সাত মাসে দুই দফা সারের মূল্যবৃদ্ধি

উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৩, ১২:৩১ এএম
উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা
  • বিঘাপ্রতি বাড়তি খরচ ৬৫৫ টাকা
  • পণ্যমূল্য আরও বৃদ্ধির শঙ্কা

ভর্তুকি ব্যয় কমবে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা
উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হতে পারেন কৃষক, বিঘ্নিত হতে পারে খাদ্যনিরাপত্তা
—ড. জাহাঙ্গীর আলম খান, কৃষি অর্থনীতিবিদ

কৃষক দুশ্চিন্তায় পড়লেও উৎপাদনে
প্রভাব পড়বে না
—বাদল চন্দ্র বিশ্বাস
মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

কৃষিশ্রমিকের মজুরি বেড়েছে, সেচ কাজে ব্যবহূত জ্বালানি মূল্য ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষক যখন উৎপাদন ব্যয় নিয়ে টেনশনে, তখন সেই টেনশনকে উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছে হঠাৎ করে সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে। কারণ, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যমূল্য বাজারে বেশি দামে বিক্রি হলেও কৃষক সেই মূল্য পাচ্ছেন না। মাঠ থেকে ফসল তোলার পর কয়েক হাত বদল হয়ে সেটি ভোক্তার কাছে পৌঁছায়। অর্থাৎ কৃষক তার শ্রম, সার, ওষুধ প্রয়োগ ও শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করে ন্যায্যমূল্য নিয়ে টেনশনে থাকেন। আর এরই মধ্যে কেজিপ্রতি ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সারের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা। এর আগে গত অক্টোবর মাসে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানো হয়েছিল ছয় টাকা। অর্থাৎ সাত মাসের ব্যবধানে সারের মূল্য দুবার বৃদ্ধি পেল। অবশ্য মূল্যবৃদ্ধির মাত্র এক সপ্তাহ আগে কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন সরকার সারের মূল্য বাড়াবে না। কিন্তু সেই কথা শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকেনি। হঠাৎ সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকের চিন্তা বেড়েছে। কৃষি গবেষকরা বলছেন, সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। আর সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের চিন্তা বাড়ছে স্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এতে উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর প্রান্তিক কৃষকরা বলছেন, তাদের সামগ্রিক ব্যয় বেড়ে যাবে ৩০ শতাংশেরও বেশি। কারণ, হিসেবে তারা জানান, সারের মূল্য কেজি পাঁচ টাকা বাড়ালে, ভর্তুকি নেই এমন সারের মূল্যও বাড়বে, সেই সঙ্গে নানা ধরনের ওষুধ দিতে হয় ফসল ভালো রাখতে। সে সব ওষুধের মূল্যও বাড়বে। সামগ্রিকভাবে শতকরা ৩০ শতাংশের বেশি বাড়বে উৎপাদন ব্যয়। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারের দাম দফায় দফায় বাড়ালে ধানসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। অন্যদিকে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সব ভোক্তার ওপর। গত ৩ এপ্রিল সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা হয়। ওই সভা শেষে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কিছুতেই তিনি সারের দাম বাড়াবেন না। সরকারের এমন মনোভাবের এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে সারের মূল্যবৃদ্ধির খবর এলো এবং সেই বর্ধিত মূল্য কার্যকর শুরু হয়েছে গত ১০ এপ্রিল থেকে। সারের মূল্যবৃদ্ধি হবে না— এমন বক্তব্য শুনে আশ্বস্ত হওয়া কৃষকরা নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির খবরে আহত হন। তারা বাড়তি ব্যয়ের চাপে পড়েন। অতিরিক্ত মূল্যে চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদন করে মূলধন ও মুনাফা ঘরে তোলা নিয়েও শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন প্রান্তিক সব কৃষক। শত শত বিঘা জমিতে উৎপাদনে নিয়োজিত ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ওয়াছিউর রহমান খসরুর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, সারের মূল্যবৃদ্ধি কৃষি উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। আগের মূল্যে এক বস্তা সার সরকার নির্ধারিত ১১শ টাকা হলেও ডিলারদের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকা বেশি দিয়ে। নতুন রেটে আরও ২৫০ টাকা বাড়তি গুনতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে ওষুধের মূল্য। তাছাড়া কৃষি শ্রমিকের মূল্য ছিল ২৫০ টাকা। সেই একই শ্রমিকের মূল্য এখন কমপক্ষে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ কৃষি উপকরণসহ সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির কারণে সামগ্রিকভাবে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। কিন্তু উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ারও নিশ্চয়তা থাকে না। সরকারি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই তরুণ উদ্যোক্তা জানান, এ বছর ভুট্টা চাষ করতে গিয়ে ১৩ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে তার। প্রাকৃতিক দুর্যোগের নানা ঝুঁকি নিয়ে কৃষক মাঠে ফলনের উদ্যোগ নেয়। এই অবস্থায় কৃষকের জন্য চাষাবাদ সহজ করার উপায় বের করতে সরকারকে অনুরোধ করেন তিনি। 

