- গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় লাভ-ক্ষতি
গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব হয়নি —অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক, জবিশিস
গুচ্ছের সমস্যা সমাধানে শিক্ষকদের কাজ করা প্রয়োজন —অধ্যাপক ড. মাহফুজুল ইসলাম, ভিসি, বিডিইউ
সবাইকে গুচ্ছে রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব —ড. মো. আলমগীর, সদস্য, ইউজিসি
শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার ভোগান্তি লাগবের উদ্দেশে সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গুচ্ছপদ্ধতি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু দুবারেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে কাটেনি ভর্তি বিড়ম্বনা। তাই শিক্ষকদের মধ্যে গুচ্ছ নিয়ে চলছে লাভ-লসের হিসাব, দেখা দিয়েছে বিতর্ক। ইতোমধ্যে গুচ্ছের অন্যতম উদ্যোক্তা ও সমন্বয়ক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) গুচ্ছ ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)।
সম্প্রতি গুচ্ছের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় জবির এক শিক্ষককে মারধরও করা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোপনে ও প্রকাশ্য গুচ্ছের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। উপাচার্যরা আশঙ্কা করছেন, গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইউজিসির রোষানলে পড়বে। ইউজিসি জানায়, গুচ্ছ থেকে যেন কেউ বেরিয়ে যেতে না পারে সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গুচ্ছে না থাকার পক্ষে শিক্ষকদের নানা যুক্তি রয়েছে। তারা বলছে, গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব হবে না। গুচ্ছের অধীনে নিয়ে আাামাদের বি ক্যাটারির বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। এর অধীনে থেকে আমরা স্বকীয়তা হারাচ্ছি।
এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লুতফুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, গুচ্ছে থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা প্রথম থেকে রাজি ছিলেন না। কিন্তু বশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একান্ত চাওয়ায় দুই বছর গুচ্ছে ছিলাম। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব তো হয়নি, উল্টো বেড়েছে। গুচ্ছের অধীনে রেখে আমাদের বি ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয় ভাবা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সবাইকে কেন গুচ্ছের অধীনে আনতে পারছে না।
গুচ্ছের পক্ষাবলম্বনকারী শিক্ষকরা বলেন, বর্তমানে গুচ্ছের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও থাকার ভোগান্তি দূর হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার আর্থিক খরচও অনেক কমেছে। গুচ্ছে থেকেই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, গুচ্ছে কম টাকা পাওয়ায় শিক্ষকরা এখানে থাকতে চাচ্ছে না। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিডিইউ) ভিসি অধ্যাপক ড. মাহফুজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, আগে অল্প বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় গুচ্ছ পরীক্ষার প্রয়োজন ছিল না। এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা পঞ্চাশের কাছাকাছি। ভোগান্তি ছাড়াও এই ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে অনেক টাকা খরচ হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে বড় অংকের অর্থ পান। গুচ্ছে থাকলে এই ভাগটি অনেক কমে যায়। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তাদের কথা খেয়াল রাখা প্রয়োজন। গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু এর থেকে বের হওয়া সমাধান নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গুচ্ছের সমস্যা সমাধানে কাজ করা প্রয়োজন।
তবে এ ব্যাপারে ইবি শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি তপন কুমার জোদ্দার আমার সংবাদকে বলেন, একজন শিক্ষার্থী তার যোগ্যতার আলোকে সম্ভাব্য চার-পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে থাকে। এর বেশি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেন না। গুচ্ছ পদ্ধতিতে মাইগ্রেসন হলেও শিক্ষার্থীকে দুই-তিন প্রতিষ্ঠানে দৌড়াতে হয়। কোন কারণে গুচ্ছের একটা পরীক্ষা খারাপ করেন বা না দিতে পারেন। তাহলে তো তার একটি বছরই নষ্ট হয়ে গেল। গুচ্ছই যদি সহজ সমাধান হয়, তাহলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কেন গুচ্ছের অধীনে আনা হচ্ছে না?
এ ছাড়া গুচ্ছের অধীনে না থাকার জন্য টাকার বিষয়ে যে কথা বলা হয়েছে সেটি সঠিক নয়। বরং গুচ্ছের অধীনে থাকলে আমরা টাকা বেশি পাই। জবি ও ইবির শিক্ষকরা গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা গুচ্ছেই থাকতে চান। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভিসি আমার সংবাদকে বলেন, গুচ্ছের যে সমস্যা ছিল সেটি সমাধানের জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। কিন্তু এরপরও শিক্ষকরা সেটি মানতে চান না। তারা বেরিয়ে যেতে চান। গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফল ভালো হবে না। ইতোমধ্যে আমাদের অর্ধ কোটি টাকার কাজ ইউজিসি আটকে দিয়েছে। আগামীতে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের পড়তে হবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. মো. আলমগীর আমার সংবাদকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেচ্ছায় গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। গুচ্ছের সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা কাজ করেছি। এবার আশা করি দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় সমস্যা থাকবে না। আগামীতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের একসাথে পরীক্ষার বিষয়েও সবাই সম্মত হয়েছে। এরপরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যেতে চায়। আমরা চাই, ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে এ বছর গুচ্ছের পরীক্ষা হোক। গুচ্ছ থেকে কেউ যাতে বের না হতে পারে সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।