আগামী অক্টোবরেই ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হচ্ছে মেট্রোরেল সার্ভিস। গত জুনে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এ ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই এ সড়কে চলাচলকারীদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। বিশেষ করে যারা ব্যাংক পাড়ায় কর্মরত তাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস সবচাইতে বেশি। কারণ, প্রাইভেটকার, কাউন্টার বাস বা লোকাল বাসে যারা এ রুটে যাতায়াত করছেন তারা দীর্ঘ সময় যানজটে পড়ে থাকেন। ফলে কর্মঘণ্টা হারান এই কর্মজীবীরা। এতে একদিকে অফিস কর্তৃপক্ষ, অন্যদিকে চাকরিজীবীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কিন্তু মেট্রোরেল চালু হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকার মতো ভোগান্তি থাকছে না, চোখের পলকেই পৌঁছে যাবেন কর্মস্থলে— এসব ভেবেই খুশি সংশ্লিষ্টরা। অক্টোবরের ঠিক কত তারিখে মতিঝিল স্টেশন উদ্বোধন করা হবে তার দিনক্ষণ সরকারের পক্ষ থেকে এখনো জানানো হয়নি। তবে এই রুটে যাতায়াতকারীরা অপেক্ষা করছেন কাঙ্ক্ষিত সেই দিনটির জন্য।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মতিঝিল সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা দৈনিক আমার সংবাদকে জানান, তিনি মিরপুর-১২ নাম্বার থেকে নিয়মিত প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে অফিসে আসেন, তাকে সকাল ৭টার সময় মিরপুর থেকে মতিঝিলের উদ্দেশে রওনা দিতে হয়, বাড়ি ফিরতে রাত ৭ থেকে ৮টা বাজে। মেট্রোরেল মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে প্রাইভেটকারে আর অফিসে আসার প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন না তিনি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হলেই সঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারবেন বলে জানান। গতকাল মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় উপস্থিত অনেকের সঙ্গে কথা বললে সবাই আনন্দ অনুভূতি প্রকাশ করেন। সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ঢাকা মেট্রোরেল অন্যতম। সারা বিশ্বের জনবহুল মেগা সিটিগুলোর মধ্যে ঢাকা অত্যধিক ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহর। এখানে বসবাসকারী বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। ঢাকার ভয়াবহ যানজট ও ট্রাফিক সমস্যা দূর করতে মেট্রোরেল প্রকল্প একটি সময়োচিত ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বিপুল সংখ্যক যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামাল দিতে মেট্রোরেলের মতো গণপরিবহনই হতে পারে একটি কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা। তাই রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও যানজট নিরসনে মেট্রোরেল ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে মেট্রোরেল আংশিক চালুর পর নাগরিকদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে, ভূমিকা রাখছে নিরাপদ ও দ্রুত যাতায়াতে।
কি কারণে নাম হলো মেট্রোরেল : মেট্রোপলিটন রেলের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো মেট্রোরেল। মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো স্পর্শ করে গণপরিবহনের জন্য প্রতিষ্ঠিত রেল ব্যবস্থার নাম মেট্রোরেল। এটি একটি সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত ট্রেন। ঢাকা মেট্রোরেল ব্যবস্থার প্রকল্পটির নাম ‘ম্যাস র? র্যাপিড ট্রানজিট’। এটি একটি দ্রুতগামী, স্বাচ্ছ্যন্দময়, সুবিধাজনক ও নিরাপদ নগর কেন্দ্রিক রেলব্যবস্থা।
ঢাকায় মেট্রোরেলের গুরুত্ব : জনবহুল শহর রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই পরিচিত মেট্রোরেল সার্ভিস। এই শহরে সকাল-দুপুর-বিকেল রাত সবসময়ই যানজট লেগে থাকে। এখানে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা, বাইক আর রিকশা মিলিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ যান চলাচল করে। একজন নাগরিক দু-তিন ঘণ্টা আগে রওনা হয়েও সঠিক সময়ে কখনো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না। রাজধানী ঢাকার রাস্তায় যানজটে রীতিমতো নাকানি-চুবানি খেতে হয় যাত্রীদের। ইতোমধ্যে সরকার বেশ কয়েকটি উড়াল সেতু, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, লিংকরোড নির্মাণ করেছে। কিন্তু যানজট খুব একটা নিরসন হয়নি। তাছাড়া যাত্রীদের দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বাসের অপেক্ষায়। সিএনজি বা রিকশাচালকদের হাতেও জিম্মি হতে হয় কখনো কখনো। ঝড়, বৃষ্টি বা হরতালের সময় মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
বিশেষ করে অফিস চলাকালীন সময়ে যানজটে রাজধানীর মানুষসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এমতাবস্থায় মেট্রোরেল চালু হলে সময়ের অপচয় যেমন হ্রাস পাবে তেমনই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ হয়ে যাবে। সেদিকে লক্ষ রেখেই মেট্রোরেল প্রকল্পের শুভ সূচনা হয়। গতিশীল হবে অর্থনীতি, যাতায়াত হবে সহজ : যথাসময়ে প্রকল্পের সমাপ্তি ও পূর্ণাঙ্গভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু হলে মেট্রোরেল অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীল করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। সরকার এ প্রকল্প থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবে। তাছাড়া মেট্রোরেলের আরামদায়ক সেবার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে।
বিশেষ করে বৃদ্ধ, শিশু, প্রতিবন্ধী ও নারীরা দুর্বিষহ কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে। উল্লেখ্য যে, যাত্রীরা নির্ধারিত স্থান থেকে ওঠানামা করার ফলে গড়ে উঠবে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর ঢাকা মহানগরী। বাংলাদেশ হবে একটি উন্নতশীল দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরেকটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। সারা বিশ্ব বলবে বাংলাদেশ একটি উন্নত নাগরিক সুযোগ সুবিধার দেশ। প্রসঙ্গত, আগামী অক্টোবর মাসেই উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালের ২৬ জুন আনুষ্ঠানিক এ প্রকল্প উদ্বোধন করেন তিনি।