আমলাতান্ত্রিক জটিলতা

মিলছে না নতুন সিএনজির নিবন্ধন

নুর মোহাম্মদ মিঠু প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩, ০৬:০১ পিএম
মিলছে না নতুন সিএনজির নিবন্ধন

নতুন নিবন্ধন ও রিপ্লেসমেন্ট চেয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ১২ আবেদন

গাড়ির ঘনত্ব ও যানজট বিবেচনায় বাড়ছে না সিলিং
—বলছে মন্ত্রণালয়

সিলিং বৃদ্ধি করলে জনগণই উপকৃত হবে বাড়বে কর্মসংস্থান
—হানিফ খোকন
সভাপতি, সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে মিলছে না নতুন সিএনজি ও মিশুক রেজিস্ট্রেশন বা রিপ্লেসমেন্ট। সম্প্রতি এ সংক্রান্তে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ১২টি আবেদন করে। কিন্তু দুই মহানগরীতে গাড়ির ঘনত্ব ও যানজটের কারণ দেখিয়ে নতুন রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে না। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এ সংক্রান্তে একটি সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। 

জানা গেছে, ‘সিএনজি বা পেট্রোলচালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলার সার্ভিস নীতিমালা-২০০৭ অনুসারে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নির্ধারিত সিলিং পরিবর্তন করা যাবে না বলে বলছেন মত দিয়েছেন সভায় অংশ নেয়া পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (হাইওয়ে পুলিশ), চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের সহকারী অধ্যাপকসহ (এআরআই) মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএর কর্মকর্তারা। সভায় সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। 

সভায় সিলিং বৃদ্ধি করা নিয়ে সিএমপি কমিশনার, ডিএমপির ডিসি (ট্রাফিক) ও বুয়েটের সহকারী অধ্যাপকের দেয়া বক্তব্য সঠিক নয় বলে বলছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে ডিএমপি পরিবেশ দূষণের কথা বলে ৩৭ হাজার টু-স্ট্রোক মিশুক রিপ্লেসমেন্ট করে পরবর্তী সময়ে ১৫ হাজার সিএনজির নিবন্ধন দেয়। যা জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। গত ২১ বছরে মহানগরের আয়তন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ আর জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়েছে চারগুণ।’ তিনি বলেন, ‘সিলিং বৃদ্ধি করলে জনগণই উপকৃত হবে। মিটারে চলাচল করতে পারবে স্বল্প ভাড়ায়। যেটি এখন পারছে না। এ ছাড়া কর্মসংস্থানও বাড়বে। তিনি দাবি রেখে বলেন, ঢাকায় ১৫ হাজারের সিএনজির স্থলে যেন ২৫ হাজার করা হয় এবং চট্টগ্রামে ১৩ হাজারের স্থলে যেন আরও পাঁচ হাজার বাড়িয়ে ১৮ হাজার করা হয়। 

ডিএমপিতে অবৈধভাবে যেসব সিএনজি চলাচল করছে সেগুলোও উচ্ছেদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, নতুন সিএনজি রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে ১২টি আবেদন পায় মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ২০০ সিএনজি রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি আবেদন, সিএনজি স্ক্র্যাপ করে নতুন করে প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত দুটি আবেদন এবং ৪৯৬টি মিশুক অটোরিকশার পরিবর্তে সিএনজি অটোরিশকার রিপ্লেসমেন্ট সংক্রান্ত একটি আবেদন পায় মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীতে আমদানিকৃত ১২০টি সিএনজি রেজিস্ট্রেশনের একটি আবেদন, কাস্টমস হাউজ থেকে খরিদকৃত ১৮০টি এবং চট্ট মেট্রোর অধীনে ১১টি সিএনজি থ্রি-হুইলারের রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্তে দুটি আবেদন পায় মন্ত্রণালয়।

