মুশতাকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২৩, ১২:৩১ এএম
মুশতাকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি

রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বহিষ্কৃত দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে ‘গভর্নিং বডির নির্বাচন-২০২৩’ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। গত সোমবার দুপুরে খন্দকার মুশতাক আহমেদকে ‘গভর্নিং বডির নির্বাচন-২০২৩’ ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে সভাপতি বরাবর আবেদন করেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবকরা। 

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি মুঠোফোনে আমার সংবাদকে জানান, ‘গভর্নিং বডির কোনো সদস্য পদত্যগ করলে নিয়ম অনুযায়ী সেটা যাবে বোর্ড অফিসে। খন্দকার মুশতাক আহমেদকে এক্সেপ্ট করা বা তাকে বাদ দেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। কারণ এই ক্ষমতার অধিকারী হলো শিক্ষা বোর্ড। আমাদের কাছে যত আবেদন আসুক আমাদের কিছুই করার থাকে না। এগুলো আমরা বোর্ড অফিসে পাঠিয়ে দেই, সিদ্ধান্ত দেয় বোর্ড অফিস। আমরা তো বোর্ডের আন্ডারে। আজকে (২৮ আগস্ট) যে আবেদন অভিভাবকরা দিয়েছেন সেটা অবশ্যই বোর্ডে পাঠাব, বোর্ড অফিস থেকে গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি তাকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের কোনো রিটেন ডকুমেন্ট বা তাদের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেয়নি। তবে আমরা কোর্টের যে রায় তা বোর্ডে জমা দিয়েছি এবং বোর্ডের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি এই রায়ের প্রেক্ষিতে আমরা কী করতে পারি এবং কী করতে পারি না। বোর্ড যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। শিক্ষানীতিতে আমাদের সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার নেই।’

আবেদনপত্রে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভর্নিং বডির নির্বাচন-২০২৩ ভোটার তালিকা থেকে বহিষ্কৃত দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে স্থায়ী বাদ দেয়ার দাবি করা হয়েছে। কারণ হিসেবে অভিভাবকরা খন্দকার মুশতাক আহমেদকে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্নকারী উল্লেখ করেছেন, একইসঙ্গে তারা এও বলেছেন, তাকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি সর্বমহলে আবারও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এ সমালোচনা থেকে মুক্তি ও প্রতিষ্ঠানটিকে সুনামে ফেরাতে বহিষ্কৃত দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে স্থায়ী বাদ দেয়ার বিকল্প নেই। 

আবেদনপত্রে আরও বলা হয়েছে, গত ১৭ আগস্ট ‘বিতর্কের মুখে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডি’ শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খন্দকার মুশতাকের গভর্নিং বডির সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে। তবে গোলাম আশরাফ তালুকদারের সদস্য বাতিলের বিষয়ে এখনো কোনো প্রস্তাব আসেনি। আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, ২১ আগস্ট ‘আইডিয়াল স্কুলের সীমানায় যেতে পারবেন না মুশতাক’ শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্রীর বাবার দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদের জামিন বহাল রেখেছেন চেম্বার আদালত। তবে আদালত বলেছেন, মুশতাক গভর্নিং বডির কোনো কর্মকাণ্ডে বা মিটিংয়ে অংশ নিতে পারবেন না। তিনি স্কুলের সীমানায়ও যেতে পারবেন না। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম রোববার এ আদেশ দেন। 

আবেদনপত্রে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে খন্দকার মুশতাক আহমেদকে বহিষ্কার এবং স্কুলের সীমানায় প্রবেশ না করার বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে আদালত। এতদসত্ত্বেও তাকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা আদালতের নির্দেশনা অমান্য করার সামিল বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। তাই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা বন্ধে এবং কলেজের সুনাম রক্ষার্থে ভোটার তালিকা থেকে মুশতাককে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানাই। 

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে খন্দকার মুশতাক আহমেদ পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন মুশতাক। এর আগে গত ১ আগস্ট কলেজছাত্রীকে প্রলোভন ও ধর্ষণের অভিযোগে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়। মামলার অন্য আসামি হলেন কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী। কলেজছাত্রীর বাবা মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।