- কফিন পরে আন্দোলনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী সাতজন হাসপাতালে
- অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা ঢাবির
- সমাধান খুঁজতে আগামীকাল উভয়পক্ষের বৈঠক
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন
—আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
সাবেক ভিসি, ঢাবি
ঢাবির মতোই সাত কলেজের সব নিয়মনীতি
—ড. আখতারুজ্জামান, উপাচার্য, ঢাবি
সাকিবুর রহিম এবং শাহরিয়ার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের একটি কোর্সের পরীক্ষায় তারা ২.৫০-এর নিচে পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত এই ফলকে ফেল আকারে ধরা হয়। সম্প্রতি তারা ওই কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষার সাথে তৃতীয় সেমিস্টার দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষাও দিচ্ছেন। তিন মাসের মধ্যে রেজাল্ট পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে রাজিব আহমেদ (ছদ্মনাম) ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি তৃতীয় বর্ষের একটি কোর্সে ২.৪৯ পেয়েছেন। এখন তাকে পুনরায় তৃতীয় বর্ষের আটটি বিষয় পুনরায় পরীক্ষা দিতে হবে। এ বিষয়টি তিনি যখন জেনেছেন ইতোমধ্যে তার চতুর্থ বর্ষের সাত মাস শেষ। এর ফলে তিনি এক বছর পিছিয়ে পড়েছেন। ঢাবি ও সাত কলেজের মধ্যে এই পার্থক্যের কারণে কয়েক দিন পরপরই আন্দোলন করছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা। গতকাল কাফনের কাপড় পরে আন্দোলনে নেমেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন সাত শিক্ষার্থী। বারবার আন্দোলনের পরও অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাবির শিক্ষার্থীদের পার্থক্যের বিষয়টি বুঝতে পারছেন না ঢাবি উপাচার্য। শিক্ষাবিদরা মনে করেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা প্রয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, সাত কলেজের কোনো শিক্ষার্থীর প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে সিজিপিএ ২, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় বর্ষে সিজিপিএ ২.২৫ এবং তৃতীয় থেকে চতুর্থ বর্ষে প্রমোশন পেতে ২.৫ পেতে হবে। তা না হলে ওই শিক্ষার্থীকে আবারও আগের বর্ষে থাকতে হবে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি কোর্সে ২.৫০ এর নিচে পেলে পরের সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হতে পারেন। তবে অধিকাংশ কোর্সে ২.৫০ এর নিচে পেলে তারা উত্তীর্ণ হতে পারেন না।
রাকিব আহমেদ নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের সংকট নিরসন না করতে পারলে আমি মনে করি ঢাকা কলেজকে অধিভুক্ত থেকে আলাদা করে দেয়া হোক। ঢাবি নিজেদের সামাল দিতে পারে না সাত কলেজও পারবে না। আমি যেহেতু ঢাকা কলেজের স্টুডেন্ট তাই ঢাকা কলেজকে অধিভুক্ত থেকে বাতিল করা হোক। ঢাকা কলেজ নিজস্বগতিতে এগিয়ে যাবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মনির হোসেন নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথাযথ সেবা পায় না, যথাসময়ে ফলাফল পায় না, সেখানে অধিভুক্ত কলেজগুলোর দায়িত্ব নিতে ব্যর্থতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বীকার করা উচিত।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আকতারুজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ইতোমধ্যে অনেক উন্নতি হয়েছে। দু-একটি ক্ষেত্রে বিলম্বে রেজাল্টের সমস্যা আছে। এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও আছে। ধারাবাহিকভাবে এটার উন্নতি হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন ও প্রমোশন পদ্ধতির মতোই সাত কলেজের পদ্ধতি। ঢাবির মতোই সাত কলেজের সব নিয়ম-নীতি। তবে সাত কলেজে সেটা মানা না হলে বা কোনো সমস্যা থাকলে কলেজের অধ্যক্ষরা বলুক। আমরা সেটা দেখব।
‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা প্রয়োজন’ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান মানে উন্নীত করার জন্যই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ঢাবির অধিভুক্ত করা হয়েছে।
আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, সব ক্ষেত্রেই ঢাবির মতোই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা রাখা প্রয়োজন। কারণ তারা একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ নেবে। তাদের সঙ্গে পার্থক্য না করাই ভালো, সেটা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা প্রয়োজন।
এদিকে গতকাল রাতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাবি কর্তৃপক্ষ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসার কথা জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ২০২২ সালের অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে পরীক্ষা স্থগিত করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরীর স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৩ আগস্ট তারিখের ১৫২৯/শা-২(ক)/প. নং মেমোর ক্রমধায় প্রকাশিত অধিভুক্ত সরকারি সাত (০৭) কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষ ২০২২ সালের পরীক্ষার সময়সূচি স্থগিত করা হলো। একইসঙ্গে পরীক্ষার সময়সূচি এবং ফরম পূরণের পরিবর্তন হওয়া তারিখ পরবর্তীতে জানানো হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।