কৃষি অর্থনীতিবিদ ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের পরিচালক এবং ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের সাবেক উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলম খান এ প্রতিবেদককে বলেন, রাসায়নিক সার শস্য উৎপাদনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এর মূল্যবৃদ্ধি পেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। অতএব, যৌক্তিক পর্যায়ে এর মূল্য নির্ধারণ করা উচিত। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কমে গেলে দ্রুত এবং অভ্যন্তরীণ মূল্যের নিম্নমুখী সমন্বয় করা উচিত। ইতোমধ্যে রাসায়নিকের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধির প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। কারণ জৈব সার মাটির উর্বরতা শক্তি কমিয়ে দেয়। মাটির ক্ষয় প্রক্রিয়া পুনর্গঠনে সহায়তা করে। এ বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস পাবে। মূল্যে স্থিতিশীলতা আসবে। ড. জাহাঙ্গীর আলম খান আমার সংবাদকে আরও বলেন, আগামী দিনগুলোতে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করার জন্যও খাদ্যশস্যসহ কৃষির সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি। এমতাবস্থায় সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি করা আত্মঘাতী হতে পারে। তাতে উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হতে পারে কৃষক। বিঘ্নিত হতে পারে খাদ্যনিরাপত্তা। এক পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ সাল থেকে ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত মোট এক লাখ ১৯ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। এর অধিকাংশই আচ্ছাদিত ভর্তুকি। রাসায়নিক সারে প্রদত্ত এই ভর্তুকির সুবিধা যারা বেশি ভোগ করেন তারা মাঝারি ও বড় কৃষক। ছোট কৃষকদের শরিকানা এতে খুবই কম। অথচ ভর্তুকি এদের জন্যই বেশি দরকার। এমতাবস্থায় আমাদের প্রয়োজন হলো আচ্ছাদিত ভর্তুকির পাশাপাশি গোষ্ঠীকেন্দ্রিক বাছাইকৃত ভর্তুকি। ঢালাওভাবে সবার হাতে সমভাবে কৃষি ভর্তুকির সব টাকা তুলে না দিয়ে প্রগ্রেসিভ হারে সরাসরি কৃষকের হাতে ওই ভর্তুকির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা নগদ পৌঁছে দেয়া উচিত। এর জন্য এ সরকারের আমলে করা প্রায় এক কোটি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং প্রায় দেড় কোটি কৃষি উপকরণ কার্ড অথবা প্রস্তাবিত এক কোটি ৮০ লাখ স্মার্টকার্ড কাজে লাগানো যেতে পারে। এ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পরোক্ষভাবে প্রদত্ত আচ্ছাদিত কৃষি ভর্তুকির বিষয়টি খুবই সেকেলে মনে হয়।

এ প্রসঙ্গে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস আমার সংবাদকে বলেন, সারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষক উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে না। কৃষককে পরিমিত ব্যবহারের ওপর আমরা কার্যকরী প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। যাতে কৃষক অতিরিক্ত সার ব্যবহার না করেন। পরিমিত সার ব্যবহার এবং জৈবসার ব্যবহারে কৃষককে উৎসাহিত করতে আমরা কাজ করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষক চিন্তায় পড়লেও এতে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না।

বিঘা প্রতি বাড়তি খরচ ৬৫৫ টাকা : আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে দেশে ডিলার এবং কৃষকপর্যায়ে ইউরিয়া, টিএসপিসহ বিভিন্ন ধরনের সারের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। আর হঠাৎ এ খবরে দুশ্চিন্তার ছাপ কৃষকের কপালে। সারের দাম বাড়ায় কৃষককে এখন বিঘাপ্রতি বাড়তি খরচ গুনতে হবে ৬৫৫ টাকা। গত ১০ এপ্রিল থেকেই সারের নতুন দাম কার্যকর করার কথা জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকেও পুনর্নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি করার জন্য মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, বৈশ্বিক সংকটের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে স্যারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশে সার আমদানি অব্যাহত রাখা এবং সারের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন মূল্য অনুযায়ী, ডিলার পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ২২ টাকা থেকে ২৭ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

