আন্দোলন হবে ঢাকামুখী বিরোধী দল সংঘাতে জড়াবে না
—জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
- ১০ দফা ও রাষ্ট্র সংস্কারে ২৭ দফার সঙ্গে নতুন ৩১ রূপরেখা যুক্ত হচ্ছে
- নেই হরতাল-অবরোধ, রয়েছে ঢাকামুখী অবস্থান, সমাবেশ ও ঘেরাও কর্মসূচি
- একাদশের ঐক্যফ্রন্টের মতো এক ব্যানারে নয়, এবার সবাই আলাদা ব্যানারে
- বিদেশিদের নজরে আসতে বৃহৎ সমাগমের টার্গেট, পেয়েছে মৌখিক অনুমতি
আগামীকাল বুধবার সরকারের পদত্যাগে এক দফার কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। দলীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্তের পর গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গুলশানে দফায় দফায় বৈঠকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পূর্বের সরকার পতনে ১০ দফা ও রাষ্ট্র সংস্কারে ২৭ দফার কর্মসূচির সঙ্গে যৌথ কর্মসূচিতে ৩১ দফার নতুন রূপরেখা যুক্ত হচ্ছে। এ আন্দোলনে ৩৬টি দল একাদশের ঐক্যফ্রন্টের মতো এক ব্যানারে থাকবে না। সবাই নিজ নিজ ব্যানারে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করবে। হরতাল-অবরোধসহ অনেক প্রস্তাব এলেও আপাতত সংঘাত হতে পারে— এমন কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। বিদেশি কঠোরতায় নরম সুরের পথেই জুলাই পার করবে দলটি। তবে আন্দোলনে ঢাকাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বেশি।
অবস্থান কর্মসূচি, সমাবেশসহ নিয়মিত ফরমেটে যে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি রয়েছে, সেটিই কাল নয়াপল্টনে তারুণ্য সমাবেশে ঘোষণা করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনবিষয়ক তথ্যানুসন্ধানী মিশন ১৬ দিনের সফরে ঢাকা এসেছে। এছাড়া এ সপ্তাহে ঢাকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী একটি প্রতিনিধিদল। তাই কিছুটা আগেই সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এই এক দফার আন্দোলনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছে বার্তা পৌঁছাবে যে, তারা এই সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে নেমেছে। ‘এক দফা’ আন্দোলনের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিও ঘোষণার দিন ঢাকায় ব্যাপক জনসমাগম করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ঢাকার নিকটবর্তী জেলাগুলোর নেতাকর্মীদের সমাবেশে ডেকে আনা হবে। এ নিয়ে চলছে একের পর প্রস্তুতি সভা। তবে বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, ঐক্যফ্রন্টের ব্যর্থ কর্মসূচির মতো এবারের ৩৬ দলের সমমনা কর্মসূচিও ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ, বিএনপি কোনো সংঘাতমূলক কর্মসূচিতে যাবে না। তাই হরতাল-অবরোধের দায় জোট নেতারাও নেবেন না। এজন্য আন্দোলন রোডম্যাপে রয়েছে ঢাকায় অবস্থান ধর্মঘট, ‘চলো চলো, ঢাকা চলো’, সচিবালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, গণভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি। ক্ষমতাসীন দল নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এড়িয়ে এসব কর্মসূচি সফল হবে বলে অনেকেই মনে করছেন না।
গতকাল বিকালে গুলশানে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে জেএসডি সভাপতি আ স ম রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পৃথক বৈঠকে এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামুল বশির, আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাড. এসএম মোরশেদ, অধ্যক্ষ সাকলায়েন, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি, আইন সম্পাদক অ্যাড. আবুল হাসেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গণঅধিকার পরিষদের (রেজা কিবরিয়া) প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানসহ ১৯ সদস্য। এছাড়া শনিবার রাতে এবং গতকাল রাতেও বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ কর্মসূচি নিয়ে চূড়ান্ত বিশ্লেষণ করা হয়।
এদিকে ১২ জুলাই রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে গতকাল সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। এখানে অনুমতির প্রয়োজন নেই, আমরা সহযোগিতা চেয়েছি। তারা আমাদের মৌখিকভাবে সমাবেশ করতে আশ্বাস দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান আমার সংবাদকে বলেন, ১২ জুলাই (বুধবার) সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দেবে বাংলাদেশ লেবার পার্টি। বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্য হয়ে আমরা এ কর্মসূচিতে রয়েছি। তারা ১২ জুলাই কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আমার সংবাদকে বলেন, এক দফা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পৃথক মঞ্চ থেকে যার যৌথ ঘোষণা দেবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো। গতকাল সোমবার বিকালে বিএনপির সঙ্গে আমাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন পরিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে। মানুষ এ সরকারের পরিবর্তন চায়। চলমান আন্দোলনকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সে বিষয়ে আমাদের ঐকমত্য হয়েছে।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘আগামীর আন্দোলন হবে ঢাকামুখী । ঢাকা নিয়ন্ত্রণে না আনলে আন্দোলন সফল হবে না। আসা করছি আগামীকাল যুগপৎ এক দফার আন্দোলন ঘোষণা করা হবে। তবে সার্বিকভাবে বিরোধী দল সংঘাতে জড়াবে না। সরকারি দল যদি একই ধরনের মানসিকতা অটুট রাখে, তাহলে সংঘাত ঘটবে। আমাদের আন্দোলন দেশবাসীর ভোটের অধিকার রক্ষার আন্দোলন। ১২ দলীয় জোটের মধ্যে কল্যাণ পার্টি একটি।