পেঁয়াজে স্বস্তি মিলবে কী

রেদওয়ানুল হক প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩, ১১:৪৪ পিএম
পেঁয়াজে স্বস্তি মিলবে কী

সিন্ডিকেট রুখতে আজ থেকে আমদানির অনুমতি

এক মাসে দাম বেড়েছে তিনগুণ

হুহু করে দাম বৃদ্ধির পরও আমদানি বন্ধ ছিল কার স্বার্থে— প্রশ্ন ভোক্তার

পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে সক্রিয় সিন্ডিকেট। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম লাগামহীন বাড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। বাড়তির তালিকায় থাকা পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝাঁজ পেঁয়াজ ও আদায়। তিন থেকে সাতগুণ পর্যন্ত বেড়েছে পণ্য দুটির দাম। এর মধ্যে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলো কারসাজি রুখতে ব্যর্থ হওয়ায় ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আমদানির অনুমতি দিয়ে দাম স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এ পদক্ষেপ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

গতকাল বিকালে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘আগামীকাল (আজ) থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেবে কৃষি মন্ত্রণালয়। পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট  লাঘবসহ সব ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।’

তবে হুহু করে বাড়ার পরও এতদিন আমদানি বন্ধ ছিল কার স্বার্থে— এমন প্রশ্ন ভোক্তাদের। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই মনে করেন, স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে আমদানি বন্ধ করে রাখা হয়। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর দাম কিছুটা কমিয়ে সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে যে হারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, বাস্তবে এতটা সংকট নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর অসহযোগিতার কারণে বাধ্য হয়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আজ থেকে আমদানিকারকদের পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। সাধারণ মানুষের সীমাহীন কষ্টের কথা বিবেচনায় নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে একজন কর্মকর্তা জানান, ‘ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। সরকারি সংস্থাগুলোকে পাত্তাই দিচ্ছে না তারা। অতীতের মতো বস্তায় বস্তায় পেঁয়াজ পচে যাওয়ার আগে তারা ঠিক হবে না।’

গত রমজানে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার থাকায় বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু ঈদুল ফিতরের পরপরই বাড়তে থাকে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য। এর মধ্যে পেঁয়াজের দাম তিনগুণ আর আদার দাম বেড়েছে সাতগুণ। তবে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি হওয়ায় এ পণ্যটি নিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হন ভোক্তারা। বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত এক মাসে হুহু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। ক্রেতাদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রায় ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বিক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দাম বাড়ছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত রমজানে পেঁয়াজ ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। সর্বশেষ গত দুদিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। গতকাল খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। ক্রেতারা জানান, প্রতি বছরই ঈদুল আজহা সামনে রেখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন। দুদিন আগে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রেতারা ৯৫ টাকা দাম হাঁকান।

কমলাপুর বাজার এলাকার দোকানি সাজু আহমেদ বলেন, শনিবারও পেঁয়াজের কেজি ছিল ৮৫ টাকা। এক রাতের ব্যবধানে কীভাবে ৯৫ টাকা হলো? এগুলো সিন্ডিকেটের কারণে হয়েছে। ক্রেতা নাজমুল বলেন, ঈদের মাসখানেক আগেই পেঁয়াজের দাম প্রায় ১০০ টাকা। আর ঈদে কত টাকা হবে, তা কেউ জানে না। অথচ এক মাস আগেও ছিল ৩৫ টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে তিনগুণ বেড়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যেভাবে দাম বাড়ছে, পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ করে দিতে পারলে ভালো হতো।

অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দাম বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঈদে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা মোরশেদ বলেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম কমলেও খুচরায় কিন্তু কমে না। তবে বর্তমানে যেভাবে দাম বাড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে ঈদের আগেই পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরি হতে পারে। সময় থাকতেই আমদানির মাধ্যমে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

প্রসঙ্গত, কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চলতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজের আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) অর্থাৎ আমদানির অনুমতি বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে পরদিন ১৬ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে দাম বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির। দাম স্বাভাবিক করতে গতকাল মন্ত্রণালয় থেকে আমদানির অনুমতির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এখন দাম নিয়ন্ত্রণে আসে কি-না, সেটি সময়ই বলে দেবে।