কারিকুলাম বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের তৎপরতা বাড়াতে হবে
—ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ
শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, মুখস্থনির্ভরতা ও বাড়ির কাজের পরিবর্তে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের বিকাশের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। ক্লাসের পড়া আয়ত্তে আনা, হাতে-কলমে শেখা এবং অন্যান্য বিষয়ে পারদর্শিতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে নতুন এই কারিকুলামে। এ বছর থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু তিন মাস পরও অভিভাবকরা এখনো বুঝতে পারছেন না নতুন শিক্ষাক্রম ও এর মূল্যায়ন পদ্ধতি। তারা এখনো পুরোনো গতানুগতিক পরীক্ষাকে সন্তানদের জন্য ভালো মনে করছেন। দিশা না পেয়ে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য অনেক অভিভাবক ছুটছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে। অনেকে পাঠ্যবইয়ের সহায়ক বই কেনা নিয়ে আছেন দোটানায়। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, নতুন কারিকুলামে আমাদের সন্তানদের পড়াশোনা কমে গেছে। পরীক্ষা ছাড়া কীভাবে ওরা পড়াশোনা করবে? এ ব্যাপারে এনসিটিবি বলছে, যে কোনো নতুন বিষয় বুুঝতে সময় লাগে। নতুন কারিকুলামে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের তৎপরতা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।
মুগদা আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবক জাহানারা বেগম বলেন, আমার ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। নতুন সিস্টেম কী এলো? এখন তো পরীক্ষাহবে না। পরীক্ষা না হলে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে কী করে! আগে আমরা পরীক্ষা দিয়েছি, পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করতাম। ও তো এখন পড়াশোনাই করতে চায় না। সব অভিভাবককে দেখছি স্কুলের শিক্ষকদের কাছে পড়তে দিচ্ছেন। তাই আমিও পাঠিয়েছি। কী পড়ছে? কিছুই বুঝতে পারছি না।
চট্টগ্রামের বন্দর স্কুলের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফয়েজ আহমেদ বলেন, নতুন কারিকুলাম বোঝার জন্য সহায়ক বই কিনতে চেয়েছি। কিন্তু অনেকে সহায়ক বই কিনতে নিষেধ করছেন। বাচ্চাদের কী পড়াব— সেটাই বুঝতে পারছি না। নতুন বইগুলোও কেমন এলোমেলো লাগছে। নতুন কারিকুলাম প্রথম শ্রেণি থেকে ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা যেত।
নতুন কারিকুলামে ধারণা সুস্পষ্ট করার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, নতুন শিক্ষা কারিকুলাম হওয়ায় সবকিছু ম্যানেজ করতে আমাদের কিছু সময় লাগছে। যে কোনো নতুন কাজেই এরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বলেছি, আপাতত হাতে হাতে মূল্যায়ন করার জন্য। আগামীতে সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমন্বিত মূল্যায়নের জন্য আমরা অ্যাপস তৈরি করছি। এর দ্বারা মূল্যায়ন শুরু হতে বছরখানেক সময় লাগবে। ওই অ্যাপসে সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর আপডেট তথ্য থাকবে। অ্যাপসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অবস্থা জানা যাবে। এই কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের দক্ষতার আলোকে মূল্যায়ন করা হবে।
এর মধ্যে এলিমেন্টারি, সেকেন্ডারি, এক্সপার্ট— এ তিনটি পর্যায় থাকবে। বছর শেষে শিক্ষকদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা দেখা হবে। শিক্ষার্থী কোনো শ্রেণির বইয়ে অধিকাংশ অধ্যায়ে এলিমেন্টারি পর্যায়ে থাকলে তাকে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা যাবে না। নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশংসা করে এই কর্মকর্তা বলেন, এর ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষকের কাছে নম্বরের জন্য প্রাইভেট পড়তে হবে না। রোল বা পরীক্ষার চিন্তা না থাকায় ভালো রেজাল্টের জন্য গতানুগতিক অসুস্থ প্রতিযোগিতাও বন্ধ হবে।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা না থাকা ইতিবাচক দিক। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য পূর্বে বিভিন্ন অন্যায় পন্থা অবলম্বন করত; এখন আর সেটা থাকবে না। খারাপ আর ভালো রেজাল্টের চিন্তা না থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হীনম্মন্যতা কাজ করবে না। তবে এই শিক্ষাপদ্ধতি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের বিস্তর চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে তদারকি বাড়াতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে কী না— এটা ভালোভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই শিক্ষাপদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে পারলে প্রকৃত সৃজনশীল শিক্ষার সুফল ভোগ করা যাবে।