স্তিমিত হচ্ছে জাতীয়করণ আন্দোলন

মো. নাঈমুল হক প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৩, ০৮:৩২ পিএম
স্তিমিত হচ্ছে জাতীয়করণ আন্দোলন

মাউশির নির্দেশনা ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষক উপস্থিতি কমেছে

  • গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলে আশা হারিয়েছেন কেউ কেউ 
  • জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষক নেতাদের

বন্ধের দিন থাকায় শিক্ষক উপস্থিতি কম ছিল 
—অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া, সভাপতি, বিটিএ

মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ আন্দোলনের ১১তম দিনেও শিক্ষকদের উপস্থিতি কম ছিল। অথচ বন্ধের দিনে উপস্থিতি সংখ্যা বেশি হওয়ার কথা। গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের কারণে আন্দোলন কীভাবে চলবে এ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি শিক্ষক নেতারা। শিক্ষকদের কেউ কেউ মনে করছে, ক্লাস খোলা রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। 

জানা গেছে, মাউশির নির্দেশনা ও শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধের কারণে অনেক শিক্ষক বাসায় ফিরে গেছেন বলে। কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলনে না থাকার জন্য স্থানীয় নেতাদের হুমকিও রয়েছে। 

যদিও শিক্ষক নেতারা বলছেন, জাতীয় করণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। বন্ধের দিন হওয়ায় আন্দোলনে উপস্থিতি কম ছিল। জানা যায়, গত ১৯ জুলাই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের বৈঠকের পর থেকে আন্দোলনে শিক্ষকদের উপস্থিতি কমে যায়। এর আগের দিন মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)  শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে যেতে নির্দেশনা দেয়। একইভাবে শিক্ষামন্ত্রী পরের দিন শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই জাতীয় করণ সম্ভব নয়। আপনাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছি। কিন্তু এরপরও শিক্ষকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও আগের মতো উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না।  

সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অন্য দিনের মতো গতকালও শিক্ষকদের আন্দোলন পূর্ব নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়েছে। এই সময় প্রেস ক্লাবের সামনে উপস্থিতি খুবই কম ছিল। এর পর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু শিক্ষক আসলেও প্রেস ক্লাবের সামনের অংশ তুলনামূলক ফাঁকা ছিল। উল্লেখ্য, আন্দোলনের প্রথম দিকের তুলনায় বর্তমানে শিক্ষকদের উপস্থিতি কম। আন্দোলনের সপ্তম দিনও পল্টন থেকে জাতীয় ঈদগাহ পর্যন্ত শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিল। শিক্ষকদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে রাস্তার এক পাশ বন্ধ হয়েছে। ফলে সড়ক থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দিতে পুলিশের লাঠিচার্জ করতে হয়েছে। 

প্রথম দিকে আন্দোলনে অংশ নেয়া ফেনী জেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেছেন, আমরা চাকরি নিয়ে শঙ্কায় আছি। শিক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর থেকে স্থানীয় নেতারা আমাদের বাড়ি চলে যেতে ফোন দেয়।  নরসিংদী থেকে আগত শাহরিয়ার আহমেদ (ছদ্মনাম) বলেন, আমি প্রথম থেকে আন্দোলনে ছিলাম। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর থেকে মনে হচ্ছে, আন্দোলন করে লাভ হবে না। জাতীয় করণ দেবে না। আমরা আরো সমস্যায় পড়ে যাব। আর ক্লাস খোলা থাকলে আন্দোলন কীভাবে হবে? কম লোকজন দিয়ে তো আন্দোলন করলে লাভ হবে না। যদিও শিক্ষক নেতারা দিনভর বিভিন্ন আশাব্যঞ্জক কথা বলে আন্দোলনকে চাঙ্গা রাখছেন। 

আন্দোলনের ব্যাপারে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া আমার সংবাদকে বলেন,  কোনো আন্দোলনই প্রথমেই সফলতা পায় না। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব ধরনের আন্দোলনই রাতারাতি সফল হয়নি। এই আন্দোলনে কেউ যদি না থাকে আমি একা বজলুর রহমান থাকব। জাতীয় করণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এক দেশে দুই নীতি কখনোই চলতে পারে না। বৈষম্য বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও গ্রীষ্মকালীন বন্ধ শীতকালে দেয় না; বরং গরমে অতিষ্ঠ হয়ে বিশেষ বিবেচনায় অনেক শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেন। তারা আমাদের আন্দোলনে ভীত হয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করেছে। 

উপস্থিতি কম থাকার ব্যাপারে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,  শিক্ষকদের কেউ কেউ টানা আন্দোলন করে বাড়িতে গেছেন। আর শুক্রবার বন্ধের দিন। বন্ধের দিন অনেকে পরিবার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে ঘুরতে যায়। রোববার থেকে কীভাবে আন্দোলন চলবে? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা এখনো এ বিষয়ে আলোচনা করিনি। আগামীকাল জানা যাবে।