সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে —মির্জা ফখরুল
সরকার সোজা পথে না এলে গণঅভ্যুত্থানে পতন —মোশাররফ
আ.লীগ জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলন করলে জায়েজ —মঈন খান
নিউ সুপার মার্কেটসহ রাজধানীতে সামপ্রতিক সময়ে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোকে ‘রহস্যজনক’ বলেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, রাজধানীসহ দেশের বড় বড় মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনাগুলো খুবই রহস্যজনক। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণের মনে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর উদাসীনতা, নির্লিপ্ততা ও জবাবদিহিহীনতার কারণে এ ধরনের মর্মস্পর্শী ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটছে— যা কোনোক্রমেই কাম্য হতে পারে না। আমরা রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডসহ সব অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি।
একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য সরকারের কাজে দাবি জানান তিনি। ভোরে নিউ মার্কেটের কাছে নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে রাজধানীর বঙ্গবাজারে স্মরণকালের ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড এবং গত বৃহস্পতিবার নবাবপুর মার্কেটে আগুন লাগার কয়েক দিনের মাথায় আজ আবারও নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় প্রমাণিত যে, আওয়ামী অবৈধ সরকার কেবল রাষ্ট্রক্ষমতা রক্ষা করতেই ব্যস্ত, অগ্নিকাণ্ড রোধসহ জনহিতকর কাজে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।’
ফখরুল বলেন, দেশের বড় বড় মার্কেটে সংঘটিত ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষ হতাহত ও ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী সরকারের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এসব অগ্নিকাণ্ড নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠিত হলেও তা কখনো আলোর মুখ দেখে না। এ সরকারের আমলে মানুষের জানমালের কোনো মূল্য নেই। একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও সরকার তা রোধ করতে পারছে না।
এদিকে গতকাল দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমানে আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অনুগত ব্যবসায়ী, আমলা ও নেতাকর্মীরা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলছে, কর্তাদের বিরুদ্ধে দুদক কোনো পদক্ষেপ নেয় না। জনগণকে বিভ্রান্ত ও আন্দোলন দমন করতে নেতাদের বিরুদ্ধে আবারো চক্রান্ত শুরু করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। আর এই চক্রান্তের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে দুদক।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান ব্যর্থ, দুর্নীতিবাজ, ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির শিকার স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবার এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
সরকার সোজা পথে না এলে গণঅভ্যুত্থানে পতন —মোশাররফ : দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র নেই মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আগামীতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন হতে হবে। এটি আজকে বিশ্বও বলছে। সরকার যদি সোজা পথে না আসে তবে অতীতের মতো গণঅভ্যুত্থানে তাদের পতন ঘটবে। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপার আ স ম মেজবাহউদ্দিন, ডা. আওলাদ হোসেন শিল্পী ও যুব জাগপার সভাপতি মীর আমীর হোসেন আমু প্রমুখ। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকারের লোকেরা সিন্ডিকেট করে বিদেশে টাকা পাচার করে প্রাসাদ বানাচ্ছে। তারা সব কিছুতেই সিন্ডিকেট করছে।
আজকে বিদেশি গবেষণা সংস্থা বলছে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে। দেশে আইনের শাসন নেই, সুশাসন নেই, মানবাধিকার নেই। যে কারণে আমেরিকা বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ প্রধানের নামে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সুতরাং দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই গায়ের জোরের সরকারকে হটানোর কোনো বিকল্প নেই। সে জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। কোনোমতেই এই সরকারের অধীনে আমরা বিএনপি ও সমমনা যারা আছে সবাই একবাক্যে বলেছে নির্বাচনে যাব না। তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে ভোট হলে কী হবে তা সবারই জানা। তারা আবারও ইভিএমে ভোট দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের আন্দোলন ও জনগণের দাবির মুখে নির্বাচন কমিশন ইভিএম বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।
আ.লীগ জামায়াতের সাথে আন্দোলন করলে জায়েজ —মঈন খান : আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলন করলে তা জায়েজ, আর বিএনপি করলে তা অন্যায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খান। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে স্বাধীনতা ঐক্য পরিষদের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে ঈদ উপহার বিতরণ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ২০০১ সালের আগে আমাদের জামাতের সাথে একটি নির্বাচনি জোট ছিল। সেটি ছিল অংকের বিষয়। বিএনপি জাতীয়তাবাদের রাজনীতি করে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের সব শ্রেণির মানুষ ধর্মবর্ণ উপজাতি বাঙালি সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয়তাবাদের রাজনীতি গঠন করেছিলেন। তিনি বিশ্বের বুকে সেটিই প্রতিষ্ঠিত করেছিল এবং আমরা আজকে সেটি পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের জন্য বাংলাদেশের মানুষ নয়, বাংলাদেশের মানুষের জন্য সংবিধান রচিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ যা চাইবে সেভাবে সংবিধান তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ সংবিধান পরিবর্তন করতে চাইলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। সংবিধান কোনো বাইবেল নয়। মানুষের কল্যাণের জন্যই সংবিধান সৃষ্টি হয়েছিল এর সংবিধান মারাত্মকভাবে পরিবর্তন করছিল এই আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ কি ভুলে গেছে? তারা সংসদের ভেতরে ১১ মিনিটে সংবিধান পরিবর্তন করে বাকশাল কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগ কোনোদিন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।