ড্রাফটের পর যেমন হলো স্কোয়াড

আহমেদ হৃদয় প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩, ১১:৫৮ পিএম
ড্রাফটের পর যেমন হলো স্কোয়াড
  • সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে ৮০ লাখ টাকায় বরিশালে মুশফিক
  • দল পাননি সাব্বির মমিনুল, আশরাফুল
  • ড্রাফটে তোলা হয় ৪৪৩ বিদেশি ও ২০৩ দেশি ক্রিকেটারকে
  • তরুণ হূদয়কে দলে নিয়ে রোমাঞ্চিত নাফিসা কামাল

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের জানুয়ারিতেই মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দশম আসর। তবে এর আগে থেমে নেই বিপিএলের আনুষ্ঠানিকতা। প্লেয়ার্স ড্রাফট অবশ্য হয়ে গেছে বেশ আগেভাগেই। গতকাল রোববার রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু-তে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফট। 

প্রায় আড়াইঘণ্টা ধরে চলা এই প্লেয়ার্স ড্রাফটের মধ্য দিয়ে আগামী মৌসুমে বিপিএলের জন্য স্কোয়াড তৈরি করে নিয়েছে বিপিএল ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। ৪৪৩ জন বিদেশি আর ২০৩ স্থানীয় ক্রিকেটারকে ছয় ক্যাটাগরিতে তোলা হয় প্লেয়ার্স ড্রাফটে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির পারিশ্রমিক ৮০ লাখ টাকা। স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র মুশফিকুর রহিমই ছিলেন এই ক্যাটাগরিতে। তাকে দলে ভিড়িয়েছে ফরচুন বরিশাল। ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় আছে আর মাত্র দুই সপ্তাহেরও কম। এরই মধ্যে আবার নিউজিল্যান্ড সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত বাংলাদেশ। এত ব্যস্ততার মধ্যেই হয়ে গেলো বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফট। তবে ড্রাফটে দল পাননি মমিনুল ও সাব্বির রহমান। অলক কাপালি, আবু জায়েদ রাহি, মুনিম শাহরিয়ারদের নিতেও আগ্রহ দেখায়নি কোনো দল।

সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক গত আসরে ঢাকা ডমিনেটর্সের হয়ে খেলেছেন। সাব্বির রহমন ছিলেন খুলনা টাইগার্সে। ১৫ লাখ টাকার ‘ই’ ক্যাটাগরিতে সাব্বিরকে নিতে চায়নি কোনো দল। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে থাকা মুমিনুলের মূল্য ছিল ৩০ লাখ টাকা। মমিনুলকেও দলে নিতে আগ্রহ দেখায়নি কোনো দল। এছাড়া উল্লেখযোগ্য তারকাদের মধ্যে দল পাননি অলক কাপালি, আবু জায়েদ রাহি, এনামুল হক জুনিয়র, ফরহাদ রেজা, মেহেদী হাসান রানা, মুক্তার আলি, শামসুর রহমান শুভ, সোহাগ গাজীরা। তারা প্রত্যেকেই ছিলেন ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে। সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল ছিলেন ‘ই’ ক্যাটাগরিতে। তাকেও নেয়নি কোনো দল। এই ক্যাটাগরির মধ্যে আনিসুল ইসলাম ইমন, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, আল আমিন জুনিয়র, মেহেদী মারুফদের দলে নিতেও আগ্রহ দেখায়নি কোনো দল। 

এছাড়া চারজন ছিলেন ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, এই ক্যাটাগরির পারিশ্রমিক ৫০ লাখ। ৩০ লাখ টাকা মূল্যে ১৮ জনকে রাখা হয়েছিল ‘সি’ ক্যাটাগরিতে। ৩১ জন ক্রিকেটার ছিলেন ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ২০ লাখ মূল্যে। ৭৫ জনকে রাখা হয় ‘ই’ ক্যাটাগরিতে ১৫ লাখ টাকা মূল্যে। ‘এফ’ ক্যাটগারিতে ২৯ জন (১০ লাখ) এবং ‘জি’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয় ৪৫ জনকে (৫ লাখ)।

আগে থেকেই ফরচুন বরিশালে ছিলেন দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তামিম ইকবাল। ‘বি’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটার আফিফ হোসেন খেলবেন খুলনা টাইগার্সে। একই শ্রেণির ক্রিকেটার রনি তালুকদার খেলবেন রংপুর রাইডার্সের হয়ে। ইমরুল কায়েস থাকছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সেই। লম্বা সময় ধরেই তিনি এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটির অধিনায়ক ছিলেন।

নুরুল হাসান সোহান, শেখ মাহেদী হাসান, হাসান মাহমুদ, আজমাতউল্লাহ ওমরজাই, নিকলাস পুরান, সাকিব আল হাসান, বাবর আজম, এহসানউল্লাহ, মাথিশা পাথিরানা, ব্রেন্ডন কিং, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা আছেন রংপুর রাইডার্সে। এদের মধ্যে পুরোনোদের ধরে রেখে বাকিদের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করেছে ফ্রাঞ্জাইজিটি। ড্রাফট থেকে তারা দলে ভিড়িয়েছে রনি তালুকদার, শামীম হোসেন, রিপন মণ্ডল, হাসান মুরাদ, মিশেল রিপন, ইয়াসির মোহাম্মদ, আবু হায়দার, ফজলে রাব্বি ও  আশিকুজ্জামানকে।

লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমান, তানভীর ইসলাম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সুনীল নারাইন, তাওহিদ হূদয়, মঈন আলী, আন্দ্রে রাসেল, ইফতিখার আহমেদ, জামান খান, খুশদিল শাহ, জনসন চার্লস, নুর আহমেদ, নাসিম শাহ, রশিদ খান আছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে। ড্রাফট থেকে কুমিল্লা দলে ভিড়িয়েছে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, জাকের আলী, মাহিদুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন, রাকিম কর্নওয়াল, ম্যাথু ওয়াল্টার ফোর্ড, ইমরুল কায়েস, মুশফিক হাসান এবং এনামুল হককে।  

দুর্দান্ত ঢাকাতে আছেন তাসকিন আহমেদ, আরাফাত সানি, শরীফুল ইসলাম, মোসাদ্দেক হোসেন, চতুরঙ্গা ডি সিলভা, সায়েম আইয়ুব ও উসমান কাদির। ড্রাফট থেকে দুর্দান্ত ঢাকা দলে ভিড়িয়েছে সাইফ হাসান, ইফরান শুক্কুর, আলাউদ্দিন বাবু, মেহরব হোসেন, লাহিরু সামারাকুন, সাদিরা সামারাবিক্রমা, মোহাম্মদ নাঈম, সাব্বির হোসেন ও জসিমউদ্দিনকে।

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে রয়েছেন শুভাগত হোম, জিয়াউর রহমান, নিহাদউজ্জামান, শহীদুল ইসলাম, মোহাম্মদ হারিস, নাজিবউল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ হাসনাইন এবং স্টিভ এসকিনাজি। ড্রাফট থেকে তারা দলে ভিড়িয়েছে তানজিদ হাসান, আল আমিন হোসেন, সৈকত আলী, ইমরানুজ্জামান, কার্টিস ক্যাম্ফার, বিলাল খান, শাহাদাত হোসেন ও সালাউদ্দিন শাকিলকে।

অভিজ্ঞদের ওপরই ভরসা রেখেছে খুলনা টাইগার্স। দেশি-বিদেশি সিনিয়র খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গুছিয়েছে তারা। নাসুম আহমেদ, নাহিদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, এনামুল হক, এভিন লুইস, ফাহিম আশরাফ, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, শাই হোপ ও মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র আছেন খুলনা টাইগার্সে। আফিফ হোসেন, রুবেল হোসেন, পারভেজ হোসেন, হাবিবুর রহমান, কাসুন রাজিতা, দাসুন শানাকা, মুকিদুল ইসলাম, আকবর আলী এবং সুমন খানকে খুলনা টাইগার্স দলে ভিড়িয়েছে ড্রাফট থেকে। ফরচুন বরিশালেও আছেন বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। দেশি ক্রিকেটারদের পাশাপাশি পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা থেকে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের দলে ভিড়িয়েছে বরিশাল। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, খালেদ আহমেদ, ইব্রাহিম জাদরান, তামিম ইকবাল, শোয়েব মালিক, পল স্টার্লিং, ফখর জামান, মোহাম্মদ আমির, আব্বাস আফ্রিদি ও দুনিত ভেল্লালাগে আছেন দলে। সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে থাকা মুশফিকুর রহিমকে ড্রাফট থেকে দলে ভিড়িয়েছে বরিশাল। ড্রাফট থেকে বাকি খেলোয়াড়রা হলেন— রকিবুল হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, সৌম্য সরকার, ইয়ানিক ক্যারিয়াহ, কামরুল ইসলাম, প্রীতম কুমার, তাইজুল ইসলাম, প্রান্তিক নওরোজ ও দিনেশ চান্ডিমাল।

অধিনায়ক মাশরাফিকে ধরে রেখেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। জাকির হাসান, তানজিম হাসান, নাজমুল হোসেন, রায়ান বার্ল, বেন কাটিং ও হ্যারি টেক্টরও আছেন সিলেটে। মোহাম্মদ মিঠুন, রেজাউর রহমান, আরিফুল হক, ইয়াসির আলী, রিচার্ড এনগারাভা, দুশান হেমন্ত, নাজমুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, নাঈম ইসলাম, জাওয়াদ রোয়েন ও সালমান হোসেনকে ড্রাফট থেকে দলে ভিড়িয়েছে সিলেট।

এদিকে ড্রাফট শেষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামাল বলেন, দলটা আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো হয়েছে। যেহেতু ড্রাফটের আগে আমরা কিছুটা কাজ করতে পেরেছি বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে। আমাদের পছন্দ এবং তৃপ্তি অনুযায়ী আমরা অনেক খেলোয়াড় নিতে পেরেছি। বেশিরভাগই পুরোনো খেলোয়াড়, হাতেগোনা এক-দুইজন নতুন আসবে যেমন ইফতিখার, জামান খান। বাকি সবাই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অনেক পুরোনো খেলোয়াড়, তারা তাদের পরিবারে ফিরছে।

নতুন খেলোয়াড় যাদের নিয়ে দল করেছি যেমন, তাওহীদ হূদয়কে নিয়ে আমি খুবই রোমাঞ্চিত। আমাদের যেটা সংস্কৃতি বিদেশিরা অভিজ্ঞ হয় অনেক, আর স্থানীয়রা তরুণ, চ্যালেঞ্জিং, নতুন খেলোয়াড়। ওই কম্বিনেশনটা আমাদের জন্য কাজ করে।