- বাসরুটে যাত্রীর চাপ বেশি
- শৃঙ্খলা ফিরেছে ট্রেনে
- লঞ্চযাত্রায় স্বস্তিতে যাত্রীরা
- ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনে পথে পথে ঘরমুখো মানুষের ভিড় রয়েছে। ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে বাস, ট্রেন, লঞ্চ সবখানেই যাত্রীর আনাগোনায় পূর্ণ ছিল। তবে এবার বাসযাত্রীর উপস্থিতি বেশি। চাপ সামাল দিতে বাড়তি বাস যুক্ত করছেন বাস মালিকরা। ট্রেনযাত্রায় এবার ফিরেছে শৃঙ্খলা। এবার ট্রেনের শতভাগ সিটের টিকিট অনলাইনে কাটা হচ্ছে। ফলে যাত্রীদের টিকিট বিড়ম্বনা দূর হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে মাঝারি আকারের চাপ থাকলেও সদরঘাটে স্বস্তি ফিরেছে। লঞ্চযাত্রায় মানুষের ভিড় থাকলেও নেই অতিরিক্ত চাপ। এদিকে সরকারি ছুটির দু’তিন দিন আগেই বাড়ি ফিরছেন অনেক চাকরিজীবী। এছাড়াও রমজানের মাঝামাঝিতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটিতে ইতোমধ্যেই অনেক শিক্ষার্থী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন।
গতকাল রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের বাইরে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেলেও স্টেশনে তেমন ভিড় ছিল না। টিকিট দেখানো ছাড়া কাউকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এবার ট্রেনযাত্রায় শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য অগ্রিম শতভাগ সিটের অনলাইন টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। আর ২৫ ভাগ স্ট্যান্ডিং টিকিট রাখা হয়েছে। টিকিট কাটার জন্য স্টেশনের বাইরে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে অনলাইন টিকিটে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। অনলাইনের ব্যবহার না জানায় ট্রেনযাত্রায় ঝামেলায় পড়েছেন তারা। এবার ৭ এপ্রিল বিক্রি হয়েছে ১৭ এপ্রিলের টিকিট। একইভাবে ৮, ৯, ১০ ও ১১ তারিখ বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ তারিখের টিকিট। ট্রেনযাত্রায় স্বস্তির কথা জানিয়ে রাজধানীর সূত্রাপুর থেকে আসা ফয়সাল মাহমুদ বলেন, প্রত্যেকবার ট্রেনে ও স্টেশনে উপচেপড়া মানুষের ভিড় থাকে। এবারের যাত্রা ভালো লাগছে। প্রতিবার প্ল্যাটফর্মে দীর্ঘ ভিড় থাকে। এবার সেরকম ভিড় নেই। যদিও অনলাইনে টিকিট কাটতে কিছু সময় লেগেছে। কিন্তু অন্যবারের মতো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি।
ট্রেনের অনলাইনে টিকিট কাটতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে রহিমা খাতুন নামে একজন বলেন, ‘আমাদের তো নেটওয়ালা মোবাইল নেই। আমরা টিকিট কেমনে কাটুম? আমরা সব সময় ট্রেনে যাই। এবার শুনি ট্রেনের টিকিট নাকি অনলাইনে দিচ্ছে। দোকানে গিয়ে টিকিট কাটতে গেলে দোকানদাররা অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে।’
ঈদযাত্রায় রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দূর যাত্রার অনেক মানুষ ট্রেনে টিকিট কাটতে না পেরে বাসে এসেছেন। স্টেশনে দীর্ঘ লাইনের পর টিকিট পেতে হচ্ছে। বাসের জন্য অনেক যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বাস মালিকরা যাত্রীদের ভিড় দেখে তাৎক্ষণিক বাসের ব্যবস্থা করছেন। যাত্রীচাপ সামাল দিতে পুরোনো ও দুর্বল মানের বাসও রাস্তায় নামাচ্ছেন মালিকরা। দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ বাসরুটে এবার মাঝারি মানের জ্যাম রয়েছে। এছাড়া অন্য রুটগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা জ্যাম থাকলেও দীর্ঘ জ্যাম দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে বগুড়াগামী শাহ আলম বলেন, বাড়িতে যেতে প্রতিবার এরকম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এবারও সেই একই রকম আছে। সম্ভবত ট্রেনের অনেক যাত্রী এবার বাসে যাবেন। এবার অফিস থেকে দুদিনের অগ্রিম ছুটি নিয়েছি। ভাবলাম আগে আগে গেলে জ্যাম কম পড়বে। কিন্তু এখন থেকেই তো মানুষের ভিড় বেশি।
রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় ঈদযাত্রায় স্বস্তিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। পদ্মা সেতু, লঞ্চ মালিকদের একচেটিয়া দাম বৃদ্ধি ও লঞ্চযাত্রার দীর্ঘ ভোগান্তির কারণে দক্ষিণাঞ্চলের যাতায়াতে লঞ্চেযাত্রী কমে গিয়েছিল। অধিকাংশ মানুষই বাসমুখো ছিল। তুলনামূলকভাবে এবার লঞ্চে যাত্রী উপস্থিতি বেড়েছে। লঞ্চগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে। সাধারণ যাত্রীরা জানিয়েছেন, এবার লঞ্চের ভাড়া অতিরিক্ত বাড়ানো হয়নি। লঞ্চের জন্য দীর্ঘ সময়ও অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। দীর্ঘদিন দাঁড়িয়ে থাকা লঞ্চগুলো এখন কাজে লাগাচ্ছেন লঞ্চ মালিকরা।
এ ব্যাপারে রাজধানীর বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ফারিয়া আক্তার বলেন, লঞ্চের মতো আরামের জার্নি আর হয় না। কিন্তু প্রতিবার দীর্ঘ ভোগান্তির কারণে অনেকে এই পথ থেকে বিমুখ হয়েছেন। তেমন ভিড় না থাকায় এখন আমরা সুন্দরভাবে যেতে পারছি। আর এবার ভাড়াও বাড়ানো হয়নি।