স্কুল-কলেজের নামকরণে মাউশির সংশোধনী

মো. নাঈমুল হক প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৩, ১১:৪২ পিএম
স্কুল-কলেজের নামকরণে মাউশির সংশোধনী

স্বাধীনতাবিরোধী ও দণ্ডিত ব্যক্তি বা সংগঠনের নামে নামকরণে অনুমতি দেয়া যাবে না

ব্যক্তির নামে নামকরণে খরচ কমানো হয়েছে

দেরিতে হলেও সরকার এ ধরনের নীতিমালা করেছে একে স্বাগত জানাই

—আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
সাবেক ভিসি, ঢাবি

নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সংশোধনী দিয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোলেমান খান স্বাক্ষরিত সংশোধিত নীতিমালায় নামকরণের ব্যাপারে বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী, যুদ্ধাপরাধী, কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন বা ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তির নামে বা সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে— এমন কোনো নেতিবাচক নামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা নামকরণের অনুমতি দেয়া যাবে না। এছাড়া সংশোধিত নীতিমালায় ব্যক্তির নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণের খরচ কমানো হয়েছে। শিক্ষাবিদরা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। 

জানা যায়, চলতি বছরের প্রথমদিকে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আপত্তিকর নাম সংশোধনের নোটিস জারি করে মাউশি। এরপর চট্টগ্রাম বোর্ডে যুদ্ধাপরাধীদের নামের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম সংশোধনের চিঠি পাঠায় চট্টগ্রাম বোর্ড। পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধীদের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকার বিষয়ে সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

সংশোধিত নীতিমালাতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির চূড়ান্ত অনুমোদনের দায়িত্ব শিক্ষাবোর্ডগুলোকে দেয়া হয়েছে। 

সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী, যুদ্ধাপরাধী কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন বা ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তির নামে বা সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে— এমন কোনো নেতিবাচক নামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা নামকরণের অনুমতি দেয়া যাবে না। নেতিবাচক ও অশোভনীয় কোনো নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা যাবে না। প্রয়োজন মনে করলে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম এসব কারণে পরিবর্তন করতে পারে। নামের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা যাবে না। সংশোধিত নীতিমালায় ব্যক্তির নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের খরচ বা জমা রাখা স্থায়ী আমানতের পরিমাণ কমানো হয়েছে। ব্যক্তির নামে নিম্নমাধ্যমিক স্কুল স্থাপন বা নামকরণের আগে ২৫ লাখ টাকা আমানত রাখার বিধান থাকলেও তা কমিয়ে ১৮ লাখ টাকা করা হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ব্যক্তির নামে নামকরণে আগে ৩০ লাখ টাকা আমানত রাখার বিধান থাকলেও তা কমিয়ে করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। আর ব্যক্তির নামে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ স্থাপন বা নামকরণে আগে ৫০ লাখ পাকা আমানত জমা রাখার বিধান থাকলেও তা কমিয়ে ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। 

স্বাধীনতাবিরোধী ও ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্তদের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণ না করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলাম। যারা দেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্বকে বিশ্বাস করেনি, তাদের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকা ঠিক নয়। শিক্ষার্থীরা তো জানে না তারা কার নাম উচ্চারণ করছে। তাদের মনের অজান্তেই একজন স্বাধীনতাবিরোধীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারে। টাকা হলেই কেউ একটি প্রতিষ্ঠানে নিজের নাম দিতে পারে না। ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠানের নাম হলে ওই ব্যক্তিকে  অবশ্যই সমাজের মান্যগণ্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তি হতে হবে। প্রতিষ্ঠানের নাম স্থানীয় বিভিন্ন নামেও হতে পারে। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা নামেই হয়েছে। একইভাবে ফৌজদারি অপরাধীদের নামেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম হওয়া ঠিক নয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।