- রাজউকের ‘ঢাকা আরবান রি-জেনারেশন’ প্রকল্প
- হাজারীবাগের ট্যানারি সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর হয়েছে
- ভূমি অধিগ্রহণে মৌজা মালিকরা তিনগুণ দাম পাবেন
২০২৪ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে
—আশরাফুল ইসলাম, নগর পরিকল্পনাবিদ, রাজউক
রাজধানীর হাজারীবাগ শিল্পাঞ্চলে পরিত্যক্ত এলাকায় ঢাকা আরবান রি-জেনারেশন নামে একটি প্রকল্প গড়ে তুলবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। এলাকাটি ৭০-একর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠবে। পুরো এলাকায় থাকবে গ্রিন ফিল্ড, আবাসিক ভবন, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, হাসপাতাল, ক্লিনিক, খেলার মাঠ, পার্ক, খোলা জায়গা, বিপণনকেন্দ্র ও চামড়ার ডিসপ্লে সেন্টারসহ বিভিন্ন সুবিধা। সেখানকার বসবাস করা প্রতিটি নাগরিক যেন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পান, তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে রাজউক। হাজারীবাগে যেখানে ট্যানারি কারখানা ছিল সেখানে গড়ে তোলা হবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লট।
গবেষণায় দেখা গেছে, হাজারীবাগ অঞ্চলের ট্যানারিগুলো স্থানান্তর হলেও ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত ট্যানারির টক্সিক মাটিতে বিদ্যমান থাকে। যদি সেসব স্থানে পরিকল্পনাহীনভাবে ভবন তোলা হয় তাহলে তার প্রভাব মানুষের ওপর পড়বে। এ জন্য রাজউক পরিকল্পিতভাবে প্রকল্পটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত মাটির যাচাই-বাছাই করে সেখানে পাবলিক স্পেসসহ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন করা হবে।
পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে হাজারীবাগের সব ধরনের ট্যানারি সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমে ট্যানারির প্লটে বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব সেবা সংস্থার লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে ট্যানারি মালিকদের সাভারে স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হয়। ট্যানারি অঞ্চল সাভারে চলে গেলেও এর ক্ষতিকর দূষণ এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন হাজারীবাগের নাগরিকরা। তাই হাজারীবাগের বাসিন্দাদের সব সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার উদ্যোগী হয়ে উন্নয়নে নজর দিয়েছে।
রাজউক সূত্রমতে, হাজারীবাগ ট্যানারি শিল্পাঞ্চল এলাকায় যাদের প্লট আছে রাজউক তাদের কাছ থেকে সরকারি আইন মেনে ভূমি অধিগ্রহণ করে সেই ভূমিতে পরিকল্পিত প্লট করে বিক্রি করতে চায়। সরকারি আইন অনুযায়ী, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমি মালিকরা মৌজা মূল্যের তিনগুণ দাম পাবেন। বিচ্ছিন্নভাবে এই এলাকায় ভবন তৈরি না করে এখানকার ট্যানারির টক্সিক মাটি পরিশোধন করে পরিকল্পিত এলাকা গড়ে তোলা হবে। ইচ্ছা করলে ট্যানারি মালিকরা প্রকল্পটি করতে পারে কিন্তু তারা রাজি হননি। এ জন্যই রাজউক এটি হাতে নিয়েছে। ধানমন্ডির মতো ভালো স্থানের পাশে একটি জায়গা পড়ে আছে। সেটিকে যদি ভালো পর্যবেক্ষণ করা যায় তাহলে পরিকল্পিত এলাকা তৈরি সম্ভব।
পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রাজউক ব্যবসাকেন্দ্রিক প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ পরিকল্পনা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। রাজউকের মূল কাজ উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু বিগত সময়গুলোতে রাজউকের কাজ এবং আগ্রহ সেদিকে ছিল না। তারা প্লট সম্পর্কিত প্রকল্পের দিকে আগ্রহ বেশি। হাজারীবাগের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। হাজারীবাগের এত বিশাল জায়গায় খোলা ময়দান বা পার্ক করতে পারত। যেটি ঢাকার ভারসাম্য ফেরাতে কাজ করত। কিন্তু তারা যে পরিকল্পনা নিয়েছে সেখানে আবাসিক, বাণিজ্যিক প্লট করবে, বহুতল ভবন করবে। তাতে ঢাকার ভার আরো বাড়বে। এটি ঢাকার জন্য আরো জটিল পরিস্থিতি ডেকে আনবে। রাজউকের ব্যবসাকেন্দ্রিক পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ঢাকা আরবান রিজেনারেশন প্রকল্পটি ৭০-একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হবে। হাজারীবাগের ট্যানারি এলাকায় রিজেনারেশন প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশের শহরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইড থাকে। এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইডগুলো যখন নগরায়ণে পরিণত হলে তার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নিতে হয়। হাজারীবাগের বেড়িবাঁধ ছিল শহরের শেষ সিমানা। কিন্তু নদীর ওই পাড়ে শহর গড়ে উঠায় এটি হাজারীবাগ এলাকা মধ্যে পড়ে গেছে। এখানের ট্যানারিগুলো স্থানান্তর করার ফলে তা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ট্যানারিতে উপযোগী করতে ক্ষতিকর টক্সিক নির্মূল করতে হবে। টক্সিক অন্য কেমিক্যালের মতো নয়, এগুলো দীর্ঘ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।
তিনি আরও বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত টক্সিকগুলো মাটিতে মিশে থাকে। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর ছিল এলাকাটি। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এটিকে কিছু দিন গ্রিন ফিল্ড হিসেবে রাখা হয় যাতে ক্ষতিকর টক্সিক চলে যায়। তাই রাজউক পরিকল্পনা করে কিভাবে এটিকে রিজেনারেশন করা যায়। তাই এখানে আবাসিক ভবন, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, শপিংমল, একটি হসপিটালসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এটি তৈরি করা হবে। সব প্রকার নাগরিক সুবিধা দিয়ে একটি কমিউনিটি এলাকা হবে। এখানের ১০ শতাংশ এলাকাজুড়ে থাকবে গ্রিন ফিল্ড। এর জন্য এখনো সমীক্ষা কার্যক্রম চলছে। আগামী ২০২৪ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’