- ১০ জুলাই চট্টগ্রামে যুবদল স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের তারুণ্যের সমাবেশ
- ১৩ দিনের কর্মসূচি শেষে ঘোষণা আসবে ঢাকায় বৃহৎ অবস্থান কর্মসূচির
- এমপি প্রার্থী হতে আগ্রহীদের নিয়ে ঢাকায় সংসদ ভবন ঘেরাওয়ের চিন্তা
পিছু হটার সময় নেই আন্দোলন আরও নতুনভাবে আসছে
—আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি
আমরা এবার বাঁচি আর মরি আন্দোলন থেকে
সরব না
—জয়নাল আবদীন ফারুক
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
সরকার কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না কর্মসূচিতে বাধা অব্যাহত
—শামা ওবায়েদ
সাংগঠনিক সম্পাদক, বিএনপি
নতুন ভিসানীতি নিয়ে ফের উত্তপ্ত রাজনীতি। প্রায় দেড় যুগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিও নিজেদের নতুনভাবে উপস্থাপনে কৌশল ঠিক করছে। মাঠের কর্মসূচিতে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণে শক্ত অবস্থানে রয়েছে দলটি। বএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, এবার আর তাদের পিছে হটার সুযোগ নেই। শেষ বেলায় সরকারকে মরণ কামড় দেবে। হাইকমান্ড থেকে প্রস্তুতি নেয়ার বার্তা দেয়া হয়েছে। কোরবানি ঈদের পর থেকেই একদফা নিয়ে মাঠে নামবে। সেপ্টেম্বরে দেয়া হবে ‘অলআউট’ কর্মসূচি। ইতোমধ্যে গতকাল থেকে জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৩ দিনের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’। বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং দুই অঙ্গসংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল— এই সমাবেশের আয়োজন করবে।
দলটির শীর্ষ নেতাদের পর্যবেক্ষণ, সরকার এখনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে বিএনপিকে বাধা দিচ্ছে। সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরী সমপ্রতি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে হামলার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া চলছে মাঠপর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তার। সরকার কোনো চাপকেই তোয়াক্কা করছে না। মাঠের আন্দোলন ছাড়া বিএনপির আর উপায় নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ে কঠোর কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। গেলো সপ্তাহে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে সরকার পতনের সর্বাত্মক আন্দোলনে কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সমমনা দলগুলোও একসঙ্গে মাঠে নামবে। এক দফার আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। ঢাকাকে দেয়া হচ্ছে অধিক গুরুত্ব। ঘোষণা আসতে পারে বৃহৎ অবস্থান কর্মসূচিরও। যারা সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে আগ্রহী তাদের নিয়ে সংসদ ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচিরও চিন্তা রয়েছে দলটির।
যুবদলের ফেনী জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নঈম উল্লাহ চৌধুরী বরাত আমার সংবাদকে জানান, আমাদের টিম বৈঠক করা হয়েছে। আগামী ১০ জুন চট্টগ্রাম তারুণ্য বিভাগীয় সমাবেশ হবে। যুবদলের সঙ্গে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলও থাকবে। ওই নেতা জানান, এখন আমাদের আন্দোলন ছাড়া আর উপায় নেই। তৃণমূলের সব নেতাই আন্দোলন চান। আমাদের তারুণ্য নেতা তারেক রহমানও এবার সরকার পতনের কর্মসূচিতে হার্ডলাইনে রয়েছেন। তিনি আমাদের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অধীনেই নির্বাচনের যে ছক কষছে— সেটি বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আমেরিকার ভিসা বন্ধের কোনো ইতিহাস নেই। এবার শেখ হাসিনা আমাদের লজ্জায় ডুবিয়েছেন। তার ভোটচুরির পরিকল্পনায় বাংলাদেশের ভিসা নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। এটি আমাদের দেশের জন্য চরম লজ্জার। এই সরকার এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে সবই করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে, হামলা চালাচ্ছে। আমরাও এ দেশের মানুষের অধিকার নিশ্চিতে আর পিছু হটার সময় নেই। আমাদের আন্দোলন আরও নতুনভাবে আসছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুক আমার সংবাদকে বলেন, ‘মার্কিন ভিসানীতির কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন দলের বাধা হামলা-আক্রমণ কিছুই কমেনি। আপনারা দেখেছেন ইতোমধ্যে আমাদের অনেকগুলো কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা আহত হয়েছেন। আমার নোয়াখালীতে অনেকগুলো নেতাকর্মীকে নির্যাতন করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাই আমরা এবার বাঁচি আর মরি আন্দোলনের থেকে সরব না। এই ক্ষমতাসীনদের অধীনে কোনো নির্বাচনেই যাব না। নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। এই সরকার এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে চলছে। এই সরকারের পরিবর্তন ছাড়া দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন চলছে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আসবে কি আসবে না, এটি তো আমাদের দেশের একটি সাংবিধানিক ব্যাপার, আইনগত একটি ব্যাপার। এ নিয়ে বিদেশিরা কথা বলবে না। ডিপ্লোমেসি কিছু নিয়মে এ ব্যাপারে বিদেশিরা কোনো মতামত দিতে পারে না। কিন্তু তারা বাংলাদেশে একটি অত্যন্ত স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত দেখতে চায়। যাতে বিরোধী দলগুলো নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ করতে পারে, মত প্রকাশ করতে পারে। একই সঙ্গে গায়েবি, মিথ্যা মামলা দায়ের করা থেকে যাতে সরকার বা সরকারি দল বিরত থাকে। কিন্তু এই সরকার কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। এখনো আমাদের কর্মসূচিতে বাধা অব্যাহত রয়েছে।’