একইভাবে ডিএপি সারের মূল্য ডিলার পর্যায়ে ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১ টাকা করা হয়েছে। টিএসপি সারের মূল্য ডিলার পর্যায়ে ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা এবং কৃষকপর্যায়ে ২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা করা হয়েছে। এমওপি সারের মূল্য ডিলার পর্যায়ে ১৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা এবং কৃষকপর্যায়ে ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে কৃষকের এক বিঘা জমিতে ধান আবাদে সারের জন্য মোট খরচ দুই হাজার ৯৯০ টাকা। এর মধ্যে ৪০ কেজি ইউরিয়া সারে ?কৃষকের খরচ ৮৮০ টাকা, ৩০ কেজি ডিএপি ৪৮০ টাকা, ২৫ কেজি এমওপি ৩২৫ টাকা, ২০ কেজি জিপসাম ৬৭৫ টাকা, তিন কেজি ম্যাগনেসিয়াম ৩০০ টাকা, এক কেজি জিংক ১৮০ টাকা এবং এক কেজি বোরন কিনতে ব্যয় হয় ১৫০ টাকা। তবে দাম বাড়ানোর পর খরচ হবে তিন হাজার ৬৪৫ টাকা। এর মধ্যে ৪০ কেজি ইউরিয়া সার কিনতে কৃষকের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮০ টাকা, ৩০ কেজি ?ডিএপিতে ব্যয় ৬৩০ টাকা, ২৫ কেজি এমওপি ৪৭৫ টাকা, ২০ কেজি জিপসাম ৭৫০ টাকা, তিন কেজি ম্যাগনেসিয়াম ৩৫০ টাকা, এক কেজি জিংক ২১০ টাকা এবং এক কেজি বোরনে ব্যয় হবে ১৫০ টাকা।

পণ্যমূল্য আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা : ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোয় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এতে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কৃষকরা বলছেন, এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি একেবারে কম হওয়ায় সেচের ব্যয় বেড়েছে। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট। এ অবস্থায় সারের দাম বাড়ানোয় তারা চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। সবকিছু মিলে কৃষি খাতে উৎপাদনের খরচ বাড়বে। এর ফলে কৃষকদের একটি অংশ জমির আবাদ কমানোর কথা বলছেন। অর্থনীতিবিদ ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী মৌসুমে চালসহ কৃষিপণ্য এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প পণ্যের দাম বাড়বে। তবে কেউ কেউ বলছেন, উৎপাদন খরচ কিছুটা বাড়লেও খুব বেশি আশঙ্কার কারণ নেই। অবশ্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দাম কিছুটা বৃদ্ধির ফলে কৃষকদের মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া ব্যবহারের প্রবণতা কমবে। অপরদিকে দাম ভালো পেলে কৃষকরা তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

ভর্তুকি ব্যয় কমবে প্রায় সাত হাজার কোটি : সারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব কৃষকের ঘাড়ে চাপবে, যা কৃষককে উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এই দাম বৃদ্ধির কারণে বছরে সারের পেছনে ভর্তুকি ব্যয় বাবদ সরকারের প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে, যে টাকাটা আসবে কৃষকের পকেট থেকে। সারা দেশে বোরো মৌসুমের ধান চাষ চলছে, যা চাল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মৌসুম এবং এই মৌসুমের উৎপাদনের ওপর দেশে সারা বছরের চালের বাজারের স্থিতিশীলতা নির্ভর করে। কৃষক ও কৃষি গবেষকরা বলছেন, বেশিরভাগ স্থানেই বোরো ফসল ধান গঠনের পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে খুব বেশি সারের ব্যবহার নেই। ফলে এই মৌসুমে কৃষকের ওপর চাপ না বাড়লেও ভুট্টা, সবজিসহ মাঠে অন্য যেসব ফসল রয়েছে সেখানে খরচের চাপ বাড়বে। এই মুহূর্তে সারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব না পড়লেও পরবর্তী সব মৌসুমেই এই বাড়তি খরচ কৃষকের ঘাড়ে চাপবে, যা কৃষককে উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর মনে করেন, ‘জাতের ধরন অনুযায়ী বোরো মৌসুমে বিঘাপ্রতি ৩৫-৪০ কেজি ইউরিয়া, ১৩ কেজি টিএসপি, এমওপি ২২ কেজি ও ১২ কেজি ডিএপি দরকার হয়। তবে ধান এখন যে পর্যায়ে আছে সেখানে আর সারের দরকার নেই।’