- হবে হাতিরঝিলের চেয়েও নান্দনিক
- প্রাথমিক পর্যায়ে নিজস্ব অর্থায়নে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়
- খননকাজ সম্পন্ন করতে বরাদ্দ থেকে ২৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়
- চ্যানেলটি কালুনগর স্লুইসগেট থেকে মুসলিমবাগ পর্যন্ত ৭ কিমি জুড়ে বিস্তৃত
- হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ বছর
আদি বুড়িগঙ্গার প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলি অক্সিজেন থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র দশমিক ৫ মিলি
—ড. কামরুজ্জামান, পরিবেশবিদ
বুড়িগঙ্গাকে নান্দনিকভাবে সাজাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধার এবং আকর্ষণীয় করতে কাজ করছে ডিএসসিসি। এই চ্যানেলকে হাতিরঝিলের চাইতেও বেশি নান্দনিক করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। আদি বুড়িগঙ্গাকে নতুনভাবে সাজাতে প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ের খনন কাজ সম্পন্ন করতে বরাদ্দ থেকে প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়।
আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের অববাহিকা পূর্ণরূপেই দখল হয়ে যায় বিভিন্ন মহলের হাতে। খননের পর নদী প্রবাহের অববাহিকা আবারও ফিরে এসেছে। সিটি কর্পোরেশন নতুন করে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছে। তাদের বাজেটের নিজস্ব অর্থায়নে আরও প্রায় ৩৫ কোটি টাকা অর্থ সংস্থান রেখেছে। তাছাড়া নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণের কাজও চলমান রয়েছে। বেড়িবাঁধের পাশের ঢালের যেসব অংশ বিভিন্নভাবে বেদখল হয়ে গেছে তা দ্বিতীয় পর্যায়ের খনন কাজের মাধ্যমে পূর্ণরূপে দখলমুক্ত করা হবে। কাজটি সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। আদি বুড়িগঙ্গার চ্যানলটি কালুনগর স্লুইস গেট থেকে মুসলিমবাগ পর্যন্ত দীর্ঘ সাত কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। সার্বিক বিষয় ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে এক কিলোমিটার করে বা কিছু অংশ ধরে কাজ করা হবে। পরামর্শকদের উপযুক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে নকশা প্রণয়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি।
ডিএসসিসি সূত্র মতে, হাতিরঝিলের কাজ শেষ করতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছিল। হাতিরঝিল সব সময় বদ্ধ জলাশয় অবস্থায় থাকে। কিন্তু আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল উন্মুক্ত নদীর অববাহিকা। বুঝাই যাচ্ছে একটু ভিন্নতা রয়েছে। এটি যেহেতু নদীর অববাহিকা, সেহেতু এটিকে আরও সুন্দর, আরও বেশি নান্দনিক করে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম আগামী তিন বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসসিসি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদিও কাজটি (নির্ধারিত সময়ে শেষ করা) অত্যন্ত দুরূহ ও বিশাল একটি পদক্ষেপ তবুও এ সংক্রান্ত প্রকল্প প্রণয়ন করা, প্রকল্প থেকে অর্থসংস্থান পাওয়া, তারপর দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এসব কাজ দীর্ঘসূত্রতার জালে আটকে যাওয়ার ফলে কাজ সম্পন্ন হতে বেশি সময় লাগছে। এক্ষেত্রে যে সব কাজ সম্পন্ন করার সক্ষমতা সিটি কর্পোরেশনের রয়েছে, সে সব কার্যক্রম এগিয়ে নিতে তারা নিজস্ব অর্থায়নেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। হাতিরঝিলের মতো কাজ শেষ করতে যেন ১০ বছর না লাগে সে জন্য নেয়া হয়েছে নানা কর্মকৌশল।
গত বছর থেকেই আদি বুড়িগঙ্গার বর্জ্য অপসারণ, দখলদার উচ্ছেদ ও সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। তখন চ্যানেলের অবস্থা ছিল নাজুক, ছিল না নদীর অববাহিকাও। কষ্টসাধ্য হলেও কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল। বর্তমানে আগের তুলনায় অনেক বেশি পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। ফলে আগের চেয়ে নিরসন হয়েছে জলাবদ্ধতার। সুতরাং প্রাথমিক কাজটা দক্ষিণ সিটি সম্পন্ন করতে পেরেছে। যদিও তা নিয়ে অনেকে মন্তব্য করছেন। তারা শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে কাজটি সম্পন্ন করতে পারবে কিনা এমন সংশয়ও রয়েছে কারো কারো মধ্যে।
সিটি কর্পোরেশন বলছে, প্রকল্পের জন্য অপেক্ষা করলে এ কাজটা এতো দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না। দ্রুত কার্যক্রম শুরু না করলে, প্রকল্প পাস করে তা বাস্তবায়ন করতে হয়তো তিন বছর লেগে যেত। এরই মধ্যে তারা নিজস্ব উদ্যোগে কাজগুলো চালিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক ও প্রখ্যাত পরিবেশবিদ ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, যদি নদীর পরিবেশকে ফিরিয়ে আনতে চায় তাহলে সেটা অবশ্যই ভালো একটি কাজ। তবে নদী ফিরিয়ে আনার কর্মপদ্ধতিটা কি কোনো প্রকল্প নাকি পরিবেশ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক, সেটা হলো আসল বিষয়। এটা যদি শুধুই প্রকল্প হয় তাহলে নগরবাসী এটা থেকে তেমন কোনো লাভবান হবে না। যারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শুধু তাদের অ্যাসাইমেন্ট সম্পন্ন হবে। আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল ঢাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট। সেখানের পানি অধিকাংশ সময় কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত থাকে। এর পাশ দিয়ে হাঁটার মতো অবস্থা থাকে না। ঢাকার ভেতরে যতগুলো নদী রয়েছে তার মধ্যে আদি বুড়িগঙ্গা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দূষিত একটি নদী।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার আরও বলেন, আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের পানিতে যতটুকু অক্সিজেন থাকার দরকার তার লেশমাত্রও নেই। পানিতে প্রতি লিটারে ৫ মিলি অক্সিজেন থাকার কথা থাকলেও সেখানে আছে মাত্র দশমিক ৫ মিলি। নদীর দুই পাশে সব সময় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। তাছাড়া অধিকাংশ জায়গা দখল হয়ে আছে বিভিন্ন মহলের হাতে। হাইকোর্টের সিএস ম্যাপ (ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে যা মূলত ব্রিটিশ সরকার দ্বারা প্রস্তুতকৃত ম্যাপ) ধরে যদি চ্যানেলের সীমানা উদ্ধার করা হয় তাহলে সবার জন্য ভালো হবে।
সেক্ষেত্রে সাবধানতার সঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে করে নদীর জায়গা অন্য জনের নামে চলে না যায়। পানি চলাচলের জন্য যেসব কালভার্ট আছে নদীর সিএস সীমানার চারভাগের মাত্র একভাগের ভেতরে এগুলো দেয়া হয়েছে। ৭৫ শতাংশ সরকারি ও বিভিন্নভাবে নদীর অংশ বেদখলে পড়ে আছে। দখলের ফলে নদী খুব সরু হয়ে গেছে। তা উদ্ধার করা অত্যন্ত জরুরি।