- শিক্ষকদের বাড়ি ফিরিয়ে নিতে কৌশলী সরকার
- শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে ঢাকা বোর্ডের নির্দেশনা
- আজও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষকদের
২৭ তারিখ সমস্যা হতে পারে বলে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন
—ডা. দীপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী
আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য নানাভাবে অপচেষ্টা হচ্ছে
—শেখ কাওছার আহমেদ
সাধারণ সম্পাদক, বিটিএ
মাধ্যমিকের জাতীয়করণে আন্দোলনরত শিক্ষকদের বাড়ি ফিরিয়ে নিতে নানা কৌশলে চেষ্টা করছে সরকার। মাউশি, ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষামন্ত্রীর কোনো ধরনের কৌশলই আমলে নিচ্ছেন না শিক্ষকরা। বরং নতুন করে আন্দোলনে অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনের নেতারাও যুক্ত হয়েছেন। আন্দোলনের পালে নতুন হাওয়ায় উৎসাহিত বিটিএ নেতৃবৃন্দ। শিক্ষকদের বাড়ি ফিরে যেতে সর্বশেষ গতকাল শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২৭ তারিখ একটা সমস্যা হতে পারে বলে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। আজকেই আপনারা বাড়ি ফিরে যান। অন্যদিকে আজও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যকে আন্দোলন নস্যাৎ করার অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন বিটিএ নেতারা।
জানা যায়, আন্দোলনের এক সপ্তাহের মাথায় শিক্ষকদের সঙ্গে বসেছে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। পরের দিন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও বসেছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) নেতারা। ওইদিন জাতীয়করণের বিষয়ে দুটো কমিটি গঠন করেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু বিটিএ নেতারা এতে আশ্বস্ত হননি। এরপর মাউশি শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে আরও বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেয়। গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল, অনুপস্থিত শিক্ষকদের প্রতিদিনের তালিকা প্রকাশের হুঁশিয়ারি, জুন মাসে অনুপস্থিতির জন্য ৩৪ শিক্ষককে শোকজ। সর্বশেষ গতকাল স্কুল-কলেজে শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে কঠোর নজরদারির নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এতেও টলানো যাচ্ছে না শিক্ষকদের। গতকাল শিক্ষকরা জাতীয়করণ ছাড়া বাড়ি ফিরে না যাওয়ার কাগজে স্বাক্ষর করেন।
মাউশির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার অধীন স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানানো যাচ্ছে যে, স্কুল-কলেজের শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ নিয়মিত ক্লাস এবং নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষক-কর্মচারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থেকে পাঠদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কঠোরভাবে নজরদারি করার অনুরোধ করা যাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখার বৃহত্তর স্বার্থে বিষয়টি ‘অতীব জরুরি’। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার সব দায়ভার সংশ্লিষ্ট গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সদস্যদের ওপর বর্তাবে। এ ব্যাপারে সবার একান্ত সহযোগিতা কাম্য। এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি নিশ্চিতে একাধিকবার নির্দেশনা দেয়া হয়। এমনকি দৈনিক অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা পাঠানোর নির্দেশনাও দিয়েছে মাউশি।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, শোকজ বা যত ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক না কেন, দাবি আদায় না করে ক্লাসে ফিরবেন না তারা। গতকালই শিক্ষকদের বাড়ি ফেরার কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমি অবশ্যই বলছি, আজকেই তারা যেন ফিরে যান। আমরা তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এরপর যদি তাদের কোনো চাওয়া থাকে, তাহলে পরে অবশ্যই (আন্দোলনে) আসতে পারেন। কিন্তু ২৭ তারিখ এখানে একটা সমস্যা হতে পারে বলে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তাই আজই তাদের ফিরে যেতে বলছি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনকে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করে আপনি যেভাবে উসকে দিচ্ছেন, দয়া করে আর কোনো অস্তিত্বে আঘাত না দিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান থেকে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। না হয়, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে যাব না। সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর ‘প্রাণের দাবি’ সময় থাকতে না বুঝলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিভাবক হিসেবে আপনি কতটুকু যোগ্য থাকবেন, সেটি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেবে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ অভিযোগ করেন, তাদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য নানাভাবে অপচেষ্টা হচ্ছে। তাকে জানানো হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী জাতীয়করণের বিষয়ে একটি কর্মশালা করবেন। সেই কর্মশালায় তারা (শিক্ষকরা) উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু তারা মনে করেন এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই কর্মশালা করা। তিনি আরও বলেন, অশুভ কোনো ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কারণ, ওই কর্মশালা করা হবে ঢাকার বাইরে। এটি সত্যিকারের কর্মশালা, নাকি আন্দোলনকে থামানোর কোনো অপচেষ্টা? প্রধানমন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত হয়ে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত কোনো কর্মশালায় অংশ নেব না।
আরএস