- সংলাপে ইতিবাচক ক্ষমতাসীনরা বিরোধীদের অবিশ্বাস
নির্বাচন কমিশন ডাকলে আমরা যাব
—ড. হাছান মাহমুদ
এই ইসির অধীনে নির্বাচনের কোনো গুরুত্ব নেই
—অলি আহমদ
সরকার ও ইসির পদত্যাগের পরই আলোচনা
—শামা ওবায়েদ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে বসে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ডায়ালগ প্রয়োজন। ডায়ালগ ছাড়া এ সংকটগুলো আসলে রাজপথে মীমাংসা করার বিষয় নয়। কমিশন মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলোর এক টেবিলে বসা উচিত; একসঙ্গে চা পান করা উচিত। তারপর আলোচনা করে সংকট নিরসনে চেষ্টা করা উচিত।’ নির্বাচন কমিশনের এমন আহ্বানের পর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংলাপ হতে পারে; তবে বিএনপিকে ইতিবাচক রাজনীতির ধারায় ফিরে এসে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিতে হবে। তারপর নির্বাচনের পরিবেশ আরও কীভাবে ভালো করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ নিয়ে যদি নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকে ডাকলে তারা সাড়া দেবে।
তবে বিএনপি বলছে, সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে তাদের আন্দোলন চলছে। এ দুই দাবি মেনে নিলে তখন চিন্তা করা হবে। অতীতে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সংলাপের কোনো কথাই আওয়ামী লীগ রাখেনি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আ.লীগের অধীনে দুটো নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ দেখেছে তারা। দুই নির্বাচনেই আ.লীগ প্রমাণ করেছে, তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনে কী করেছে, তা সবার জানা। ১৫৪টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়ে গেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে ভোট করেছে। পুরো নির্বাচনের সময় তারা অত্যাচার, নির্যাতন, গ্রেপ্তার, পুলিশ দিয়ে হয়রানিসহ সবকিছু করেছে। বিএনপিকে তারা নির্বাচনে দাঁড়াতেই দেয়নি। তাই এবার সরকারের পদত্যাগ ব্যতীত কোনো সংলাপে যাবে না। আর নির্বাচন কমিশনের ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই। ঢাকার একটি মাত্র আসনে ইসি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে; তাই ৩০০ আসনে এ কমিশনের পক্ষে নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা এই কমিশনেরও পদত্যাগ চায়। এরপর নতুন কমিশন গঠনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী দলটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বীর বিক্রম বলেছেন, এখন আলোচনা মাত্র একটাই— তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই দাবি ব্যতীত আর কোনো আলোচনা নেই। ২০০৯ সালের পর থেকে জনগণ ভোট দেয়া থেকে বিরত রয়েছে। কেউ চেষ্টা করেও ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্ষমতা নেই। ক্ষমতার মালিক হলো সরকার। নির্বাচন কমিশন শুধু বক্তব্য রাখতে পারে। আইন বানাতে পারে। প্রয়োগের ক্ষমতা তাদের নেই। অতিসম্প্রতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি আসনে নির্বাচন হয়েছে। জনগণ সেখানেও ভোট প্রয়োগ করতে পারেনি। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা ভোট দিয়েছে। এই ইসির অধীনে নির্বাচনের কোনো গুরুত্ব বহন করে না, জাতি একটি সংকটের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে হবে।
ইসির আহ্বানে বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট বলছি— সরকারের পাতানো ফাঁদে আমরা পা দেব না। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। সরকার যদি পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বসতে চায়, তাহলে আমাদের দলীয় ফোরাম তখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, ভেবে দেখবে।’ আমরা এও ঘোষণা করেছি, বর্তমান যে নির্বাচন কমিশন রয়েছে, তাকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর নতুন কমিশন গঠন হবে। তারপর নির্বাচন। এ কমিশন যে সরকারের অনুগত— তা প্রমাণ হয়ে গেছে অনেক আগেই। ঢাকা-১৭ আসনে মানুষ ইসির প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপি এই ইসিকে বিশ্বাস করে সংলাপে যাবে না। আওয়ামী লীগ সরকার এবং কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে; তারপর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে।
এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনের আয়োজক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সংলাপ নিশ্চয়ই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে হতে পারে। সুতরাং নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যদি কোনো কথাবার্তা বলতে হয়, সেটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেই বলতে হবে। তারা (বিএনপি) নির্বাচন কমিশনের কাছে যেতে পারে, তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি আমাদের ডাকে, তবে আমরাও যাব।