সেসব আবেদনের প্রেক্ষিতেই আয়োজিত সভায় বিআরটিএর সংস্থাপন শাখার সহকারী সচিব জসিম উদ্দিন বলেন, সিএনজি বা পেট্রোলচালিত ফোর-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার সার্ভিস নীতিমালা-২০০৭ এ ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে সিএনজি বা পেট্রোলচালিত ফোর-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার ঢাকায় ১৩ হাজার এবং চট্টগ্রামে ১৩ হাজার সিলিং নির্ধারণ করা আছে। পরবর্তীতে ২০১২ সালে নীতিমালা অনুসারে ঢাকায় আরও দুই হাজার ৬৯৬টি বাড়িয়ে ১৫ হাজার ৬৯৬টি করা হয়। নির্ধারিত সিলিংয়ের বেশি সিএনজি চলাচলের অনুমতির বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে ১৩ হাজার সিএনজি বর্তমানে রয়েছে। এর বাইরে অটোটেম্পু রয়েছে দুই হাজার ১৯৩টি, হিউম্যান হলার রয়েছে ৯৫৯টি এবং টাউন সার্ভিস বাস চলছে এক হাজার ১২৫টি। প্রাইভেট রেজিস্টার্ড গাড়ি আছে তিন লাখ ৬০ হাজার। যা চট্টগ্রাম শহরের আয়তন ও প্রয়োজন অনুসারে যথেষ্ট। মহানগরীতে বর্তমানে নাগরিকদের যাত্রীসেবায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না; বরং অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের কারণে ট্রাফিক জ্যামে মানুষের সময় নষ্ট হচ্ছে।’ তাই সিলিং না বাড়িয়ে কমানোর কথা বলেন তিনি। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি প্রতিস্থাপনের কথাই বলেন তিনি। 

ডিএমপির ডিসি (ট্রাফিক) জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ঢাকা মেট্রো এলাকায় সিএনজি চলাচলের জন্য সিলিং নির্ধারিত থাকলেও বাইরের রেজিস্ট্রার্ড সিএনজি ঢাকায় চলাচল করছে। তাই নতুন করে আর অনুমোদন না দেয়ার কথা বলেন তিনি। এ ছাড়া শহরের অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে যানজট সৃষ্টি করছে। তিনি আরও বলেন, ডিএমপি প্রতিদিন ট্রাফিক আইন ভঙ্গের কারণে ১০-২০টি সিএনজি আটক করে। কিন্তু ডাম্পিংয়ের জায়গা না থাকায় এসব সিএনজিকে জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়।’ 

সভায় বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক (এআরআই) সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে গত ছয় মাস করে তিনি দেখেছেন চট্টগ্রাম শহরে দাঁড়ালে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সিএনজি পাওয়া যায়। সেখানে নতুন সিএনজির কোনো চাহিদা নেই। তবে গণপরিবহন কম।’ সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের সচিব যাহিদ হোসেন বলেন, ‘সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামের ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, নতুন কোনো সিএনজি এ মুহূর্তে রেজিস্ট্রেশন দেয়া সমীচীন হবে না। তবে অন্য গণপরিবহন বাড়ানো যেতে পারে।’ হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে উবারের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই সিএনজি না বাড়িয়ে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।’ 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা রাজিব খাদেম বলেন, ‘সিএনজি পার্কিং পরিকল্পনা না করে নতুন সিএনজি দেয়া ঠিক হবে না।’ ৬৪৬টি মিশুক রিপ্লেসমেন্টের বিষয়ে বিআরটিএর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) বলেন, দুই হাজার ৬৯৯টি মিশুক ইতোপূর্বে রিপ্লেসমেন্ট করা হয়েছে। এগুলো নির্ধারিত ১৩ হাজার সিএনজির অতিরিক্ত দেয়া হয়েছিল। বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেন, পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মিশুক রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। ওই সময়ে যারা রিপ্লেসমেন্ট করার আবেদন করেছিল সেগুলো রিপ্লেসমেন্ট করা হয়েছে।’ 

আবেদনকারীদের একজন ১৮০টি সিএনজি ক্রয়ের আবেদন করেছিলেন সেগুলো ঢাকার বাইরে চলাচলের অনুমতি দেয়া যায় কি-না, এমন প্রশ্নে সড়ক ও সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম শামীম আক্তার বলেন, ‘এই সিএনজিগুলো ঢাকা মহানগরীর বাইরের জেলায় চলাচলের অনুমতি দেয়া যায়।’