- কারণ ছাড়াই দ্বিগুণ পেঁয়াজের দাম
- চিনি নিয়ে ছিনিমিনি, বাড়তি সয়াবিন তেল
- প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনছেন ভোক্তারা
নিত্যপণ্যে দাম ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মাসের ব্যবধানে জরুরি কয়েকটি পণ্যের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। মাছ গোশত সবজি কমবেশি বেড়েছে প্রতিটি পণ্যের দাম। বেড়েছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দামও। কয়েকদফা দাম বাড়িয়েও চিনির বাজার শান্ত করা যায়নি। পণ্যটির দাম আরও অস্থির হয়ে উঠেছে। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় কম বাজার কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা জরুরি। এবার দাম বৃদ্ধির হারে সবচেয়ে এগিয়ে পেঁয়াজ। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছে পণ্যটির দাম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে সরবরাহও অনেকটা স্বাভাবিক। কিন্তু ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি বন্ধ, এই অজুহাতে প্রতিদিনই বাড়ছে সংসারের অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম। বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায় মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
দেশের অন্যতম বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৮ থেকে ৮২ টাকা। অথচ ১৫ দিন আগে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং মাসখানেক আগেও বিক্রি হয়েছিল ৩৫ থেকে ৩৮ টাকায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ায় ভারত থেকে আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। গত ১৫ মার্চ থেকে আমদানি অনুমতিপত্র দিচ্ছে না সরকার। চাহিদার পুরোটা মেটানো হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে। আবার কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। গত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৬ লাখ টন। এ হিসেবে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছে। তারপরও অজানা কারণে পণ্যটির দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, সরবরাহ ও মজুত ঠিক থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এমতাবস্থায় নাভিশ্বাস উঠেছে ভোক্তাদের। শিগগিরই প্রশাসনের নজরদারি বাড়িয়ে পেঁয়াজের দামের লাগাম টানতে হবে। না হলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হবে এবং আরও বাড়তে থাকবে পণ্যটির দাম। যদিও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নামার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘দেশে প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়ছে। আমদানি বন্ধ, এটি একটি অজুহাত। এ ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের যোগসাজশ থাকতে পারে।’
এদিকে দাম বাড়ানোর পরও কাটছে না চিনির সংকট। গত ১১ মে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১৬ টাকা বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি বিক্রি হওয়ার কথা ১২০ টাকায়, আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি দাম প্রতি কেজি ১২৫ টাকা। তবে বিক্রেতারা জানান, চিনির দাম বাড়ানোর ফলে পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও খারাপ হচ্ছে। দাম বৃদ্ধি হলেও সরবরাহ কমে গিয়ে বাজারে চিনির সংকট তৈরি হয়েছে। এর আগে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল ১৮৭ টাকা। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, রমজানের পর মনিটরিং শিথিল হওয়ার পরপরই বাড়তে থাকে প্রতিটি পণ্যের দাম।
রমজানে দুইশ-এর মধ্যে থাকলেও রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম রাখা হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা। এ ছাড়া গত এক মাসে সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একই হারে বেড়েছে সবজির দাম। কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে শাক-সবজির দাম। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। চাহিদা অনুযায়ী সবজি পাচ্ছেন না তারা।
ঊর্ধ্ব মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, সব জিনিসের দাম বেড়েছে। বেড়েছে মানুষের কষ্ট। খেটে খাওয়া মানুষ, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত সবাই বিপদে আছেন। এটাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এখানে ১৭ কোটি মানুষের স্বার্থ জড়িত। কঠোর হস্তে বাজার মনিটরিং করতে হবে। যারা দায়িত্বে আছেন, তারা একজন আরেকজনকে দোষারোপ করছেন। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তাই এবারের বাজেটে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে।