২১ মাসে ছয় লাখ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

অবৈধ সংযোগ শূন্যের কোঠায় আনা যাচ্ছে না

মহিউদ্দিন রাব্বানি প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৩, ১২:৪৫ এএম
অবৈধ সংযোগ শূন্যের কোঠায় আনা যাচ্ছে না
  • ৬৬৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন
  • সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া ৬৭০১ কোটি টাকা

লাইন কেটে দেয়ার পর আবারও লাইন বসলে সেই অঞ্চলের লাইন বন্ধ করে দেয়া হবে

—হারুনুর রশিদ মোল্লাহ
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ

একযুগেরও বেশি সময় ধরে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই জ্যামিতিক হারে অবৈধ সংযোগ বেড়ে গেছে। তিতাসের কর্মকর্তা, স্থানীয় ঠিকাদার ও প্রভাবশালীরা এসব গ্যাস চুরিতে জড়িত— বলছেন সংশ্লিষ্টরা। গ্যাস সরবরাহের সবচেয়ে বড় সংস্থা তিতাস রাজধানী ও আশপাশের জেলার প্রায় ২৮ লাখ গ্রাহক সেবা দিয়ে আসছে। অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও বিল খেলাপির কারণে গত ২১ মাসে ছয় লাখ তিন হাজার ৯৭৫টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে সংস্থাটি। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ২৮ হাজার ৩৯৮টি অভিযানে এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপরও অবৈধ সংযোগ শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা যাচ্ছে না। এসব অভিযানে ৬৬৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার অবৈধ লাইন উচ্ছেদ করা হয় বলে জানায় তিতাস কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার তিতাস ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিতাস ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদ মোল্লাহ। 

আবাসিক ছাড়াও অবৈধ ব্যবহারের কারণে ২৫০টি শিল্প, ৩২৯টি বাণিজ্যিক, ৫৫টি ক্যাপটিভ, ১০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এসব অভিযান পরিচালনায় ছয় কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এর বিপরীতে ৩১২ কোটি ৮১ লাখ টাকা অতিরিক্ত বিল এবং ৯১ কোটি ২৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা অতিরিক্ত বিল ও ৩৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। 

এদিকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্যাস বিক্রয় বাবদ তিতাসের বকেয়া ছয় হাজার ৭০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বকেয়া রয়েছে এক হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া রয়েছে পাঁচ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে দুই হাজার ৩৮৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা বকেয়া ছিল, এক হাজার ৫২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। এখন বকেয়ার পরিমাণ কমে এক হাজার ৬৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। বেসরকারি খাতে ৩১ হাজার ১৫৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বকেয়া ছিল, এখন পাঁচ হাজার ৪৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা রয়েছে।

তিতাসের যত্রতত্র এসব অবৈধ সংযোগের সাথে খোদ তিতাস কর্মকর্তারা জড়িত। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কিছু অভিযোগ সত্য। যার ফলে ইতোপূর্বে আমার সময় আটজনকে বরখাস্ত করেছি, ১৬ জনকে সাময়িক বরখাস্তসহ ২২৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ৯১ জনকে শাস্তিমূলক বদলি করেছি। তিন হাজারের বেশি স্টাফের মধ্যে হয়ত নগণ্য পরিমাণে জড়িত থাকতে পারে। ৫০ থেকে ৬০ জন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদ মোল্লাহ বলেন, তিতাস গ্যাসে এখন আর চিহ্নিত কোনো অবৈধ সংযোগ নেই। একটি অবৈধ সংযোগ থাকা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা জনসংযোগ করেছি, বলেছি চুরি ঠেকাতে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের বলেছি, লাইন কেটে দেয়ার পর আবারও লাইন বসলে সেই অঞ্চলের লাইন বন্ধ করে দেয়া হবে। এতে আমরা অনেক ভালো ফল পেয়েছি।